আইফোন আর ইলিশ মাছের মধ্যে পার্থক্য কী, বলুন তো? বাজারে আপনি সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন পাবেন, কিন্তু সেকেন্ড হ্যান্ড ইলিশ মাছ কোথাও পাবেন না। অতএব কম দামে ইলিশ কেনার আশার গুড়ে বালি। ইলিশ কিনতে না পারলেও ইলিশের তরকারি কিন্তু রেঁধে খেতে পারেন। কীভাবে? উপায় বাতলে দিচ্ছেন বিশিষ্ট রন্ধনবিদ ফাতেমা আবেদীন
টুকটাক ভাত বেচে খাই বলে লোকে আমার সঙ্গে দেখা হলেই রেসিপি জিজ্ঞাসা করেন। আলুর দমে আলু আগে দিতে হয়, না পটোল। লাউ শাক সবুজ রাখতে একটুখানি ফুড কালার গুলিয়ে দিই কি না—এসব প্রশ্ন মামুলি।
অনেকে ঘুম থেকে উঠেই খোঁজ নেন—আজকে মুরগি কত করে কিনলে, বাজারের অবস্থা জানাও। বাজারের অবস্থা জানানোর আগে প্রশ্নকর্তার হার্টের অবস্থাটা জেনে নেওয়া ভালো। শুনেছি ইলিশের দাম শুনে অনেকেই নাকি বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ছেন। চাষ হয় না, ফিশ ফিড লাগে না, লাখ টাকার ঘের দেওয়া লাগে না, এমন মাছের কেজি নাকি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা! কেউ কেউ বলেন, ‘আরে বোকা, ইলিশ হচ্ছে একটা ব্র্যান্ড। মাছের রাজা বলে কথা। তুমি বাজারে গিয়ে নন–ব্র্যান্ডেড পাঙাশ, কই, লইট্টা কেনো, মানা করেছে কে? ব্র্যান্ডের মাছ কিনতে হলে একটু বেশিই দিতে হবে।’
গরিবের মন ভাই। পকেটে লইট্টার সামর্থ্য নিয়েও মনটা শুধু ইলিশ ইলিশ করে। তাই ইলিশ ছাড়াই ইলিশ মাছ রান্নার দুটি রেসিপি জানিয়ে দিই আজ।
উপকরণ: আলু/কলা/মিষ্টিকুমড়া—বেছে নিতে পারেন ইচ্ছেমতো। তবে বোঝানোর সুবিধার্থে আমরা বেছে নিচ্ছি আলু। সঙ্গে লবণ, চিনি, তেল, মসলা—এসবও পছন্দমতো বা বুদ্ধিমতো দিলেই হবে। অত চামচের হিসাব দিতে পারব না ভাই।
প্রণালি: প্রথমে ভালো করে আলুগুলো সেদ্ধ করে নিন। এরপর ভর্তা করে মসলা মাখান। ভর্তাটাকে ইলিশের আকার দিন। আপনি যদি ইলিশের আকার দিতে না পারেন, তাহলে বাড়ির ছোট শিশুদের সহায়তা নিতে পারেন। আস্ত ইলিশের রোস্ট খেতে চাইলে আলুভর্তা দিয়ে আস্ত ইলিশের ভাস্কর্য বানান। এরপর তাওয়ায় এক গামলা তেল দিয়ে আস্ত ইলিশ-ভাস্কর্য ভেজে নিন। টুকরা করা ভাস্কর্যও বানাতে পারেন। এরপর দুটি শুকনা মরিচ ভেজে পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে খেয়ে নিন।
বিশেষ পরামর্শ: সম্ভব হলে মাছ বিক্রেতার হাতে-পায়ে ধরে খানিকটা ‘ইলিশ ধোয়া পানি’ জোগাড় করে আনতে পারেন। আলুগুলো যদি এই পানি দিয়ে ধুয়ে নেন, তাহলে হয়তো খানিকটা ফ্লেভারও পেয়ে যাবেন। অবশ্য মাছ ধোয়া পানিও বিনা মূল্যে পাবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা নাই।
এই বস্তু রান্নার রেসিপি না জানলে ‘বিদ্যা বোঝাই বাবু মশাই’–এর মতো আপনারও জীবনটা ষোলো আনাই বৃথা। এই ডিজিটাল যুগে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হলেও রেসিপিটা জেনে রাখা চাই।
উপকরণ:
১. উন্নত মানের ওয়াকম (ডিজিটাল আঁকিবুঁকি করার যন্ত্র)—১টি (নাম ওয়াকম বলে যে জিনিসটার দামও কম, এমনটা ভাববেন না। তাই ওয়াকম না কিনে কারও কাছ থেকে ধার করতে পারেন।)
২. থ্রিডি প্রিন্টার—১টি (এতক্ষণ যেহেতু লেখাটা পড়েছেন, তাই ধরেই নিচ্ছি থ্রিডি প্রিন্টার কেনার মুরদও আপনার নেই। আস ব্রো, আস! এটিও ধার করে নিন।)
প্রণালি: প্রথমেই ওয়াকমটি ভালো করে ধুয়েমুছে নিয়ে আঁকতে বসুন। তারপর চট করে একটা ইলিশ এঁকে ফেলুন। পদ্মার ইলিশ আঁকবেন, না মেঘনার; ডিমসহ ইলিশ আঁকবেন, না ডিম ছাড়া, সেটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। নিজে ইলিশ আঁকতে না পারলে এ ক্ষেত্রেও বাড়ির শিশুদের সহায়তা নিতে পারেন। ঠিকঠাক ইলিশ আঁকা শেষে রং করে ফেলুন। শর্ষে ইলিশ খেতে চাইলে হলুদ রং; সঙ্গে একটু মেটে বাদামি, কাঁচা মরিচের সবুজ রং—এগুলো নির্বাচন করে রন্ধনপ্রণালি সম্পন্ন করুন। সব শেষে ওয়াকমের ছবিগুলো থ্রিডি প্রিন্টারে দিয়ে প্রিন্ট করে নিন।
বিশেষ সতর্কতা: একটু ভালো মানের কাগজে প্রিন্ট করলে ভালো স্বাদ পাবেন। কাগজ নিয়ে ধানাইপানাই না করার অনুরোধ রইল। হজমের দিকটা মাথায় রাখতে হবে তো, নাকি?