‘বিন্দুবিসর্গ’ বাগ্ধারার অর্থ একটু, কিছুমাত্র, অণুমাত্র। অর্থাৎ কোনো কিছুর সামান্যতম আভাস বা ইঙ্গিতকে বলে বিন্দুবিসর্গ। বিন্দু বলতে বোঝানো হয় অনুস্বার (ং)। একসময় লিপি যখন হাতে লেখা হতো, তখন অনুস্বার লেখার জন্য কেবল বিন্দু বা ফোঁটা চিহ্ন ব্যবহার করার চল ছিল। বিন্দুর নিচে রেখার মতো কোনো টানা দাগ ছিল না। এই বিন্দু বা অনুস্বারের পরের বর্ণ বিসর্গ (ঃ)। দুইয়ে মিলে হয়েছে বিন্দুবিসর্গ। সংস্কৃত ভাষার অনেক শব্দের শেষে বিন্দু ও বিসর্গ আছে। এই ব্যাপারটিও যখন কারও অজানা থাকে, তখন সাধারণভাবে বলা যায়, সে বিন্দুবিসর্গও জানে না।
‘বান’ বা ‘বাইন’ শব্দটি এসেছে ‘বয়ন’ থেকে। নৌকার নিচের দুই তক্তার সন্ধি বা জোড়ার মুখকে বলে বান বা বাইন। বাইন শক্ত না হলে নৌকার তক্তার জোড়া দিয়ে পানি ঢোকে। বান বিচ্ছিন্ন হলে নৌকা ডুবে যায়। অর্থাৎ ‘বানচাল’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ—নৌকার জোড়া বা তক্তা ফাঁক হয়ে যাওয়া। আর তাই কোনো পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য পণ্ড করে দেওয়াকেও আমরা বলি বানচাল করা। সব মিলিয়ে ‘বানচাল’ করা বাগ্ধারাটির অর্থ দাঁড়ায় ভন্ডুল করা, ভেস্তে যাওয়া, ফাঁসিয়ে দেওয়া।
কারও মুখ থেকে যখন একটানা কথা বের হতে থাকে, তখন বলা হয়, মুখ দিয়ে কথার তুবড়ি ছুটছে! ‘তুবড়ি’ শব্দটি হিন্দিতে তুমড়ি। এটি একধরনের আতশবাজি। মাটির খোলে বারুদ পুরে তুবড়ি বানানো হয়। দেখতে হয় অনেকটা পেটমোটা পেঁয়াজের মতো। তারপর এর চিকন মাথার দিকে আগুন দিলেই চারদিকে বারুদের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত আলো ছড়িয়ে তুবড়ি জ্বলতে থাকে। তাই কারও মুখ থেকে তুবড়ির মতো অনর্গল কথা ছুটতে থাকলে এই বাগ্ধারা ব্যবহার করা হয়।
তারিক মনজুর: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়