গবেষণা

গোটা পৃথিবীর অর্থনীতির চেয়েও দামি

শিল্পীর চোখে সিক্সটিন সাইকি। ১৮৫২ সালে এক ইতালীয় জ্যোতির্বিদ গ্রহাণুটি আবিষ্কার করেন
নাসা

আর ১০টা গ্রহাণুর সঙ্গে এর তফাৎ তো আছেই। আকারটা বড়সড়। দামটাও চড়া। শুধু চড়া নয়, বিজ্ঞানীরা বলছেন, গোটা পৃথিবীর মোট অর্থনীতির চেয়েও দামী।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘সিক্সটিন সাইকি’। মঙ্গল আর বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যে যে গ্রহাণুমণ্ডল বা অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট, সেখানে সিক্সটিন সাইকির অবস্থান।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক গবেষণার ভাষ্য যদি ঠিক হয়, তবে পুরো গ্রহাণুটি ধাতব পদার্থের তৈরি। তার চেয়েও বড় কথা, সে ধাতবের দাম ১০ হাজার কোয়াড্রিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১ এর পিঠে ১৯টি শূন্য, অর্থাৎ ১ লাখ কোটি কোটি ডলার। টাকায় হিসাব করতে চাইলে আবার ৮৫ দিয়ে গুণ দিন। গোটা পৃথিবীর অর্থনীতির চেয়ে ঢের বেশি তো বটেই।

গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ট্রেসি বেকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রায় পুরোটাই ধাতবে তৈরি এমন উল্কাপিণ্ডের খোঁজ আমরা পেয়েছি। তবে সাইকি সেদিক থেকে অনন্য। হতে পারে গ্রহাণুটি পুরোটাই লোহা ও নিকেলের তৈরি।

বেকার আরও বলেন, পৃথিবীর কেন্দ্রও ধাতবে তৈরি। এর সঙ্গে আছে ম্যান্টল আর ক্রাস্ট। হতে পারে সাইকিও গ্রহ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তবে সৌরজগতের কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ম্যান্টল আর ক্রাস্ট হারিয়েছে।

হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে গ্রহাণুটি পরীক্ষা করেন বেকার। আগের চেয়ে নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করতে পেরেছেন। তাঁর গবেষণাপত্রটি ‘প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নাল’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে গ্রহাণুটির চারপাশ থেকে ঘুরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে নাসা। মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির। গ্রহের কেন্দ্র সম্পর্কে ধারণা পেতেই তাদের এমন উদ্যোগ।

২০২২ সালে অভিযান শুরু করতে চায় নাসা। সে মহাকাশযান সিক্সটিন সাইকিতে পৌঁছাতে পারে ২০২৬ সালে।

সিক্সটিন সাইকিতে অভিযানে যেতে চায় নাসা। সে অভিযানের নভোযান হতে পারে এমন

সৌরজগতে ধাতব গ্রহাণু তুলনামূলক কম। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, সাইকি হয়তো গ্রহের ভেতরের গঠন সম্পর্কে ধারণা দেবে।

নাসা বলছে, সাইকি অনন্য কারণ এটা দেখে মনে হচ্ছে পুরোনো কোনো গ্রহের কেন্দ্রের নিকেল ও লোহা বেরিয়ে পড়েছে। মূল ঘটনা বুঝতে হলে সাইকির কাছাকাছি পৌঁছতে হবে বলে জানান বেকার। বলেন, যা আশা করা হচ্ছে, তা না হলেও নতুন কোনো চমক হয়তো থাকবে আমাদের জন্য।

গ্রহাণুটি মহামূল্যবান হলেও সেটি টেনে পৃথিবীতে আনার কোনো পরিকল্পনা নেই নাসার। তা ছাড়া সেটি থেকে খনিজ আহরণের প্রযুক্তিও নেই তাদের কাছে। আপাতত গ্রহের গঠন সম্পর্কে ধারণা নিয়েই ক্ষান্ত দিতে হচ্ছে। ধাতব পদার্থ ছিনতাই পরেও করা যাবে।