অফিসের জন্য যে আপনি জীবন দিয়ে দিচ্ছেন, তা প্রমাণ করতে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলুন। এগুলো মানলে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপমুক্ত থাকবেন। তবে এসব নিয়ম হাওয়া থেকে পাওয়া নয়, অনেকে ইতিমধ্যে নিয়মগুলো প্রয়োগ করে বেশ ভালো আছেন...
যাঁরা হাতে সব সময় একটা কাগজ বা ট্যাব রাখেন, তাঁদের দেখলেই পিঁপড়ার কথা মনে পড়ে। মানে পিঁপড়ার মতো পরিশ্রমী মনে হয়। তাই অফিসের সহকর্মীদের কাছে কাজের চাপ বোঝাতে হাতে কিছু কাগজ বা ট্যাব রাখুন। অফিসের পাশাপাশি বাসার পরিবেশও ঠিক রাখতে চাইলে একগাদা কাগজের বোঁচকা বেঁধে বাসায় ফিরতে পারেন। আপনার পরিশ্রমী স্বভাব সম্পর্কে ঘরে-বাইরে কোথাও কারও কোনো সন্দেহ থাকবে না।
কম্পিউটারে সারা দিন অকাজ করলেও বোঝা মুশকিল। ফেসবুকে বুঁদ থাকলেও দেখে মনে হয়, এই লোক ছাড়া পুরো অফিস যেন অচল। তিনি অফিসে যোগ দেওয়ার আগে অফিস কীভাবে চলছিল, সেটা নিয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছা করে। অবশ্য এই ফাঁকিবাজিটা অফিসের কর্তার চোখে পড়তে বেশি দিন না–ও লাগতে পারে। তার জন্য প্রস্তুত থাকুন। বমাল ধরা পড়লে কর্তাকে বোঝান, অফিসের জন্য দরকারি নতুন এক সফটওয়্যার নিজে নিজেই শেখার চেষ্টা করছিলেন। অফিসের টাকায় প্রশিক্ষণ না নিয়ে কত টাকা বাঁচিয়ে দিলেন!
অফিসের কর্তার টেবিল সব সময় পরিষ্কার থাকতে পারে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অন্যদের টেবিল পরিষ্কার থাকা মানে তাঁরা নিশ্চয়ই কোনো কাজ করেন না। তাই টেবিলে ফাইল বা কাগজের স্তূপ বানিয়ে রাখুন। এটা নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার আয়োজনও করতে পারেন। কাউকে আপনার টেবিলের দিকে আসতে দেখলে ফাইলের পাহাড় থেকে কয়েকটি ফাইল নামিয়ে তন্নতন্ন করে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করুন। কী খুঁজবেন, সেটা আপনার ব্যাপার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যস্ত লোকের মধ্যে সব সময় অধৈর্য আর বিরক্তির ভাব থাকে। তাই আপনার মধ্যেও এ ধরনের একটা ভাব ফুটিয়ে রাখুন। তাতে অফিসের কর্তার আর বুঝতে কোনো সমস্যা হবে না। অবশ্য তার আগে বিশেষজ্ঞদের কথাটা একটু জানিয়ে রাখতে পারেন।
চেষ্টা করুন সবার শেষে অফিস থেকে বের হতে। বিশেষ করে কর্তা অফিসে থাকলে নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে অফিস ত্যাগ করাই ভালো। এ সময়টা ফেসবুকিং করে, ইউটিউব বা টিকটক দেখে কাটিয়ে দিতে পারেন। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় কর্তাকে নিজের চেহারাটা একবার দেখাতে ভুলবেন না।
মাসে অন্তত চার বার প্রচণ্ড মাথাব্যথার অভিনয় করুন। কেবল অভিনয় করলেই হবে না; কর্তাব্যক্তিদের শুনিয়ে শুনিয়ে সহকর্মীদের কাছে পেইন কিলার ট্যাবলেট আছে কি না, জানতে চান। বিষয়টি আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পেইন কিলার ট্যাবলেটের সঙ্গে গ্যাসট্রিকের ওষুধও চাইতে পারেন। এ ছাড়া কিছুক্ষণ পর পর চোখে পানি দিয়ে আশপাশের সবাইকে বোঝান যে একটানা কাজ করতে করতে আপনার চোখ ভীষণ ক্লান্ত।
গুরুত্বপূর্ণ অফিশিয়াল ই-মেইল অফিস সময়ের বাইরে পাঠান (যেমন, রাত ৯টা ৩৫ মিনিট বা ১০টা ৮ মিনিট)। মনে রাখবেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো এসব কাজের জন্য উত্তম। এতে অফিসের নির্ধারিত সময়ের পরও যে আপনি কাজ করেন, তা প্রমাণিত হবে।
টেবিলে কাগজপত্র ও ভারী খটোমটো বিষয়ের বই রাখার পাশাপাশি টেবিলের পাশের মেঝেতে কিছু বই ছড়িয়ে রাখুন। এ ক্ষেত্রে ওপরের দিকে নীলক্ষেতের নাদুসনুদুস পাইরেটেড বই এবং নিচের দিকে ম্যানুয়াল–টাইপের বইগুলো উত্তম।
মাঝেমধ্যে প্রযুক্তি এবং ব্যবসাসংক্রান্ত কঠিন কঠিন কিছু শব্দ শিখে ফেলার চেষ্টা করুন। এবং অবশ্যই ইংরেজি শব্দ। সেখান থেকে সবচেয়ে কঠিন ও জটিল শব্দগুলো বেছে নিয়ে মুখস্থ করে ফেলুন। কর্তা বা সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই শব্দগুলো উগরে দিন। নিশ্চিত থাকুন, আপনার কর্তা শব্দগুলোর অর্থ না বুঝলেও মুগ্ধ হবেন। দেয়ার ইজ নো ডাউট!
আপনার অফিসের কর্তাকে এই লেখা পড়তে দেবেন না। তাহলে সব মাঠে মারা যাবে।