মাইক্রোসফট যেদিন ভিডিও গেমের জগতেও চলে এল

মাইক্রোসফটের প্রথম ভিডিও গেম কনসোল সিস্টেম ‘এক্সবক্স’
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

কম্পিউটারে গেম খেলার ধারণাটি প্রায় কম্পিউটারের মতোই পুরোনো। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে যেমন ভিডিও গেম খেলার ধরন পাল্টে গেছে, তেমনি ভিডিও গেমে যুক্ত হয়েছে অনেক আকর্ষণীয় ফিচার। ভিডিও গেমের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি ক্ষতিকর হলেও তা মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মনকে পারিপার্শ্বিক জগতের বাইরে ভিন্ন এক কল্পনার জগতে নিয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর তাদের প্রথম ভিডিও গেম কনসোল সিস্টেম ‘এক্সবক্স’ বাজারে আনে। ভিডিও গেমসের জগতে এটি ছিল মাইক্রোসফটের প্রথম প্রবেশ। গেমিংয়ের জগতে মাইক্রোসফটের প্রবেশ গ্রাহকদের বিনোদনের ধরনটাই পাল্টে দেয়। ‘এক্সবক্স’ বাজারে আনার মধ্য দিয়ে মাইক্রোসফট সনি করপোরেশনের ‘প্লে স্টেশন’ এবং নিন্টেন্ডো কোম্পানির ‘গেমস কিউব’-এর সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়।

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী বিল গেটস ১৯৯৯ সালে নিজস্ব কনসোল গেমিং সিস্টেম তৈরি করার পরিকল্পনা করেন। সে সময় গেমিংয়ের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছিল সনি ও নিন্টেন্ডো। বিল গেটস আশঙ্কা করেন, সনির ‘প্লে স্টেশন’ মাইক্রোসফটের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ, সনি তত দিনে ‘প্লে স্টেশন’কে একটা পরিপূর্ণ বিনোদন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলছিল, যা শুধু গেমিংয়ের জন্য নয়, বরং অডিও, ভিডিও, সংগীত এবং অন্যান্য মিডিয়া চালানোর জন্য ব্যবহার করা যায়। বিল গেটস ‘এক্সবক্স’ তৈরির মাধ্যমে মাইক্রোসফটের পণ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনেন এবং বিকাশমান ভিডিও গেমিংয়ের বাজার ধরে ফেলেন।

এক্সবক্স ৩৬০

২০০২ সালে বাজারে আসে এক্সবক্সের অনলাইন গেমিং নেটওয়ার্ক ‘এক্সবক্স লাইভ’। এর মাধ্যমে খেলোয়াড়েরা ইন্টারনেটে এক–অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করার সুযোগ পায়। ‘এক্সবক্স লাইভ’ ছিল এক্সবক্সের অন্যতম সেরা সাফল্য। অনলাইন গেমিংয়ের জগতে এটা নতুন যুগের সূচনা করে। ২০১০ সালে এর গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

এক্সবক্স ওয়ান

২০০৫ সালে বাজারে আসে ‘এক্সবক্স ৩৬০’। এটাও ভিডিও গেমের বাজারে বিপ্লব ঘটায়। তবে ‘এক্সবক্স ৩৬০’ উচ্চতর প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকলেও অনেকের মন পড়ে থাকে ওই ‘এক্সবক্স’ এবং ‘এক্সবক্স লাইভ’–এ। হার্ডওয়্যার পরিবর্তনের ঝামেলা ছাড়াও ‘এক্সবক্স ৩৬০’–এর আরেকটা সমস্যা ছিল সফটওয়্যার পাইরেসি হওয়া। সফটওয়্যারের নিরাপত্তাব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলায় ২০০৯ সালে মাইক্রোসফট তাদের নেটওয়ার্ক থেকে ১০ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। নিন্টেন্ডোর ‘উই’ এবং সনির ‘প্লে স্টেশন’-এর সঙ্গে প্রবল প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ায় ‘এক্সবক্স ৩৬০’-এর দাম ২৫ শতাংশ কমানো হয়। ফলে ২০১০ সাল নাগাদ ‘এক্সবক্স ৩৬০’ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত গেম কনসোল হিসেবে বাজার দখল করে।

এক্সবক্স সিরিজ এক্স

২০১৩ সালে মাইক্রোসফট ‘এক্সবক্স ওয়ান’ উন্মোচন করে। এটা ছিল ‘এক্সবক্স ৩৬০’–এর চেয়ে শক্তিশালী এবং উন্নত সিস্টেম। ‘এক্সবক্স ৩৬০’ সিস্টেমে থাকা ত্রুটিগুলো সমাধান করে এটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয়।

সবশেষ ২০২০ সালে বাজারে আসে চতুর্থ প্রজন্মের কনসোল গেমিং সিস্টেম ‘এক্সবক্স সিরিজ এক্স’ এবং ‘এক্সবক্স সিরিজ এস’। ‘এক্সবক্স সিরিজ এক্স/এস’ তৈরিতে মনোনিবেশ করতে মাইক্রোসফট ‘এক্সবক্স ওয়ান’-এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। নতুন এই গেমিং সিস্টেমটি ‘এক্সবক্স ওয়ান’-এর চেয়ে চার গুণ বেশি শক্তিশালী। সনির ‘প্লে স্টেশন ফাইভ’–এর মতো ‘এক্সবক্স সিরিজ এক্স/এস’কে ‘নবম প্রজন্মের ভিডিও গেম সিস্টেম’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।