কী কেন কীভাবে

প্রচণ্ড গরমের জন্য দায়ী এই আর্দ্রতা আদতে কী?

কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। মাটি কাটার কাজ করে ঘেমে একাকার মাসুদ। তেষ্টা মেটাতে খাচ্ছেন লেবুর শরবত। শানির দিয়ার, হিমাইতপুর, পাবনা, ১৯ মে
ছবি: হাসান মাহমুদ

আজ ৬ জ্যৈষ্ঠ। এতই গরম পড়েছে যে কাঁচা ফলমূলও পেকে যাচ্ছে অকালে! চিড়িয়াখানায় বাঘ গলা ডুবিয়ে বসে আছে চৌবাচ্চার পানিতে। শহরের কাকগুলো খুঁজে বেড়াচ্ছে পানির কল। দুষ্টু বানরেরা হাত পাতছে আইসক্রিমওয়ালার কাছে। আপনার কী অবস্থা? ছুটির দিনে হয়তো ঘরেই আছেন। তারপরও গরমে যে হাঁসফাঁস করছেন, তা দিব্যি টের পাচ্ছি। বাইরে বেরোলে অবস্থা আরও বেগতিক। সূর্যটা যেন একেবারে মাথার ওপরে এসে বসে থাকে।

পত্রিকার পাতায় কিংবা টিভিতে আবহাওয়ার খবরগুলোয় শোনা যায়, ‘বেশি আর্দ্রতার কারণে অসহনীয় গরম পড়েছে। জনজীবন বিপর্যস্ত...।’ এই আর্দ্রতা বিষয়টা কী? কেনই–বা এটার কারণে গরম বেশি অনুভূত হয়?

আবহাওয়ার হালচাল জানায় এমন মাধ্যমগুলো খেয়াল করে দেখেছেন হয়তো। সেখানে মাঝেমধ্যে বলা হয়, ‘টেম্পারেচার ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফিলস লাইক ৪২।’ মানে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও গরম লাগছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। অর্থাৎ গ্রীষ্মের আর্দ্র দিনে সত্যিকারের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপ অনুভূত হয় আমাদের শরীরে। এর রহস্যটা তাহলে কী? এমন আবহাওয়ায় মাঝেমধ্যে দমকা বাতাস বয়ে যায়, তবে সে বাতাসও এত গরম থাকে যে প্রশান্তির বদলে উল্টো ভীষণ অস্বস্তি লাগে। ঘামও বেরোয় না শরীর থেকে।

আর্দ্রতা কী?

বাতাসে ভাসমান জলীয় বাষ্পই হচ্ছে আর্দ্রতা। এই আর্দ্রতার কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ ঘামের সাহায্যে বের হয়ে যেতে পারে না। তাই গরমের মাত্রা বেড়ে যায় আরও বেশি। সাধারণ অবস্থায় ঘাম যখন ত্বকের উপরিভাগে আসে, তখন আমাদের শরীরের তাপে সেসব ঘাম বাতাসে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। কিন্তু বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম সহজে বাষ্পীভূত হয় না। কারণ, আশপাশের বাতাসে এমনিতেই তখন আর্দ্রতা বেশি থাকে। বাতাস অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে না। শরীরের ঘাম যত ধীরে ও কম পরিমাণে বাষ্পীভূত হয়, আমরা তত বেশি গরম ও অস্বস্তি অনুভব করি।

গরম থেকে স্বস্তি পেতে মাছের ঘেরে নেমেছে মহিষ। আড়ংঘাটা, খুলনা, ৮ মে

কিন্তু আর্দ্রতা বাড়ে কেন?

বেশি গরমে আর্দ্রতাও বাড়ে। কারণ, ঠান্ডা বাতাসের তুলনায় গরম বাতাস বেশি পানির কণা ধরে রাখতে পারে। গবেষকেরা বলেন, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (শূন্য দশমিক ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বাড়লে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ে ৪ শতাংশ। এ কারণে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ একই থাকলেও শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে আমাদের অনেক বেশি অস্বস্তি লাগে।

গরম ও আর্দ্র বাতাস যে শুধু আমাদের ত্বকেই অস্বস্তির সৃষ্টি করে, তা নয়। এমন বাতাসে আমাদের শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। জলীয় বাষ্প বাতাসে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের কিছু অংশ বাষ্পীভূত করে দেয়। আর্দ্র বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ যায় কমে। ফলে শ্বাস নিতে আমাদের কষ্ট হয়। একই সঙ্গে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গরম থাকায় শ্বাসপ্রশ্বাসপ্রক্রিয়া চালাতে আমাদের শরীরকে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়।

ঠিক কত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা আমাদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে, তার নির্দিষ্ট কোনো মাত্রা নেই। আমাদের শরীর এমনিতেই উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সঙ্গে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ৯–১৪ দিনের মধ্যে শরীর এই উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

তাহলে আর্দ্রতা কমবে কী করে?

শরীর খাপ খাইয়ে নিতে পারলেও গরম কিন্তু মাঝেমধ্যে লাগামছাড়া হয়ে যায়! তাই কেউ কেউ হয়ে পড়ে অসুস্থ। তাই এমন গরমে খুব সাবধান! বেশি বেশি পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। গোসল করতে হবে নিয়মিত। সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীকে ভালো রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী দিন দিন আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে। আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলোতে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তন আরও স্পষ্ট।

পৃথিবীর পরিবেশ ঠিক রাখতে বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে

এ কারণে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার পরিমাণে এত অসামঞ্জস্য। উষ্ণতা বাড়ছে বলে বিশ্বের নানান জায়গায় বরফ গলছে। এর ফলে পৃথিবীর পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। তাই বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। পৃথিবী ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকব।