যাপিত রম্য

আপনার রুমমেটও কি এ রকম? (দ্বিতীয় পর্ব)

মেস বা হল-জীবনে আমাদের রুমমেট হয় কে? উত্তরে ছারপোকার নাম ওপরের দিকে থাকবে। তবে মানুষের উপস্থিতি তো অস্বীকার করতে পারবেন না কেউই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে একই ছাদের নিচে কাটাতে হয় অনেকগুলো দিন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের চলাফেরা, আচার-আচরণেও থাকে ভিন্নতা। রুমমেটদের বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করল ‘একটু থামুন’, মিলিয়ে দেখতে পারেন নিজের সঙ্গে...

আঁকা: রাজীব

লেখক বা কবি ধাঁচের রুমমেট

দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে চরম মাত্রার উদাসীন। মাঝেমধ্যেই পড়তে বসে উদাস হয়ে যায় এবং খাতার পেছনের পৃষ্ঠায় রচনা করে ফেলে কোনো সনেট অথবা উচ্চমার্গীয় কবিতা। কি-বোর্ড কাঁপিয়ে লিখে ফেলে হাজার শব্দের গল্প। বাস্তবতা বলে, এই শ্রেণির রুমমেটদের স্বরচিত কবিতা বা গল্প কখনোই চেখে দেখে না তাদের রুমমেটরা।

শো-অফ প্রিয় রুমমেট

নিজেকে বন্ধু মহলে তুলে ধরতে এই শ্রেণির রুমমেটের জুড়ি নেই। স্থান, কাল, পাত্রবিশেষে তারা কিঞ্চিৎ চাপাবাজও হয়। হাতে বেশ কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে সশব্দে রুমে প্রবেশ করেই এরা দাবি করে, ‘দোস্ত, এই শার্টটা কিনলাম এক বিদেশি ব্র্যান্ডের দোকান থেকে। দাম তিন হাজার নিছে। ভালো হইছে না?’ অথচ গত সপ্তাহে একই শার্ট দেড় শ টাকায় দরাদরি করে এসেছেন আপনি।

আধিপত্য বিস্তার করা রুমমেট

নতুন শার্ট বা টি-শার্ট কিনে এনে এই শ্রেণির রুমমেটদের কাছে লুকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় উচ্চতর বিদ্যা অর্জনের। কারণ, টি-শার্ট বা শার্ট যারই হোক, তার ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার অধিকার এরা রাখে সব সময়। ক্ষেত্রবিশেষে আবেগপ্রবণ হয়ে যায় এরা।

অতিব্যস্ত রুমমেট

সব সময় ব্যস্ত না থাকলেও ব্যস্ত থাকার ভান করতে পটু অতিব্যস্ত শ্রেণির রুমমেটরা। পেছনের কারণ খুঁজলে পাবেন ২ বছর ১০ মাস আগে আপনার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল এবং সেই থেকে তারা ব্যস্ত হয়ে গেছে। তা ছাড়া আপনার কাছ থেকে বই বা নোট নিয়েছিল, ব্যস্ততার কারণে আপনাকে সেটা ফেরত দিতে পারছে না। ভুল বোঝার কিছু নেই, হারিয়ে ফেলা বই বা নোট খুঁজতেই তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকে।

শুচিবাইগ্রস্ত রুমমেট

এ ধরনের রুমমেট ভাগ্যে থাকলে কখনো কখনো নিজেকে ভাগ্যবান আবার অভাগা মনে হয়। নিজের বিছানা ও জিনিসপত্র অত্যন্ত যত্নে ব্যবহার করার পাশাপাশি আপনাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে জ্ঞান দিতে থাকবে এবং কথার অবাধ্য হলে ঝাড়ি দিতে কার্পণ্য করবে না এতটুকুও।

মুভিখোর রুমমেট

এরা নিশাচর। রাত জেগে সিনেমা দেখে। বাংলা, হিন্দি, তামিল, আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, হিব্রু—এমন কোনো ভাষার সিনেমা নেই, যা তারা দেখবে না। আর সদ্য মুক্তি পাওয়া সিনেমা হলে তো কথাই নেই। ব্যাঙ কাটাকুটির মতো চলবে ব্যবচ্ছেদ। বাকিরা উৎসাহ না পেলেও এই আলোচনা-সমালোচনা চলবেই। কোন সিনেমার কোন অংশ নকল, অমুক সিনেমার তমুক অংশ এ রকম না হয়ে ও রকম হলে ভালো হতো—এ ধরনের গবেষণা তো আছেই।

সর্বভুক রুমমেট

ভোজনবিলাসী এই রুমমেটরা সবই খায়। বন্ধু মহলে খাদ্যচক্রের প্রতি স্তরের খাদক হিসেবে এরা বিশেষ বিশেষ পদবি অর্জন করে। অন্যদের খাবার সাবাড় করে মায়াবী হাসি দিতেও এরা বিশেষ পটু। এরা সাইজে একটু ‘অসাধারণ’ হয়। এরা শুধু একাই লিফটে উঠতে পারে। বিছানা বা বসার জায়গার বেলায় এদের অভিধানে ‘শেয়ার’ নামে কোনো শব্দ থাকে না।