সাফল্যের সূত্র

অফিসে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে অ্যারিয়ানা যে ফল পেয়েছিলেন

অনলাইন নিউজপোর্টাল হাফিংটন পোস্ট-এর সম্পাদক হিসেবেই মূলত পরিচিত অ্যারিয়ানা হাফিংটন। ২০১৬ সালে হাফিংটন পোস্ট ছেড়েছেন তিনি। এখন তাঁর ব্যস্ততা লেখালেখি ও থ্রাইভ গ্লোবাল নামের নতুন প্রকল্প নিয়ে। গ্রিক-আমেরিকান অ্যারিয়ানার জন্ম ১৯৫০ সালের ১৫ জুলাই। টাইম ম্যাগাজিনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জনের তালিকায় নাম ছিল তাঁর। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কলেজের সমাবর্তনে বক্তব্য দেওয়ার সময় পরিবার, অফিস, সাফল্য, ক্যারিয়ার, জীবনযাপন এবং দর্শন নিয়ে চমৎকার কিছু কথা বলেছেন তিনি। এখানে পড়ুন উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ...

অ্যারিয়ানা হাফিংটন
টুইটার থেকে

১.

আমাদের সমাজে সাফল্য বলতে প্রধানত দুটো জিনিসকেই বোঝানো হয়: অর্থ ও ক্ষমতা। এমনকি সাফল্য, অর্থ ও ক্ষমতা—এই তিনটি শব্দ আজকাল প্রায় সমার্থক হয়ে পড়েছে। কিন্তু অর্থ ও ক্ষমতার বাইরেও আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে। আমরা এমন সাফল্য চাইব, যার মধ্যে থাকবে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, জ্ঞান ও বিবেক, জীবনের প্রতি কৌতূহল ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা। শুধু অর্থ আর ক্ষমতা দুই পায়ের একটি টুলের মতো, এর ওপর ক্ষণিকের জন্য ভারসাম্য বজায় রাখা যায় কিন্তু একসময় তুমি ঠিকই উল্টে পড়বে। অসংখ্য সফল মানুষ এভাবেই উল্টে পড়েছেন, এখনো পড়ছেন। সাফল্যকে আমরা যেভাবে এত দিন ব্যাখ্যা করে এসেছি, তা আর গ্রহণযোগ্য নয়। সময় এসেছে জীবনকে নতুন চোখে দেখার।

২.

আমার মাকে দেখেছি সারাক্ষণ কৌতূহলী চোখে জীবনকে উপভোগ করছেন, তিনি রান্নাঘরে বাসন ধোয়ার সময়ই হোক আর সাগরপারে শঙ্খচিলদের খাওয়ানোর সময়ই হোক। জীবনের ছোট ছোট জিনিস থেকে শুরু করে এই মহাবিশ্বের নানা রহস্য—সবকিছুই তাঁকে সমানভাবে মোহিত করে রাখত। আমি যখন কোনো ব্যাপার নিয়ে অভিযোগ করতাম বা মন খারাপ করে থাকতাম, মা বারবার আমাকে একটি উপদেশ দিতেন; বলতেন, ‘মা, চ্যানেলটা বদলে দাও। রিমোট তো তোমার নিজের হাতেই। ভয়ের ছবি আবার দেখার কী দরকার।’

অ্যারিয়ানার লেখা ‘দ্য স্লিপ রেভল্যুশন: ট্রান্সফরমিং ইয়োর লাইফ, ওয়ান নাইট অ্যাট আ টাইম’ বইটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে

৩.

মারা যাওয়ার আগে শেষবার মা আমার সঙ্গে রাগ করেছিলেন, যখন আমি একই সঙ্গে ই-মেইল পড়ছিলাম আর আমার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। মা রেগে বলেছিলেন, ‘আমি একসঙ্গে একের বেশি কাজ করা দুই চোখে দেখতে পারি না।’ সত্যিই তো, সারা পৃথিবীর সবকিছুর সঙ্গে ভাসা ভাসাভাবে যুক্ত থাকতে গিয়ে আমরা সবচেয়ে আপনজনদের কাছ থেকে হারিয়ে যাই, এমনকি নিজের কাছ থেকেও। আমি বলছি না প্রযুক্তি থেকে নিজেদের একদম বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। কিন্তু নিয়মিত, প্রয়োজন অনুসারে আমাদের যান্ত্রিকতাকে সরিয়ে রেখে নিজেদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। শুধু তার লাগিয়ে আমাদের যন্ত্রগুলোকে রিচার্জ করলে হবে না, তার খুলে রেখে আমাদের নিজেদেরও মানসিকভাবে রিচার্জ করে নিতে হবে।

৪.

ঘুমানোর ব্যবস্থা করে অফিসের চেহারাই বদলে দিয়েছিলেন অ্যারিয়ানা

২০০৭ সালে নিদ্রাহীন, পরিশ্রান্ত শরীরে আমি ডেস্কের ওপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার মাথায় আঘাত লেগেছিল, গালের হাড় ভেঙে গিয়েছিল, ডান চোখের ওপর চারটা সেলাই দিতে হয়েছিল। নিদ্রাহীনতা যে শুধু শরীরের ক্ষতি করে তা নয়, এর ফলে তোমার সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা—সবকিছুতেই প্রভাব পড়ে।
নিউইয়র্কে হাফিংটন পোস্ট-এর অফিসে দুটো রুম আছে শুধু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। প্রথম প্রথম আমাদের সাংবাদিক, সম্পাদক ও প্রকৌশলীদের কেউ–ই রুমগুলো ব্যবহার করতে চাইতেন না। তাঁরা ভাবতেন অন্যরা মনে করবেন কাজ ফাঁকি দিয়ে অফিসে এসে ঘুমানো হচ্ছে! অতঃপর আমরা অফিসের পরিবেশটা এমনভাবে বদলে ফেলেছি, যাতে বিশ্রাম নেওয়া নয়, বরং বিধ্বস্ত শরীরে হেঁটে বেড়ানোকেই বাঁকা চোখে দেখা হয়। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে এখন রুম দুটো খালি পাওয়াই মুশকিল!