যাপিত রম্য

আপনার রুমমেটও কি এ রকম? (প্রথম পর্ব)

মেস বা হল-জীবনে আমাদের রুমমেট হয় কে? উত্তরে ছারপোকার নাম ওপরের দিকে থাকবে। তবে মানুষের উপস্থিতি তো অস্বীকার করতে পারবেন না কেউই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে একই ছাদের নিচে কাটাতে হয় অনেকগুলো দিন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের চলাফেরা, আচার-আচরণেও থাকে ভিন্নতা। রুমমেটদের বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করল ‘একটু থামুন’, মিলিয়ে দেখতে পারেন নিজের সঙ্গে...

আঁকা: রাজীব

হিসাবি রুমমেট

দেখতে অনেক সহজ-সরল হলেও হিসাবি রুমমেটরা মাথার ভেতর শক্তিশালী ক্যালকুলেটর নিয়ে ঘোরে প্রতিনিয়ত। তারা দুই টাকা থেকে দুই হাজার টাকার লেনদেনের সঠিক হিসাব করে ফেলে সেকেন্ডেরও কম সময়ে। এদের সঙ্গে কোথাও শেয়ারে খেতে গেলে অথবা ঘুরতে গেলেই নিজেদের খরচের হিসাবের ব্যাপারে বেশ সচেতন থাকে। এ ধরনের রুমমেটদের সঙ্গে খরচ করতে উদাসীন হওয়া যায় না। উদাসীন হলেও তারাই আপনার উদাসীনতাকে দূরে ঠেলে দেবে নিজেদের কল্যাণেই।

আঁতেল রুমমেট

উচ্চ শব্দে গান শোনা, তাস খেলা বা আড্ডা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এই শ্রেণির রুমমেটরা। এদের জীবনের উদ্দেশ্য থাকে একটাই—পড়া, পড়া এবং পড়া। এদের দেখলে আপনি মাঝেমধ্যে আফসোসও করেন, ‘ইশ্, ওর মতো যদি পড়তে পারতাম!’

চাপাবাজ রুমমেট

এদের গায়ে জোর থাকুক বা না-ই থাকুক, চাপার জোরে দুনিয়া জয় করে নেওয়ার অদ্ভুত এক ক্ষমতা থাকে। হঠাৎ করে রুমে ঢুকেই তারা গলা ফাটিয়ে বলে, ‘মামা, জানস আজকে কী হইছে? ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটা আমাকে লিফট দিছে তার রিকশায়! উফ্ মামা! আর কী কমু!’ খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, সে নিজেই আসলে সুন্দরী তরুণীকে রিকশায় লিফট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং অবধারিতভাবে প্রস্তাবটা নাকচ করে দিয়েছে সেই তরুণী।

রাজনীতিবিদ রুমমেট

এই শ্রেণির রুমমেটদের চুল সাধারণত বড় হয়। শার্ট বা টি-শার্টের চেয়ে পাঞ্জাবি পরতেই বেশি পছন্দ করে। অনেকের কাছে তারা ‘ভাই’ নামেই পরিচিত। তবে আশার কথা, এদের বেশির ভাগ সময়েই রুমে পাওয়া যায় না; মিটিং, মিছিল বা আন্দোলনে ব্যস্ত থাকে। মাঝেমধ্যে এদের কল্যাণে ফ্রি খাবারও চলে আসে রাত-বিরাতে।

দেবদাস রুমমেট

যুগের উত্তরোত্তর আধুনিকতার কারণে এখনকার দেবদাসেরা চুল বড় রাখে না। তবে চলাফেরায় খুব করে বুঝিয়ে দেয়, তারা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অত্যন্ত কষ্টের জীবন যাপন করছে। মাঝেমধ্যেই আড্ডার ফাঁকে প্রেম নিয়ে কথাবার্তা চলার সময় তারা প্রেমের অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানসমৃদ্ধ বুলি ঝাড়তেও ভোলে না। এদের কম্পিউটার বা ফোনের প্লে-লিস্ট ঘাঁটলে সব দুঃখের গানই খুঁজে পাওয়া যায়।

রোমিও রুমমেট

দেবদাসদের ঠিক বিপরীত চরিত্রের অধিকারী এরা। এদের হৃদয় আটলান্টিক মহাসাগরের চেয়েও গভীর বলে কোনো নারীকেই ফিরিয়ে দিতে পারে না। এ ধরনের রুমমেট প্রেমের উপকারিতা, কোন ধরনের মেয়ে কেমন হয়, কেমন মেয়ের সঙ্গে প্রেম করলে প্রেম টেকার সম্ভাবনা আছে—সবকিছু বলে দিতে পারে এক বসাতেই। পোশাক-আশাক, প্রসাধনসামগ্রী, মোবাইল ফোন এবং ফেসবুক ব্যবহারের বহর দেখলেও সহজে এদের চেনা যায়।

বাড়িমুখো রুমমেট

যেকোনো সরকারি ছুটির আগের রাত থেকেই এদের আর দেখা পাওয়া যায় না। শহরের যান্ত্রিকতা ও ব্যস্ততাকে বিদায় দিয়ে সুযোগ পেলেই গ্রামের দিকে যাত্রা করে এরা। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, ‘অনেক দিন পর বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা, দোয়া কোরো ফ্রান্স!’ দুদিন আগে বাড়ি থেকে ঘুরে এলেও একই কথা বলবে এরা।

আগামীকাল পড়ুন ‘আপনার রুমমেটও কি এ রকম? (দ্বিতীয় পর্ব)’