যাপিত রম্য

প্রিয় প্রতিবেশী, বন্ধ করুন ঘ্রাণবাজি

আঁকা: জুনায়েদ আজিম চৌধুরী

প্রিয় প্রতিবেশী,

শুক্রবারের শুভেচ্ছা নেবেন। আজ ছুটির দিন, জানি খুব মজা করছেন। খুব আয়োজন করে রান্না করছেন পোলাও, গরুর মাংস। সঙ্গে আছে লাল লাল গলদা চিংড়ি। আজ আমাদের বুয়া আসেনি, তাই বলে আপনারা এমন অমানবিক হতে পারেন না। জানালা খুললে পোলাওয়ের ঘ্রাণ, দরজা খুললেই ভুনা মাংসের ঘ্রাণ, ভেন্টিলেটর দিয়ে আসছে নিষ্ঠুর মুরগি ভুনার ঘ্রাণ। আমরা গরিব ব্যাচেলর। বুয়াহীন এ সংসারের পাতিলে জমেছে হাহাকার। চুলার আগুন এ বেলাও কেঁদেকেটে অস্থির। একবার এসে দেখুন আমাদের ভাতের প্লেট হাহাকার করছে, ডালের পাতিল চিৎকার করছে। অল্প তেলে ভাজা হওয়া ডিমটিও মার খেয়ে যাচ্ছে আপনাদের গরুর মাংসের ঘ্রাণে। যুগে যুগে তারা আর কত মার খাবে? এভাবেই চলতে থাকবে সবলের ওপর দুর্বলের অত্যাচার?

প্রতিবেশী, আপনাদের অনেক ভালোবাসি! আপনারা গরুর মাংস খান, পোলাও খান, কোরমা খান, শাহরুখ, সালমান বা শাকিব—যে খানই খান না কেন, দয়া করে রান্নাঘরের জানালা বন্ধ করে খান, ডাইনিং রুমের দরজা বন্ধ করে খান। আমরা বরং আয়েশে নিজের হাতে রান্না করা আলুভর্তা খাই, ডিম খাই, শব্দ করে ডাল খাই।

সমস্যা নেই, কুলুপ এঁটে দিয়েছি আমাদের ডালের পাতিলের মুখে। ডিমকে বলেছি, খবরদার ঘ্রাণ ছড়াবি না, ওতে পাপ হবে। এবার দয়া করে বন্ধ করুন আপনাদের ঘ্রাণবাজি। বুর্জোয়া শ্রেণির এই দাপট বেশি দিন থাকবে না। আপনাদের ঘ্রাণবাজিতে আমরা শোষিত হচ্ছি, আমাদের নাক পচে যাচ্ছে। বলছি না জিবে জল আসছে; বলছি, এতে আমাদের মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির কথা না–ই বা বললাম। ঘ্রাণবাজি বন্ধ করুন শিগগিরই, নইলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আমরাও পাল্টা আঘাত হানব। সংগ্রামী মানুষের ঘাম দেখেননি চৌধুরী সাহেব, একদিন পকেটে টাকা নিয়ে চুপি চুপি গিয়ে হাজি নান্নার বিরিয়ানি খাব ধরে মেরে। তখন কী করবেন?

খুঁটিতে বেঁধে রাখুন আপনাদের গরু, মানে গরুর মাংস। কী লাভ শুধু হাজি নান্নাকে টাকা দিয়ে? তার চেয়ে শোষণ বন্ধ করুন, নেমে আসুন আমাদের পথে, দেখুন ডিম ভাজি কত সুস্বাদু। ডালে ভাসছে বলিষ্ঠ সংগ্রাম।

ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন। এক প্লেট ভাত বেশি খাবেন প্রয়োজনে। মনে করিয়ে দিই, গরুর মাংস খাওয়া হার্টের জন্য ক্ষতিকর।

ইতি

আপনাদের ব্যাচেলর প্রতিবেশী