ডিম নিয়ে মুরগিরা অনশনে

পিক্সাবে

ডিমের দাম নিয়ে অনশনে বসেছে নিখিল বাংলাদেশ মুরগি সম্প্রদায়। রাজধানীর ব্যস্ততম এক চৌরাস্তার মোড়ে আয়োজিত এক সমাবেশে সংগঠনটি বলেছে, আস্ত মুরগির দামের সঙ্গে মিল রেখে ডিমের দামের ঘোড়াকে পাগল না বানালে দুর্নিবার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

আপাতদৃষ্টে ‘নিরীহ’ তকমা পাওয়া মুরগিদের এমন ঘোষণায় এরই মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবরে অতি সম্প্রতি প্রকাশ, কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগির দাম বাজারে বেড়েই চলেছে। এ ক্ষেত্রে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ পর গতকাল শুক্রবারে একই ওজনের মুরগি কিনতে বাড়তি আরও ১০ টাকা যোগ করতে হয়েছে। কিন্তু যে হারে মুরগির মাংসের দাম বাড়ছে, সেই হারে বাড়ছে না ডিমের দাম। ডিমের ডজন নাকি এখনো ৯০ টাকা আছে।

সদা পরিবর্তনশীল এ দুনিয়ায় এমন অচলাবস্থা মেনে নিতে পারছে না নিখিল বাংলাদেশ মুরগি সম্প্রদায়। তাদের বক্তব্য, মুরগির দাম বাড়ছে, কিন্তু যে ডিম থেকে আস্ত মুরগি বের হচ্ছে, তার নিম্নমূল্য পুরো বাজারব্যবস্থাকে হাস্যকর করে তুলছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি হয়ে যাচ্ছে বড়। কিন্তু বাঁশ যতটা উপযোগী, কঞ্চির উপযোগিতা কি ততটাই?—এ প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশের মুরগিদের প্রবাদপ্রতিম সংগঠনটি। এ অবস্থায় কঞ্চিকে ছেঁটে বাঁশের নিচে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে তারা।

সমাবেশে নিজেদের ভাষাতেই যুক্তি উপস্থাপন করেন এদেশীয় মুরগিনেতারা। সেগুলো গুগল ট্রান্সলেটে অনুবাদ করে আমজনতার উদ্দেশে শোনানো হয়। তবে গুগলের যান্ত্রিক ও শব্দগত সীমাবদ্ধতার দরুন কিছু বিভ্রাট দেখা দিয়েছিল। এ ছাড়া ফোর–জি দাবি করা নেট সংযোগ হঠাৎ করে ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান, জিরো—অ্যাকশন বলে শুধু ‘জি’ পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় ইন্টারনেট প্রজন্মের পিণ্ডি চটকাতে শোনা যায় কতিপয় মুরগিনেতাকে। এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট পক্ষের বদলে নিজেরাই ক্ষমা চেয়ে নেন। সঙ্গে এ-ও জানান, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ক্ষমা চাইতে বলা হলেও তারা নাকি ক্ষমা চাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ফি চেয়েছে।

সে যা-ই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। নিখিল বাংলাদেশ মুরগি সম্প্রদায়ের দাবি, ডিমের দাম না বাড়িয়ে শুধু মুরগির দাম বাড়ানোয় বাজারব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এটা অনেকটা কোনো মানুষের এক গাল বাকি রেখে অন্য গালে চড় মারার মতো। এতে এক গাল লাল হলেও অন্য গালে রক্ত চলাচল কমে যায়। যে ডিমে কষ্ট করে তা দিচ্ছে মুরগিরা, যে ডিম থেকে আগামীর নধর মুরগিরা বের হচ্ছে, সেই ডিমকে অবহেলা করা হচ্ছে। ফলে, এখন মুরগিরা শুধু ডিম উৎপাদনের চেয়ে ডিম থেকে মুরগি উৎপাদনে বেশি মনোযোগী হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। কারণ, ডিম দেওয়ার বদলে আস্ত মুরগি দিলে যদি বেশি দাম পাওয়া যায়, তবে কেন তা থেকে দূরে থাকবে সাধারণেরা? কিন্তু এতে ডিমের জাতীয় চরিত্র কালিমালিপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় সমাবেশে।

সমাবেশে ডিম আগে, নাকি মুরগি আগে—সেই চিরাচরিত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন বক্তারা। অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘হুইচ কেম ফার্স্ট: দ্য চিকেন অর দ্য এগ?’ শীর্ষক এক নিবন্ধের বরাত দিয়ে সমাবেশে জানানো হয়, ডিম যে পৃথিবীতে আগে এসেছে, তা একটি স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক বিষয়। কিন্তু মানবসম্প্রদায় সব সময়ই এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং এভাবে মুরগি ও তাদের ডিম নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা করতে চাইছে। অগ্রজ ডিমের অবমূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন মুরগিনেতারা। তাঁদের মতে, মানুষের মধ্যে বড়-ছোটর সম্মান দেওয়ার চল না-ই থাকতে পারে; কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রকের সুবিধা নিয়ে সেই বদভ্যাসটি মুরগিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সভ্যতার পরিপন্থী।

নিখিল বাংলাদেশ মুরগি সম্প্রদায় জানিয়েছে, ডিমের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে তাদের অনশন চলবে। অনশনের কারণে মুরগিদের শরীরে মাংস কম যোগ হবে। ফলে, বেশি দাম দিয়ে কিনেও হাঁড়িভর্তি মাংস খাওয়া আর হবে না। এ থেকে বাঁচতে চাইলে ডিমকে যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে।

সমাবেশের উপসংহারে বিখ্যাত সায়েন্সডাইরেক্ট ডটকমে প্রকাশিত ‘হোয়াটস নিউ ইন চিকেন এগ রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজি ফর হিউম্যান হেলথ প্রমোশন—আ রিভিউ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রবন্ধের বরাত দেওয়া হয়। তাতে নাকি বলা হয়েছে, মুরগির ডিমকে অন্যতম নিখুঁত প্রাকৃতিক খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এ তথ্য জানিয়ে মানবব্যবসায়ীদের প্রতি মুরগিনেতাদের সবিশেষ আহ্বান , ‘শুধু অন্যকে দিতে নয়, নিজের মঙ্গলের জন্যও ডিম নিয়ে ভাবুন। তবেই হয়তো ডিমের প্রকৃত মূল্য অনুধাবন সম্ভব হবে।’