একটা বিয়ের জন্য কী কী প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
এই প্রশ্নের সাধারণ উত্তরে সবার আগে আসবে ‘বর আর কনে’। তবে ভারতের গুজরাটের ভাদোদরার মেয়ে ক্ষমাবিন্দুর কাছে উত্তরটা ভিন্ন। তাঁর কাছে বিয়ে করার ইচ্ছাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। ‘বর’ না হলেও চলে। নিজের বিয়ে উপলক্ষে কার্ডও ছাপিয়েছেন ক্ষমা। সেই কার্ডে কেবল নিজের নাম, নেই কোনো বরের নাম।
নিজেকেই নিজে বিয়ে করেছেন ক্ষমা। মধুচন্দ্রিমায় ঘুরতেও যাবেন তিনি। শুধু থাকবে না বর।
ক্ষমার মতে, নিজের সঙ্গ সবচেয়ে জরুরি। আর জীবনসঙ্গী হিসেবে নিজের চেয়ে বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য আর কেই–বা হতে পারে। তাই কোনো পুরুষকে বিয়ের ইচ্ছা নেই। তবে ২৪ বছর বয়সী ক্ষমার কনে সাজার সাধ ষোলো আনা। তা হলে কী করে হবে ইচ্ছাপূরণ? ক্ষমাবিন্দু তাঁর এই ‘সমস্যা’র একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। সমাধানের নাম ‘সলোগমি’। মানে, নিজেকেই নিজে বিয়ে করা। সে জন্য বিশেষ লেহেঙ্গাও বানিয়েছেন। কার্ড পৌঁছে দিয়েছেন কাছের বন্ধুবান্ধবদের কাছে।
নিজেকে বিয়ে করার কথা মাথায় এল কীভাবে? টাইমস অব ইন্ডিয়ার এ প্রশ্নের জবাবে ক্ষমার পাল্টা প্রশ্ন, ‘আমরা নিজেরা নিজেদের ভালোবাসতে পারি, আর বিয়ে করতে পারি না? আমি নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। আর সেই ভালোবাসা জাহির করতে কোনো লজ্জা নেই। বিয়ের মূলকথা হলো, ভালোবেসে দুটি মানুষ বাকি জীবন একসঙ্গে থাকবে। আমি যদি নিজেকে ভালোবাসি, তাহলে নিজেকে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়?’
ক্ষমা জানিয়েছেন, এই একা–বিয়েতে তাঁর মা–বাবার সমর্থন আছে। তাঁরা দুজনই খোলা মনের মানুষ। তবে এই বিয়ের আরও একটি লক্ষ্য আছে। তিনি প্রমাণ করতে চান, মেয়েরা পুরুষের ওপর নির্ভরশীল নন। তাঁরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। একটা নারীর জীবনে সুখী হওয়ার জন্য পুরুষ আবশ্যক নয়।
প্রচার পেতে এমন কিছু করছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ক্ষমা বলেন, তিনি প্রচারণার ধার ধারেন না। নিজের মতো থাকতে ভালোবাসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ইতিমধ্যে তাঁর ২৫ হাজারের বেশি অনুসারী আছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের কাছে এ বিষয়ে এনডিটিভি জানতে চাইলে তাঁরা জানিয়েছেন, ভারতে নিজেকে বিয়ে করার কোনো আইনি বৈধতা নেই। হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী কৃষ্ণকান্ত ভাখারিয়া বলেন, ভারতীয় আইন অনুসারে কেউ নিজেকে বিয়ে করতে পারে না। বিয়ের জন্য দুই ব্যক্তি প্রয়োজন।
এসব আইনকানুনে ক্ষমার কিছুই আসে যায় না । তিনি কেবল নিজেকে বিয়ে করে সুখী হতে চান। ‘সলোগমি’ বৈধ নয়। আরেক সিনিয়র আইনজীবী চন্দ্রকান্ত গুপ্তও বলেন, হিন্দু বিবাহ আইনে যে পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে বিয়ে সম্পন্ন হতে অবশ্যই দুই ব্যক্তি লাগবে। নিজগামিতা কখনো আইনি বাধা পার হতে পারবে না।