ওয়ান টাইম কাপ কি নিরাপদ?

বাইরে চা-কফি খাওয়ার ব্যাপারটা সহজ করে দিয়েছে ওয়ান টাইম কাপ
ছবি: পেক্সেলস

এ যেন এলাম, খেলাম, ফেলে দিলাম! চারপাশে তাকালে এমনটাই তো দেখি আমরা। ওয়ান টাইম কাপ হয়তো চা-কফি খাওয়া সহজ করে দিয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালের পর থেকে বাইরে চা-কফি খাওয়ার ব্যাপারে ওয়ান টাইম কাপ হয়ে উঠেছে সহজ সমাধান। এই ওয়ান টাইম কাপ কি নিরাপদ? শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সে প্রশ্নের উত্তরে আমরা পরে আসছি। পরিবেশের জন্য যে ভীষণ ক্ষতিকর, তা তো সবারই জানা।

এসব কাপ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা ভীষণ কঠিন

তাই ডিসপোজেবল বা একবার ব্যবহারযোগ্য কাপ নিয়ে পরিবেশবিদদের মধ্যে উদ্বেগের অন্ত নেই। এগুলো এত পাতলা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় যে একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা ভীষণ কঠিন। নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এসব কাপে চা-কফির মতো গরম পানীয় খেলে পানীয়ের সঙ্গে কোটি কোটি অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।

ওয়ান টাইম কাপে অবস্থিত অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার আণুবীক্ষণিক ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির (এনআইএসটি) গবেষকেরা ওয়ান টাইম কাপের উপাদান নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, এসব কাপে লো-ডেনসিটি পলিইথিলিনের (এলডিপিই) আবরণ থাকে। এই পাতলা, নমনীয় ও স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণ আদতে পানিরোধী হিসেবে কাজ করে। গবেষকেরা দেখেছেন, যখন এই কাপগুলোতে ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (২১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রার পানি ঢালা হয়, তখন সেগুলো থেকে শত শত কোটি অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পানির সঙ্গে মিশে যায়।

এনআইএসটির রসায়নবিদ ক্রিস্টোফার জ্যাংমিস্টার বলেন, ‘আমরা যেদিকেই তাকাই না কেন (কাপের), সবখানেই প্লাস্টিকের কণা। প্রতি লিটারে কয়েক হাজার কোটি কণা থাকে। আমরা এখনো জানি না, কণাগুলো পানীয়ের মাধ্যমে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করলে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে কিনা। কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কাপগুলোতে অসংখ্য কণা আছে।’

গবেষকেরা দেখেছেন, গরম পানি ঢালার পর কাপের ভেতরের আবরণ থেকে কোটি কোটি অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা নির্গত হয়

গরম পানির সংস্পর্শে এলে এসব কাপ কী পরিমাণ প্লাস্টিক কণা নিঃসরণ করে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে জ্যাংমিস্টারের গবেষকদল একটা বিশেষ পরীক্ষা চালায়। ঠিক একই পরীক্ষার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে অতিক্ষুদ্র কণার উপস্থিতি পরিমাপ করা হয়। পরীক্ষার সবশেষে গবেষকেরা ‘স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি’ নামক এক পদ্ধতির সাহায্যে অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার রাসায়নিক গঠন সম্পর্কেও জানতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব অতিক্ষুদ্র কণার আকার ৩০-৮০ ন্যানোমিটার। কিছু কণার আকার ২০০ ন্যানোমিটারের বেশি হয়। জ্যাংমিস্টার বলেন, ‘গত শতকে বিজ্ঞানীরা পরিবেশের যেখানেই নজর দিয়েছেন, সেখানেই প্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছেন।’

জ্যাংমিস্টার যে একবিন্দু বাড়িয়ে বলেননি, তার প্রমাণ আছে ভূরি ভূরি। গবেষকেরা অ্যান্টার্কটিকার বরফাচ্ছাদিত তলদেশেও ১০০ ন্যানোমিটারের চেয়ে বড় আকারের প্লাস্টিক কণা খুঁজে পেয়েছেন। জ্যাংমিস্টার জানান, এসব কণা খুব ছোট হলেও বিষয়টা খুব বড় চিন্তার কারণ। এগুলো রক্তকণিকায় প্রবেশ করে এর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে তিনি আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই কণাগুলো মানুষের শরীরে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে কি না, সে ব্যাপারে এখনো হলফ করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

ওয়ান টাইম কাপ নিয়ে পরিবেশবিদদের মধ্যে উদ্বেগের অন্ত নেই

ভারতের খড়গপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ২০২০ সালে ঠিক একই ধরনের এক গবেষণা চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে, একেকটি ওয়ান টাইম কাপে থাকা গরম পানীয়তে ২৫ হাজার প্লাস্টিক কণা ছিল। এমনকি পানীয়তে জিংক, সিসা এবং ক্রোমিয়ামের মতো ধাতব পদার্থের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব পদার্থও এসেছে ওই প্লাস্টিক থেকে।

সূত্র: এনআইএসটি ডটগভ ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি