কার্টুন: আরাফাত করিম
কার্টুন: আরাফাত করিম

থোতনা ফাডা মিজান বললেন, ‘ওই মামা না প্লিজ!’

এককালের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ডাকাতেরাও নাকি অনেকে জেন-জির পাল্লায় পড়ে হয়ে গেছেন ‘মিম’ কিংবা ‘ট্রল’-এর উপকরণ। একান্ত সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রবীণ ডাকাত সর্দার ‘থোতনা ফাডা’ মিজান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরীফ মজুমদার

কেমন আছেন?

হতাশ ভাই। চরম লেভেলের হতাশ।

তা তো বটেই। আপনার অবস্থা বুঝতে পারছি। তবু হতাশার কারণটা যদি একটু বলতেন।

ডাকাত হিসেবে কয় দিন আগপর্যন্তও আমাদের একটা ‘ক্লিন ইমেজ’ ছিল। নাম শুনলে মানুষের কাঁপাকাঁপি শুরু হতো। এই ‘কাঁপাকাঁপি’ ইমেজ আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। আজ জেন-জিদের কারণে সেই ইমেজে চুনকালি পড়েছে।

জেন-জিদের ব্যাপারে কীভাবে জানলেন?

কয় দিন আগেই জানতে হইসে বাটে পড়ে। ‘স্বৈরাচার পতনের রাতগুলোতে ডাকাতি’ নামের প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটা চিপাগলিতে খ্যাপ মারার প্ল্যান করতেছিলাম। হঠাৎই আমার দলের হাবলা মেম্বার কাল্লু দৌড়ায়ে এসে বলল, ‘ভাই অফ যান। গেঞ্জি পোলাপাইন ওই গল্লিতে ব্যাট-বল খেলতাছে।’ কাল্লুর মাথায় গন্ডগোল আছে। তার ওপর সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা জিনিস খায়। ভাবছি, অমন কিছু খেয়ে এসে ফাউল টক করতেছে। রাত আড়াইটায় কোন গল্লিতে কে ব্যাট-বল খেলবে বলেন। কাল্লুরে খালি জিজ্ঞেস করসিলাম, গেঞ্জি পোলাপাইন মানে কী? কাল্লু বলল, ‘ওই যে ভাই, গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পইরা থাকে যে, অরা।’ আমি ‘খাড়ার উপ্রে’ ওরে দুইটা চটকানা দিয়ে বললাম, ‘হাফপ্যান্ট পরা পোলাপাইনরে এত ভয় পাস!’ তারপরের ঘটনা আর কী বলব, গিয়াই খাইছি কট। আমারে কি না ‘এই মন তোমাকে দিলাম...’ গানের তালে তালে নাচাইল ভাই! কী নির্মম! নেটমেট ঘাঁইটা পরে জানলাম, এরাই জেন-জি।

আপনার ‘ক্লিন ইমেজ’ তো তাহলে আসলেই শঙ্কার মুখে।

আর কইয়েন না ভাই। আমার সুদীর্ঘ ডাকাত জীবনের এক্সপেরিয়েন্স, টাইমিং, সব ওলটপালট হয়ে গেছে। ওদের জন্য আমাদের এখন দারুণ আইডেনটিটি ক্রাইসিস। প্রফেশনটাই হুমকির মুখে। আমাদের পিক আওয়ারই রাত। সেই সময়ে জেন-জিরা পাড়ায় পাড়ায় ক্রিকেট-ফুটবল-কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলে। ডিজে পার্টি করে, বিরিয়ানি-খিচুড়ি রান্না করে। শুনলাম, ডিপিএলও (ডাকাত প্রিমিয়ার লিগ) চালু করতেছে। এমনিতেই এদের যন্ত্রণায় ডাকাতি করতে পারি না। তার ওপর ফেসবুকে ঢুকে যে একটু রিলটিল দেখব, সেই জো-ও নাই। এরা আমাদের নিয়ে ট্রল করে, উল্টাপাল্টা মিম বানায়। ফেসবুকে ঢুকলেই খালি ডাকাতদের নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তির ভিডিও! ‘ডাকাতস আর নট সেফ ইন ঢাকা’, ‘অল আইজ অন ডাকাতস’, ‘প্লিজ সেভ ডাকাতস’, এমন সব অপমানজনক পোস্ট। এসব দেখে মনে হয়, মানুষের বাড়িতে ডাকাতি না করে ভোট ডাকাতি করে নেতা হলেও পারতাম।

কিন্তু ভোট ডাকাতি করে যারা নেতা হয়েছিল, তারা তো সব পলাতক।

রাবিশ কথা বলবেন না। আমাদের কী দিন যাচ্ছে, আমরাই জানি। আমি একজন অতি সাধারণ, পেশাদার, প্রবীণ ডাকাত। বাপ-দাদার কাছ থেকে বংশপরম্পরায় ডাকাতির প্রফেশনে আসছি। ডাকাতি ছাড়া আর কিছু পারি না ভালো। ডাকাত সমাজের এই চরম দুঃসময়ে আজ ভয়াবহ ইমেজ সংকটে পড়ে এই কথাগুলো না বলে পারছি না।

জেন-জিদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?

জেন-ডির (ডাকু জেনারেশন) পক্ষ থেকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের গণপিটুনি দিন, পুলিশে দিন। কিন্তু মজা নেবেন না প্লিজ। আমরা মিম ম্যাটেরিয়াল নই। আমরাও তো কিছু রেসপেক্ট ডিজার্ভ করি। তাই আমাদের এমন হাসির পাত্র বানাবেন না। আপনাদের ভাষায়ই বলি, ‘ওই মামা না প্লিজ!’