৮০তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামল গত শনিবার। হলিউডের চলমান ধর্মঘটের কারণে এবারের উৎসব ছিল প্রায় তারকাবিহীন। তবে জৌলুশহীন উৎসবেও আলোচনা হয়েছে সিনেমা নিয়ে, সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বেশ কয়েকটি ছবি।
না থেকেও প্রবলভাবে ছিলেন এমা
‘সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র ইসাবেলা ব্যাক্সটার এক দুর্দান্ত সৃষ্টি, এমা স্টোন ছাড়া চরিত্রটি পর্দায় তুলে ধরা সম্ভব হতো না। এটি আসলে তাঁরই সিনেমা—ক্যামেরার সামনে ও ক্যামেরার পেছনে,’ ভেনিস উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণসিংহ (গোল্ডেন লায়ন) জেতার পর এভাবেই সিনেমার প্রধান অভিনেত্রী এমা স্টোনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন পরিচালক ইয়োর্গস লান্থিমোস। উৎসবে সেরা সিনেমা হয়েছে তাঁর ‘পুওর থিংস’। আগে থেকেই স্বর্ণসিংহ জেতার দৌড়ে এগিয়ে ছিল গ্রিক পরিচালকের নতুন সিনেমাটি। শেষ পর্যন্ত ড্যামিয়েন শ্যাজেলের নেতৃত্বাধীন জুরিবোর্ড বেছে নিয়েছে এমা স্টোন অভিনীত সিনেমাটিকেই। ছবিটির অন্যতম প্রযোজকও এমা।
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী অবশ্য হলিউডের চলমান ধর্মঘটের কারণে ভেনিসে আসতে পারেননি। তারপরও পরিচালক, সমালোচক থেকে সাধারণ দর্শকের মুখে মুখে ফিরেছে তাঁর নাম। যার শুরুটা ১ সেপ্টেম্বর, ভেনিসে সিনেমাটি প্রিমিয়ারের পর থেকেই। প্রদর্শনীর পর আট মিনিট স্ট্যান্ডিং ওভেশন পায় সিনেমাটি। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটির প্রেক্ষাপট ভিক্টোরিয়ান যুগে নারী স্বাধীনতা। প্রিমিয়ারের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে সিনেমাটিতে থাকা কিছু খোলামেলা দৃশ্য।
এমা স্টোনের মতো হলিউডের প্রথম সারির তারকার পর্দায় এসব দৃশ্যে অভিনয় চমকে দিয়েছে খোদ সমালোচকদেরও। তখন এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা বলেছিলেন, ‘নগ্নতা এ সিনেমার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, এমাকে নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ওকে এ সম্পর্কে বলার পর উত্তর দেয়, পর্দায় বেলার জন্য সবকিছু করতে সে প্রস্তুত।’ ইয়োর্গস লান্থিমোস ইতিহাস-আশ্রিত সিনেমা বানান। অস্কারজয়ী দ্য ফেবারিট-এর পর এবার তিনি উপহার দিলেন পুওর থিংস।
হামাগুচির জয়রথ চলছেই
ড্রামা সিনেমা তৈরির জন্য সুনাম আছে জাপানি পরিচালক রিউসকে হামাগুচির। হলিউড সিনেমার পাঁড় ভক্ত এই নির্মাতার কাজে জন ক্যাসাভেটিজের প্রভাব দেখা যায়। ২০১৫ সালে ‘হ্যাপি আওয়ার’ দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান তিনি। তাঁর আরেকটি সিনেমা ‘হুইল অব ফরচুন অ্যান্ড ফ্যান্টাসি’ বার্লিন উৎসবে রৌপ্য ভালুক জেতে।
২০২১ সালে ‘ড্রাইভ মাই কার’ তো অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমা নির্বাচিত হয়। সেই হামাগুচি এবার ভেনিসে এসেছিলেন ‘ইভিল ডাজ নট এগজিস্ট’ নিয়ে। সিনেমাটির জন্য উৎসবের দ্বিতীয় সেরা পুরস্কার রৌপ্য সিংহ জিতেছেন তিনি। ছবিটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সমালোচকদের পুরস্কার ফিপরেস্কিও জিতেছে। ভেনিসে পুরস্কার জেতার পর নির্মাতা বলেন, প্রজেক্টটি শুরুর সময় কখনোই ভাবেননি এটি তাঁকে ভেনিসে স্বীকৃতি এনে দেবে। এ ছাড়া তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান, সিনেমাটির আবহসংগীত পরিচালক এইকো ইসিবাসিকে।
মাত্তেওর স্বীকৃতি
আগে সেরা পরিচালক হিসেবে ইউরোপিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন মাত্তেও গারোনে। তাঁর সিনেমা কান উৎসবে স্বর্ণপামে লড়েছে, গ্রাঁ পি জিতেছে। এবার নিজের দেশের উৎসবে সেরা পরিচালক হলেন তিনি। নতুন সিনেমা ‘আইয়ো ক্যাপিটানো’র জন্য ভেনিসে সেরা নির্মাতা হয়েছেন মাত্তেও। সিনেমার গল্প সেনেগালের টিনএজারদের নিয়ে। ইউরোপ পৌঁছাতে আফ্রিকা পাড়ি দেওয়ার অবিশ্বাস্য গল্প পর্দায় তুলে এনেছেন মাত্তেও।
কেইলির বাজিমাত
এলভিস প্রিসলির সাবেক স্ত্রী প্রিসিলা প্রিসলির জীবন ও গায়কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে নতুন সিনেমা প্রিসিলা। বানিয়েছেন সোফিয়া কপোলা। সেই সিনেমায় প্রিসিলা চরিত্রে অভিনয় করে ভেনিসে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন কেইলি স্পেনসি। পুরস্কার গ্রহণ করে ২৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী বলেন, ‘প্রিসিলা ভীষণ জটিল এক চরিত্র। তাঁর মতো একজন ব্যক্তিত্বের চরিত্রে অভিনয় আমার জন্য যেমন বড় সুযোগ, একই সঙ্গে বড় দায়িত্বও বটে। তাই এই পুরস্কার আমার জন্য বিশেষ কিছু।’
ভেনিসে ছবিটি প্রিমিয়ারের পর থেকেই প্রশংসিত হচ্ছেন এই তরুণ অভিনেত্রী। এই পুরস্কার জয় তাঁর ক্যারিয়ারকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল। সেরা অভিনেতার ক্ষেত্রে অবশ্য চমক নেই, ‘মেমোরি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এটি জিতেছেন পিটার সার্সগার্ড। পুরস্কার জয়ের পর দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সিনেমার চেয়ে ধর্মঘট নিয়েই বেশি কথা বলেন অভিনেতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এই যুদ্ধে হেরে যাই, অনেক কিছুই ধসে পড়বে, সবচেয়ে আগে পড়বে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি।’
নিরুত্তাপ ভেনিস
লালগালিচায় নেই তারকাদের ছড়াছড়ি, ছবি তোলার জন্য নেই আলোকচিত্রীদের ভিড়—একরকম নিরুত্তাপভাবে শেষ হলো ভেনিস উৎসব। গত ৩০ আগস্ট শুরু হওয়া এই উৎসবে মূলত ইতালীয় ও ইউরোপিয়ান কিছু অভিনয়শিল্পীকে দেখা গেছে। ব্যতিক্রম বলতে দুই হলিউড তারকা জেসিকা চ্যাস্টেইন ও অ্যাডাম ড্রাইভার। ভেনিসে হাজির হয়ে হলিউডের অচলবস্থার জন্য নিজেও দায় নেন জেসিকা, ‘অনেক দিন ধরেই শিল্পীরা কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, অন্যায্য চুক্তি নিয়ে কার্যত নীরব ছিলেন।’