রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন গোপাল ভাঁড়। তিনি মূলত রাজাকে হাসানোর কাজ করতেন। হাস্যরসে মজিয়ে রাখতেন সবাইকে। গোপাল ভাঁড়ের মৃত্যুর পর কোনো দেশের মন্ত্রিসভার আর কেউ জনতাকে হাসিখুশি রাখার মতো ভালো কাজ করে যাননি। অনেক অনেক বছর পর এক মন্ত্রীর আবির্ভাব হয় বঙ্গদেশে। তিনি রাজনৈতিক বক্তব্যকে এমন পর্যায়ে নিয়েছিলেন, যেটার জন্য প্রতিদিন জনতা অপেক্ষা করত।
আদর করে জনতা তাকে নানা নামে ডাকত। তিনি যেমন বক্তৃতা দিয়ে মানুষের হাসির খোরাক জোগাতেন, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শত শত ছবি দিয়ে আলোচনায় ছিলেন। তার ছবির ভঙ্গিমা দেখে জনতাও তাকে অনুকরণ করত।
এখন তিনি নেই। কোথা থেকে এলেন আর কোথায় চলে গেলেন, এটা মেলাতে পারছে না তার ভক্তকুল। মাস হতে চলল, ভক্তরা তাকে দেখতে পাচ্ছে না। কানে আসছে না তার অমর বক্তৃতা। অনেকেই তাকে খুঁজছে খেলার জন্য। তিনি খেলার ডাক দিয়ে এখন লুকোচুরি খেলছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা প্রস্তুত। মাঠও প্রস্তুত। কিন্তু নেই খেলা আহ্বান করা সেই খেলোয়াড়।
নেতা নেই তো কী হয়েছে! তাকে নানাভাবে স্মরণ করছেন বঙ্গদেশের শিক্ষার্থীরা। শহরের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে তার ছবি, লেখা হচ্ছে তার অমর বাণী। দেয়ালে দেয়ালে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, ‘শি হ্যাজ মেড আস…’
মাসুদরা ভালো হয়ে গেল, কিন্তু তিনি চলে গেলেন অন্তরালে। মাসুদদের ভালো করতে কত কী–ই না বলেছিলেন তিনি। কী দারুণ সুরেলা কণ্ঠেই না বলেছিলেন, ‘তুমি কি কখনো ভালো হবে না মাসুদ?’ সেই মাসুদরা আজ পথে এসেছে। কিন্তু পথপ্রদর্শকই পথ হারিয়েছেন। এখন প্রশ্ন, পথপ্রদর্শক কি কখনো ভালো হবেন?
ধরে নিন, তিনি অন্তরীণ থেকে সবার উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে বলছেন, কেমন আছেন আপনারা? মুরব্বিরা কেমন আছেন?
যেখানেই তিনি থাকুন না কেন, তার অস্তিত্ব আপনারা ঠিকই টের পাবেন। কারণ, তিনি বা তারা করোনার চেয়ে শক্তিশালী।
সাংবাদিকদের জন্য কেউ এখন আর অপেক্ষা করে থাকে না। ‘কার জন্য অপেক্ষা করছেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি মিষ্টি করে বলতেন, ‘আপনার জন্য।’ মাঝেমধ্যে তিনি অবশ্য অভিমান করে গোঁ ধরে থাকতেন। হাত নেড়ে বলতেন, ‘একটা শব্দও বলব না।’ সরি বলে তার মান ভাঙানোর উপায়ও ছিল না। যদি আবার ফট করে বলে বসেন, ‘সরি বললেই কি সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়?’
আজ কত দিন হয়ে গেল বঙ্গদেশে হাস্যরস নেই। জনতা একরকম আনন্দহীনতায় ভুগছে। আবার কবে আড়াল থেকে উঁকি দেবেন তিনি; যেভাবে তার পকেট থেকে উঁকি দিয়ে থাকত লাল–টুকটুকে রুমাল!