রম্যগল্প

ত্যাড়া ভাই যেভাবে ভ্যাড়া ভাই হলো

একটু থামুন

মফিজ ত্যাড়ামিকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে! তার কারুকার্যময় ত্যাড়ামোপনায় এলাকাবাসী চরম বিরক্ত। লোকমুখে তার নামই হয়ে গেছে ‘ত্যাড়া ভাই’। সঠিক পথে থেকে তর্ক করলে তা-ও সহ্য করা যায়। কিন্তু মফিজের কাজই উল্টো পথে চলা, উল্টো কথা বলা। আলোর ধর্ম যেমন সরলপথে চলা, তেমনি ‘ত্যাড়া ভাই’-এর ধর্ম বক্রপথে চলা।

জনশ্রুতি আছে, ‘ত্যাড়া ভাই’ জন্মত্যাড়া! জন্মের পর শিশু কাঁদে; কিন্তু আমাদের ত্যাড়া ভাই জন্মের পরই চিরাচরিত নিয়মকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে হেসেছিল! শৈশবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় কেউ তাকে যদি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করত, ‘কোথায় যাচ্ছ, বাবু?’ তাহলে সে বলত, ‘চুরি করতে যাচ্ছি’! পরীক্ষার খাতায় ভুল লিখলেও বুঝতেই পারছেন কী ঘটত! জেনেটিক কোডে স্বর্ণাক্ষরে ত্যাড়ামোর কথা লেখা থাকায় মফিজ সপক্ষ নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে তর্কাতর্কি জুড়ে দিত।

তরুণ বয়সে বন্ধুর প্রেয়সীকে তার ভালো লেগে গেল! ত্যাড়া প্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হলো সে। মেয়েটিকে ত্যাড়া ভাইয়ের চাই-ই চাই! ‘যাহা চাই, তাহা ভুল করে চাই’—এসব ভাবের কথায় বিশ্বাসী নয় মফিজ। তার কথা, ‘যাহা চাই, তাহা ত্যাড়ামিতে পাই!’ কারণ, মাইরের মধ্যে যেমন ‘ভাইটামিন’ আছে, তেমনি ত্যাড়ামির মধ্যেও নাকি ভাইটামিন আছে! সাবধানের যেমন মাইর নাই, তেমনি ত্যাড়ামোপনারও মনে হয় মাইর নাই। তা না হলে, মফিজ কীভাবে বন্ধুর প্রেমিকাকে শেষমেশ বিয়ে করে ফেলল!

বাজারের ব্যাগ হাতে মফিজকে দেখে কেউ যদি কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করত, তাহলে সে বলত, ‘নদীতে সাঁতার কাটতে যাচ্ছি।’

একবার মফিজ তার ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে এলাকার এক মুরুব্বি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে কি স্কুলে যাচ্ছ, বাবা মফিজ?’

ত্যাড়া মফিজের তাৎক্ষণিক জবাব, ‘জি না, ছেলেকে নিয়ে থানায় যাচ্ছি! বাপ-ব্যাটা মিলে জেল খাটব!’

আরেক দিন ঘটল ঐতিহাসিক ঘটনা! মফিজ তার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। এলাকার এক মুরুব্বি বললেন, ‘বাবা মফিজ, সঙ্গে কে? তোমার স্ত্রী?’

ত্যাড়া মফিজের উত্তর, ‘না, আমার শ্যালিকা!’

আশা করি, পরের ঘটনা আর না বললেও চলবে! স্ত্রীর ছ্যাঁচানি খেয়ে ত্যাড়ামি এমন ছোটা ছুটেছে যে তারপর থেকে ত্যাড়া ভাই হয়ে গেছে ‘ভ্যাড়া ভাই’!