বাংলা ভাষায় যে বাগ্ধারাগুলো আছে, সেগুলো এল কোথা থেকে?
‘হাঁপ’ ও ‘ডুব’—এ দুটি শব্দের সঙ্গে উ–প্রত্যয় যোগ করে হয়েছে হাবুডুবু। এই শব্দের মধ্যে আছে ‘হাঁপ’ অর্থাৎ শ্বাসের কষ্ট এবং ‘ডুব’ অর্থাৎ ডুবে যাওয়ার কষ্ট। প্রতিদিনের অনেক সমস্যায় আমাদের হিমশিম খেতে হয়। একবার মনে হয়, সমস্যা থেকে ওঠা সম্ভব হয়েছে, একবার মনে হয়, সমস্যার মধ্যেই ডুবে আছি। এ রকম ভাসা আর ডোবার সঙ্গে মিল থাকায় কোনো কাজে কূলকিনারা না পেলে বলা হয় হাবুডুবু খাওয়া।
হেস্তনেস্ত করা মানে ভালো বা মন্দ যেকোনো ধরনের নিষ্পত্তি করা। এটাই তখনকার মতো ওই কাজের শেষ সমাধান বা চরম ফয়সালা। ‘হেস্তনেস্ত’ শব্দটি এসেছে ফারসি ‘হস্ত’ ও ‘নিস্ত’ থেকে। এখানে, হস্ত বা হেস্ত শব্দের অর্থ হওয়া, আর নিস্ত বা নেস্ত শব্দের অর্থ না–হওয়া। দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাজে হওয়া না–হওয়ার দ্বিধা থাকলে চূড়ান্ত সমাধান চাওয়া হয়। হয় এটা, নয় ওটা—এ রকম বোঝাতেও হেস্তনেস্ত শব্দের ব্যবহার আছে।
হনন করা যায় বা মেরে ফেলা যায় এমন জন্তুকে বলা হয় ‘হন্য’। শিকারি কোনো প্রাণী পেছনে ধাওয়া করলে ওই প্রাণী জীবন বাজি রেখে ছুটতে থাকে। ওই সময় শিকারের কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। একইভাবে কোনো মানুষ যখন ভালো–মন্দ জ্ঞান হারিয়ে কোনো কিছু খোঁজে, তখন তাকে বলা হয় হন্যে হয়ে খোঁজা। অন্যভাবে বলা যায়, হন্যে হয়ে খোঁজা মানে কিছু করা বা পাওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে চেষ্টা করা।
তারিক মনজুর: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়