ব্যাকরণ

টানাপোড়েন এল যেখান থেকে

বাংলা ভাষায় যে বাগ্‌ধারাগুলো আছে, সেগুলো এল কোথা থেকে?

মানবিক সম্পর্কেও কখনো কখনো টানাপোড়েন দেখা দেয়
প্রথম আলো

টানাপোড়েন

তাঁতে কাপড় বোনার সময় লম্বালম্বিভাবে যেসব সুতা সাজানো থাকে, সেগুলোকে টানা বলে। আর প্রস্থের বা আড়ের সুতাগুলোকে বলে পোড়েন। টানা দেওয়া সুতাগুলো খুব টান টান অবস্থায় থাকে। পোড়েনের সুতাগুলো টানার সুতাগুলোর ওপর-নিচ দিয়ে পাটি বোনার মতো করে বিশেষ কৌশলে আনা হয়। মানুষের জীবনে সম্পর্কে সমস্যা আসে, আর্থিক সংকট আসে। তখন টানার সুতার মতো টান টান অবস্থায় পড়তে হয়। আর পোড়েনের সুতার মতো কঠিন কৌশলে তার ভেতর দিয়েই জীবনকে চালাতে হয়। সুতরাং টানাপোড়েন হলো সংকটের কঠিন অবস্থা।

কুরুক্ষেত্র বাধানো

কুরুক্ষেত্রের আগের নাম ছিল সমন্তপঞ্চক। কুরু নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর বংশধরেরা কৌরব নামে পরিচিত। রাজা কুরুর নামানুসারে সমন্তপঞ্চকের নাম হয় কুরুক্ষেত্র। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসের লেখা মহাভারতে আছে, এখানেই সিংহাসন দখলকে কেন্দ্র করে কৌরবদের দুপক্ষের মধ্যে বিশাল যুদ্ধ হয়। রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র দুর্যোধন, দুঃশাসন—এদের সঙ্গে যুদ্ধ হয় পাণ্ডুরাজার পাঁচ ছেলের। কোথাও ভীষণ ঝগড়া বা তুমুল কাণ্ড যখন ঘটে, পুরাণের কাহিনির এই সূত্র ধরে তখন বলা হয়, একেবারে কুরুক্ষেত্র বেধেছে।

গোবেচারা

‘গো’ সংস্কৃত শব্দ; এর অর্থ গরু। এই প্রাণীর বোধ-বুদ্ধি কম বলেই ধরা হয়। আবার গৃহপালিত হয়ে গরু একেবারে শান্তশিষ্ট হয়ে গেছে। আর ‘বেচারা’ ফারসি শব্দ; এর অর্থ যার কোনো উপায় নেই। অনেক সময় কিল-চাপড় খেয়েও কারও কারও কিছু বলার থাকে না; হাত গুটিয়ে একরকম নিরুপায় হয়ে থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়া মানুষকে বলা হয় ‘গোবেচারা’! অর্থাৎ গোবেচারা হলো গরুর মতো নির্বোধ, নিরীহ ও উপায়হীন মানুষ।