‘কান্নাকাটির শব্দ শুনে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি। শব্দ কোথা থেকে আসছে, তা জানতে হাঁটতে হাঁটতে হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে পৌঁছাই। সেখানে শোক জানাতে একটি মরদেহ রাখা। প্রহরীরা মরদেহটি ঘিরে রেখেছে। শোক জানাতে এসেছেন বহু লোক। কিন্তু সবার মুখ ঢাকা। আমি একজন প্রহরীর কাছে জানতে চাইলাম, “কে মারা গেছেন?” প্রহরী জানাল, আততায়ীর হাতে প্রেসিডেন্ট নিহত হয়েছেন। তারপর ভিড় থেকে কেউ একজন চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলে আমার ঘুম ভেঙে যায়।’ নিজের দেখা একটি স্বপ্নের কথা এভাবেই বর্ণনা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল আততায়ীর হাতে খুন হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি এই স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু ওয়ার্ড হিল লামনকে।
এই গল্প নিয়ে সে সময় তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাহলে কি লিংকন নিজের মৃত্যু বিষয়ে আগেই সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন? তাহলে কেন সতর্ক হলেন না তিনি? লামন আরও জানিয়েছেন, লিংকন নাকি বলেছেন, যেহেতু স্বপ্নে, তিনি জীবিতই ছিলেন, সুতরাং স্বপ্নের ওই শব তাঁর হতে পারে না। তাই তিনি সেই স্বপ্নকে আর পাত্তা দেননি। এ ধরনের কোনো স্বপ্নকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিতেন না, বরং মজা পেতেন। তিনি এসব স্বপ্নকে হাস্যকর হিসেবে মন্তব্য করেছেন। ভবিষ্যদ্বাণীতে লিংকন বিশ্বাস করতেন বলে মনে হয় না। কারণ, তিনিই বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা করার সবচেয়ে ভালো উপায়—ভবিষ্যৎটা তৈরি করা।’ যাহোক, এর কদিন পরই লিংকন প্রাণ হারান জন উইল্কস বুথের গুলিতে এবং শোক জানাতে তাঁর মরদেহ হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমেই রাখা হয়েছিল।
লামনের অদ্ভুত দাবিটি প্রথম সামনে আসে লিংকনের মৃত্যুর ২০ বছর পর। লামনের বরাতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনে একটি লেখা বের হয়। লামনের বয়ানকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখেন। অনেকে মনে করেন, লামন বাড়িয়ে বলেছেন, গল্পে রং চড়িয়েছেন। লামনের দাবি যদি অসত্যও হয়, তবু অস্বীকার করার উপায় নেই লিংকন স্বপ্নের মানে খুঁজতে পছন্দ করতেন। একবার তিনি এক চিঠিতে তাঁর স্ত্রী মেরি লিংকনকে লিখেছিলেন, ‘টাডের (ছেলে) পিস্তলটি সরিয়ে রেখো, টাডকে নিয়ে আমি একটি বাজে স্বপ্ন দেখেছি।’
মৃত্যু বিষয়ে স্বপ্ন এটিই প্রথম নয়, আব্রাহাম লিংকনের আরও কিছু অদ্ভুত স্বপ্নের কথা জানা যায়। যেদিন নিহত হন, সেদিন তিনি তাঁর মন্ত্রিপরিষদের কজন সদস্যকে বলেছিলেন, স্বপ্নে দেখেছেন তিনি দ্রুতগতিতে নৌকায় করে কোথায় যেন যাচ্ছেন। লিংকন এই স্বপ্ন একাধিকবার দেখেছেন বলেও জানান।
উইলিয়াম এইচ ক্রুক ছিলেন লিংকনের অন্যতম দেহরক্ষী। ক্রুক জানিয়েছেন, নিহত হওয়ার রাতে ক্রুককে লিংকন বিদায় জানিয়েছেন ‘গুড বাই’ বলে, যা খুবই অস্বাভাবিক। লিংকন নাকি ক্রুককে সব সময় ‘গুড নাইট’ বলেই বিদায় জানাতেন। সেই প্রথম লিংকন বলছিলেন, ‘গুড বাই’। এই তথ্য দিয়ে ক্রুক পরোক্ষভাবে প্রশ্ন তোলেন, লিংকন কি তাহলে জানতেন আজ রাতেই তিনি মারা যাবেন।
লিংকনকে ঘিরে রহস্য ছিল, নাকি লিংকনের সঙ্গে রহস্যকে বারবার জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়। তবে মানুষ রহস্য পছন্দ করে, আর এ জন্যই এই আলোচনার সমাধান হওয়ার নয়।
সূত্র: হিস্ট্রি ডটকম ও স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন