রান্না করা খাবার যেভাবে আধুনিক মানুষের বিকাশে অবদান রাখল

অন্য প্রাণীরা কাঁচা মাছ-মাংস, ঘাস, লতা-পাতা খেয়ে পুষ্টি ও শক্তি জোগাতে পারে, মানুষ কেন রান্নার ঝামেলায় গেল?
 ছবি: আনিস মাহমুদ

প্রাণিজগতে একমাত্র মানুষ ছাড়া আর কেউ খাবার রান্না করে খায় না। এর কারণ কী? অন্যরা যদি কাঁচা মাছ-মাংস, ঘাস, লতা-পাতা খেয়ে পুষ্টি ও শক্তি জোগাতে পারে, মানুষ কেন রান্নার ঝামেলায় গেল? সাধারণভাবে বলা যায়, রান্না করা খাবারের অনেক গুণ। খাবারগুলো নরম হয়ে যায়, সহজে খাওয়া যায়, সহজপাচ্য, খাওয়ার সময় বাঁচে প্রভৃতি। রান্না করা খাবার যেহেতু নরম, তাই দাঁতের ওপর চাপ কম পড়ে। এতে চোয়াল ও সেই সঙ্গে মুখের আকার ছোট ও সুন্দর হয়। মুখমণ্ডল ছোট হয়ে আসায় মাথার বাকি অংশে মস্তিষ্কের জন্য বেশি জায়গা পাওয়া যায়, যা মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটায় এবং মানুষ সত্যিকার অর্থে মানুষ হয়ে ওঠে। রান্না করা খাবার সেদিক থেকে মানুষকে সুবিধা দিয়েছে।

যখন রান্নার চল ছিল না, তখন প্রাগৈতিহাসিক মানুষ সারা দিন মুখে খাবার নিয়ে দাঁত দিয়ে কামড়াত। ফলে তাদের চোয়াল ছিল বড়। আর সে জন্য মাথায় মস্তিষ্কের জন্য জায়গা ছিল কম। ফলে বুদ্ধিও কম। তাই বলা যায়, আধুনিক মানুষের বিকাশে রান্না করা খাবারের অবদান আছে। কিন্তু সেটাই কি একমাত্র কারণ? না, তা নয়।

আধুনিক মানুষের বিকাশে রান্না করা খাবারের অবদান আছে

কোনো খাদ্যে তাপ দিলে শর্করা ও অ্যামিনো এসিডের জটিল অণু ভেঙে নতুন নতুন আণবিক সম্মিলনের ফলে মধুর সুগন্ধি ও স্বাদ তৈরি হয়। ৩২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে চিনি গলে যায়, আর ৩৩৫ ডিগ্রিতে বাদামি রং ধারণ করে সুগন্ধি ছড়াতে শুরু করে। তাপে এ ধরনের পরিবর্তনকে বলে ‘পিঙ্গলিকরণ বিক্রিয়া’ (ব্রাউনিং রিঅ্যাকশন)।

শর্করার কার্বন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন বাতাসের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে শত শত যৌগ তৈরি করে, যা বিভিন্ন গন্ধ ও স্বাদের খাদ্য হিসেবে আমাদের কাছে সমাদৃত। খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে কাঁচা মাংস, গম বা চাল প্রভৃতিতে মাত্র কয়েকটি সুস্বাদু উপাদান রয়েছে, কিন্তু রান্না করা মাংসে থাকে অন্তত ৬০০ ধরনের সুগন্ধি উপাদান।

মাংসে থাকে অন্তত ৬০০ ধরনের সুগন্ধি উপাদান

এই স্বাদই মানুষকে আকর্ষণ করেছে। শুধু কাঁচা ফলে আকর্ষণীয় স্বাদ ও গন্ধ থাকে। আদিম মানুষ যখন দেখেছে, আগুনে রান্না করা খাবার স্বাদে-গন্ধে ফলের মতোই আকর্ষণীয়, সম্ভবত তখনই সে তার প্রতি আগ্রহী হয়েছে।