বাজ কি শুধু ওপর থেকেই পড়ে

অসম্ভব মনে হলেও বজ্রপাতের ব্যাপারটা দ্বিমুখী
উইকিপিডিয়া

বর্ষা ও গ্রীষ্মে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকায়। বাজ পড়ে। বিদ্যুৎ চমকানো ও প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ার ব্যাপারটি খুব জটিল। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, আকাশ থেকে বাজ (বিদ্যুৎপ্রবাহ) নিচে পড়ে। এটা সত্য, কিন্তু পুরো ঘটনার একটি দিক মাত্র। বাজ শুধু নিচে পড়ে না, ওপরের দিকেও ওঠে। অসম্ভব মনে হলেও বজ্রপাতের ব্যাপারটা দ্বিমুখী।

মেঘের নিচের দিকে ঋণাত্মক ও ওপরের দিকে ধনাত্মক বিদ্যুৎ চার্জের সমাবেশ

বজ্রপাত তখনই ঘটে, যখন মেঘের নিচের দিকে প্রচুর ঋণাত্মক বিদ্যুৎ চার্জ ও তার বিপরীতে মাটিতে ধনাত্মক বিদ্যুৎ চার্জ জমা হয়। মেঘের ভেতরের পানি ও বরফকণার ঘর্ষণ এবং অন্যান্য কারণে মেঘের নিচের দিকে ঋণাত্মক ও ওপরের দিকে ধনাত্মক বিদ্যুৎ চার্জের সমাবেশ ঘটে। দুই বিপরীতধর্মী চার্জের পারস্পরিক আকর্ষণে মেঘের দুই পিঠের মধ্যে একটি বিদ্যুৎক্ষেত্র তৈরি হয়। সৃষ্ট বিদ্যুৎক্ষেত্র বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠলে মেঘের এপিঠ-ওপিঠের মধ্যে বিদ্যুৎপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। এটা একই মেঘের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু অন্যদিকে মেঘের নিচের দিকের ঋণাত্মক বিদ্যুৎ চার্জের আকর্ষণে মাটিতে ধনাত্মক চার্জের সমাবেশ ঘটে এবং এ দুয়ের মধ্যেও একটি বিদ্যুৎক্ষেত্র তৈরি হয়।

‘স্টেপড লিডার’ নিচে নামছে

বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী হওয়ায় মেঘের বিদ্যুৎ মাটিতে আসতে পারে না। তবে মেঘে অনেক বেশি চার্জ জমা হলে একপর্যায়ে মাঝখানের বাতাসের বাধা অতিক্রম করে ঋণাত্মক বিদ্যুৎ চার্জ মাটিতে সঞ্চিত ধনাত্মক বিদ্যুতের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য একটি প্রবাহ লাইন সৃষ্টি করে। প্রথমে মেঘের কিছু বিদ্যুৎ চার্জ নিচে নামতে শুরু করে। একে বলে ‘স্টেপড লিডার’। আঁকাবাঁকা পথে ধাপে ধাপে এই বিদ্যুৎ নিচে নামতে থাকে। প্রতিটি ধাপ প্রায় ৫০ গজ দীর্ঘ এবং এগুলো এক সেকেন্ডের দশ লাখ ভাগের এক ভাগ সময় স্থায়ী হয়।

ঊর্ধ্বমুখী ধনাত্মক চার্জের প্রবাহ ও নিম্নমুখী ঋণাত্মক চার্জের সম্মিলনে শক্তিশালী বিদ্যুৎপ্রবাহের লাইন সৃষ্টি হয়

স্টেপড লিডারে কয়েক টন ঋণাত্মক বিদ্যুৎ থাকে। এরা ধাপে ধাপে নামতে থাকলে এর প্রভাবে মাটি থেকে ধনাত্মক বিদ্যুৎ উঁচু গাছ, ঘরবাড়ি বা টাওয়ার বেয়ে ওপরের দিকে উঠে ওদের সঙ্গে মিলিত হয়। এভাবেই ঊর্ধ্বমুখী ধনাত্মক চার্জের প্রবাহ ও নিম্নমুখী ঋণাত্মক চার্জের সম্মিলনে শক্তিশালী বিদ্যুৎপ্রবাহের লাইন সৃষ্টি হয়। তখনই বিদ্যুৎ চমকায় এবং প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত ঘটে।

১৯০২ সালের এই দৃশ্য শহরাঞ্চলে বাজ পড়ার সবচেয়ে পুরোনো ছবিগুলোর একটি

তাই বজ্রপাতের প্রক্রিয়ায় প্রথমে ওপর থেকে নিচে ও পরক্ষণেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় নিচ থেকে ওপর দিকে বিদ্যুৎপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। এই পাল্টা বিদ্যুৎপ্রবাহের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার মাইল। এই জটিল প্রক্রিয়া থেকে বলা চলে, বাজ শুধু ওপর থেকে পড়ে না, নিচ থেকেও ওপরে ওঠে।