প্রথমবার শীর্ষে নারী নির্মাতার সিনেমা

‘জেন ডিয়েলম্যান, ২৩, কোয়াই দু কমার্স ১০৮০ ব্রাক্সেলস’ সিনেমার পোস্টার
আইএমডিবি থেকে নেওয়া

১৯৫২ সাল থেকে সর্বকালের সেরা ১০০ সিনেমার তালিকা করে আসছে সাইট অ্যান্ড সাউন্ড। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের এই মাসিক সাময়িকী প্রতি দশকে একবার করে এই তালিকা করে। ২০২২ সালের তালিকা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ৬৩৯ জন সমালোচক, সংগ্রাহক। নতুন তালিকায় প্রথমবারের মতো শীর্ষে জায়গা পেয়েছে এক নারী নির্মাতার সিনেমা। একমাত্র ভারতীয় সিনেমা হিসেবে তালিকায় জায়গা পেয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’।

‘জেন ডিয়েলম্যান, ২৩, কোয়াই দু কমার্স ১০৮০ ব্রাক্সেলস’–এর পোস্টার

জেন ডিয়েলম্যান, ২৩, কোয়াই দু কমার্স ১০৮০ ব্রাক্সেলস, ১৯৭৫, শনতাল আকেরম্যান, ফ্রান্স–বেলজিয়াম

সাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর সাত দশকের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ১০০ সিনেমার তালিকায় প্রথমবার শীর্ষে জায়গা পেয়েছে নারী নির্মাতার সিনেমা। তিনি আর কেউ নন, বেলজিয়ামের নির্মাতা শনতাল আকেরম্যান। তালিকার ১ নম্বরে তাঁর ছবি ‘জেন ডিয়েলম্যান, ২৩, কোয়াই দু কমার্স ১০৮০ ব্রাক্সেলস’। কেবল নির্মাতাই নন, সিনেমাটির পেছনের সব কলাকুশলীও নারী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা (সব নারী কলাকুশলী) কার্যকর হয়নি, তাঁর কারণ সবাই নারী বলে নয়, বরং আমি তাদের নিয়োগ দিইনি বলে।’
এক বিধবা নারীর যৌনকর্মী হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে এই সিনেমা। নির্মাতা সিনেমাটিকে তাঁর ‘মায়ের প্রতি ভালোবাসা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কেবল এই তালিকাই নয়, গত কয়েক বছরে করা বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় ওপরের দিকে থাকে এই সিনেমা। যত দিন যাচ্ছে, ছবিটির আবেদন যেন ততই বাড়ছে। এই সাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এরই ২০১২ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ তালিকায় শনতালের সিনেমাটি ছিল ৩৫ নম্বরে। এক দশক পর উঠে এল শীর্ষে।

৬৫ বছর আগে মুক্তি পাওয়া সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ভার্টিগোর আবেদন যে এখনো ফুরায়নি

ভার্টিগো, ১৯৫৮, আলফ্রেড হিচকক, যুক্তরাষ্ট্র

প্রায় ৬৫ বছর আগে মুক্তি পাওয়া সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারটির আবেদন যে এখনো ফুরায়নি, এই তালিকা তার প্রমাণ। অথচ মুক্তির পর বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ছবিটি, সমালোচক প্রতিক্রিয়াও ছিল মিশ্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ক্ল্যাসিক মর্যাদা পেয়েছে জেমস স্টুয়ার্ট, কিম নোভাক অভিনীত সিনেমাটি। সাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর সর্বশেষ তালিকায়ও শীর্ষে ছিল ‘ভার্টিগো’। যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত ২৫ সিনেমার একটি এটি।

‘সিটিজেন কেইন’–এর দৃশ্য

সিটিজেন কেইন, ১৯৪১, অরসন ওয়েলস, যুক্তরাষ্ট্র

১৯৬২, ’৭২, ’৮২, ’৯২ ও ২০০২ সালে সাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর প্রকাশিত ১০০ সিনেমার তালিকায় শীর্ষে ছিল সিটিজেন কেইন। অনেকেই এটিকে সর্বকালের সেরা সিনেমাও বলে থাকেন। কেবল এ জরিপ নয়, সিনেমা নিয়ে প্রায় সব জরিপেই ওপরের দিকেই থাকে এই সিনেমা। নিজের নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমাটির নায়কও অরসন।

‘টোকিও স্টোরি’ সিনেমার দৃশ্য

টোকিও স্টোরি, ১৯৫৩, ইয়াসিজিরো ওজু, জাপান

টোকিওতে বসবাসরত সন্তান ও নাতি–নাতনিদের দেখতে আসা বয়োজ্যেষ্ঠ এক দম্পতির গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পাবে, শুরুতে অনেকে ভাবতে পারেননি। জাপানের সমালোচকেরা মনে করেছিলেন, গল্পটি খুব বেশি ‘স্থানীয়’। ১৯৫৭ সালে লন্ডন ও ১৯৭২ সালে নিউইয়র্কে প্রদর্শনীর পর সিনেমাটির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে, পায় সর্বকালের অন্যতম সেরা সিনেমার তকমা।

`ইন দ্য মুড ফর লাভ'-সিনেমার দৃশ্য

ইন দ্য মুড ফর লাভ, ২০০০, ওং কার-ওয়াই, হংকং–ফ্রান্স

তালিকায় হংকংয়ের নির্মাতা ওং কার-ওয়াইয়ের সিনেমাটি দেখে অনেকে অবাক হতে পারেন। তবে রোমান্টিক সিনেমাটির সুখ্যাতি আগে থেকেই ছিল। ২০০০ সালের কান উৎসবে এটি স্বর্ণ পামের জন্য লড়ে, হংকংয়ের প্রথম অভিনেতা হিসেবে টনি লিউং চিউ-ওয়াই জেতেন কানে সেরা অভিনেতার পুরস্কার। ছবিটি পরিচালকের ভালোবাসা ত্রয়ীর দ্বিতীয় কিস্তি।

‘পথের পাঁচালী’ ছবির দৃশ্য

এবং পথের পাঁচালী, ১৯৫৫, সত্যজিৎ রায়, ভারত

তালিকায় ভারতের একটিমাত্র সিনেমা ‘পথের পাঁচালী’, ৩৫ নম্বরে আছে। কিছুদিন আগে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকসের ‘ইন্ডিয়া চ্যাপ্টার’ও একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেখানেও সর্বকালের সেরা ভারতীয় সিনেমা হিসেবে ‘পথের পাঁচালী’কে বেছে নেন সমালোচকেরা।

তালিকার সেরা দশের বাকি পাঁচ সিনেমা হলো স্ট্যানলি কুবরিকের ‘২০০১: আ স্পেস ওডিসি’, ক্লেয়ার ডেনির ‘বো ট্র্যাভিল’, ডেভিড লিঞ্চের ‘মুলহল্যান্ড ড্রাইভ’, জিগা ভের্তভের ‘ম্যান উইথ আর মুভি ক্যামেরা’ ও জিন কেলি–স্টেনলি ডোনেনের ‘সিংগিন ইন দ্য রেইন’।