লক্ষ করলে দেখা যাবে, টেলিফোন বা মোবাইল ফোনে বোতামের নম্বরগুলো ওপর থেকে নিচে সাজানো, কিন্তু ক্যালকুলেটরে নিচ থেকে ওপরে। টেলিফোনের ওপরের দিকে প্রথম সারিতে ১, ২, ৩-এর পরের সারিতে ৪, ৫, ৬ ইত্যাদি। কিন্তু ক্যালকুলেটরের একদম নিচের সারিতে ১, ২, ৩ ইত্যাদি। সংখ্যার সারিগুলো দুই বিপরীতমুখী হওয়ার ব্যাপারটি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এ রকম কেন হলো?
কিছু সুবিধা আছে বলেই নম্বর বিন্যাস দুই রকম করা হয়েছে। ষাটের দশকের শুরুতে ক্যালকুলেটর ও টেলিফোনে বোতামে নম্বর ব্যবস্থা (টাচ টোন কী প্যাড) চালু হয়। এ দুটি যন্ত্রের ক্ষেত্রেই তাদের পূর্ববর্তী যন্ত্রের অনুসরণে নম্বরবিন্যাস সাজানো হয়। যেমন, ক্যালকুলেটরের আগে গণনাযন্ত্র ছিল অ্যাবাকাস। এর প্রথম সারির ওপরে ৯ থেকে শুরু করে নিচে শূন্য। সে অনুযায়ী ক্যালকুলেটরেও ওপরের সারিতে ৭, ৮, ৯ ইত্যাদি রাখা হলো। সেখানে আরেকটি বিবেচনা ছিল।
নিচের সারিতে ১, ২, ৩ থাকলে সেগুলো হাতের সবচেয়ে কাছে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে বড় সংখ্যাগুলো ওপরে উঠে যায়। এতে দ্রুত হিসাব করা সহজ। অন্যদিকে প্রথমদিকে টেলিফোনে ছিল গোলাকার একটি চক্রে (ডায়াল) সাজানো নম্বর। ডায়ালে ওপরের দিকে প্রথমে এক দিয়ে শুরু করে ক্রমান্বয়ে নিচে শূন্য। তাই কি প্যাডেও একই বিন্যাস ব্যবহার করা হলো। এটা ক্যালকুলেটরের বিপরীত।
এখানে আরেকটি ব্যাপার ছিল। টেলিফোন কোম্পানি চেয়েছিল, যেন সবাই নম্বর দেখে দেখে টেলিফোন করে, যেন একের পর এক নম্বর টিপতে সামান্য সময় লাগে। দুটি নম্বরের মাঝখানে একটু সময় না পেলে সংকেত প্রেরণে প্যাঁচ লাগতে পারে। এ জন্য ক্যালকুলেটরের বিপরীতবিন্যাস ব্যবহার করা হয়। কারণ, ক্যালকুলেটরে চোখ বন্ধ করে হিসাব করতে সবাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
একই বিন্যাস না হওয়ায় টেলিফোন করার সময় সবাইকে মনোযোগ দিয়ে নম্বর টিপতে হয়। তা ছাড়া মোবাইল বা ফিক্সড ফোনের কি প্যাডে a, b, c, d প্রভৃতি অক্ষরও থাকে। নম্বরগুলো ক্যালকুলেটরের মতো সাজানো হলে অক্ষরগুলো নিচ থেকে ওপরে পড়তে হতো, এতে ছন্দপতন ঘটত। টেলিফোনে তাই ক্যালকুলেটরের বিপরীতবিন্যাসে ওপর থেকে নিচে নম্বর সাজানো হয়।