চলতি রম্য

আপনি বড়ই ভিসিত্র, হে মাননীয়!

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে উপাচার্যের বিদায় কামনা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মানপত্র লিখলে কেমন হতো? কল্পনা করার চেষ্টা করল ‘একটু থামুন’

হে সুধী,

সবুজে আচ্ছাদিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সজীব প্রকৃতি আজ বিমর্ষ, বেদনা ভারাক্রান্ত। শিক্ষার্থীদের করুণ আর্তিতে সবার হৃদয় আঙিনায় আজ কষ্টবোধের ভীষণ প্লাবন। আপনার অবস্থান এতটা দুঃসহ হবে, তা ভাবতে পারিনি!

হে অবিচল,

আপনার ‘খুঁটি গাড়া’ অবস্থানের কারণে চারপাশে আজ বেজে চলেছে বিদ্রোহের দামামা। আমরা আপনার সান্নিধ্য কামনা করছি না, কিন্তু আপনি পড়ে আছেন মাটি কামড়ে। তাই অন্তর আমাদের প্রবল প্রতিবাদে উদ্বেল। জন্ম–মৃত্যু যেমন সত্য, তেমনই গ্রহণের পরই আসে বিসর্জনের বেদনাঘন মুহূর্ত। আমরা আপনাকে বিসর্জন দেওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া। কারণ, এটাই চিরন্তন, বিধির অলঙ্ঘনীয় বিধান! রবীন্দ্রনাথের ভাষায়:

‘এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত্ত্য ছেয়ে

সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে

গভীর ক্রন্দন “যেতে নাহি দিব।” হায়,

তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়!’

কিন্তু তারপরও আপনি আমাদের ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন না দেখে বিস্ময়ে আমরা হতভম্ব!

হে নিরলস কর্মী,

আপনার এহেন অবস্থানের বেলায় ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের একাধিক পূঁতিময় ভাষণ কানে ও মনে বড় জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে আপনি যতটা না সফল, তার চেয়ে বেশি সফল ‘কর্মী’ হিসেবে! প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব পালনের চেয়ে আপনার আগ্রহ ছিল ‘হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোথা, অন্য কোন্‌খানে’! তাই তো আপনার প্রতিটি দিন ছিল ‘কর্মমুখর’। নিজ ‘দায়িত্বের’ প্রতি আপনি ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠ। আপনার কর্তব্যনিষ্ঠার সুবাদে আমরা সত্যিকার জ্ঞানের সন্ধান পাওয়ার বদলে পেয়েছি হুমকি, খেয়েছি মার, সয়েছি বহু যাতনা! আপনার ‘স্নেহ’ ও ‘সুশাসন’ আমাদের স্মৃতিপটে চিরভাস্বর হয়ে বিরাজ করবে।

হে ভিসিত্র,

আমাদের ভীষণ দুর্ভাগ্য যে আমরা আপনার মতো ‘সুদক্ষ’ শিক্ষকের সান্নিধ্যে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেয়েছি! আপনার অবিচল ধৈর্য, বিদ্বেষী ব্যবহার ও নিমপাতাবর্ষী ভাষণের কথা জীবনে কখনো ভুলব না। আপনার এ সুদীর্ঘ শিক্ষকজীবনে অসংখ্য শিক্ষার্থীর মধ্যে জ্বেলে দিয়েছেন প্রতিবাদের মশাল, সবচেয়ে মিষ্টভাষীর মুখে এনে দিয়েছেন তীব্র স্লোগান!

আজ আপনার বিদায় কামনা করছি বলে আমাদের কণ্ঠ উচ্চ, আমাদের শরীর থেকে ঝরছে রক্ত! তবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে দুনয়ন প্লাবিত করছেন আপনার জ্ঞাতি ভাইয়েরা! আপনি পদত্যাগ করলে নাকি তাঁরাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত! হে মাননীয়, আপনি এবং আপনারা সত্যিই ভিসিত্র!

পরিশেষে আপনার পদত্যাগীজীবন হোক অনাবিল সুখশান্তিতে সমৃদ্ধ, পরম করুণাময়ের কাছে এই আমাদের প্রার্থনা।