‘খোয়াব: ক্যাসেল ইন দ্য এয়ার’ এর একটি দৃশ্য
‘খোয়াব: ক্যাসেল ইন দ্য এয়ার’ এর একটি দৃশ্য

জামদানি তাঁতির সংগ্রামের গল্প ‘খোয়াব’, জাপানে আমন্ত্রিত

গল্পটা জামদানির তাঁতির। চলচ্চিত্রটি আবর্তিত হয় কাঞ্চন নামের একজন গ্রামের তাঁতিকে নিয়ে, তিনি তাঁর পরিবারের ব্যবহৃত হস্তচালিত তাঁত রাখতে চান। কারণ, এটি পূর্বপুরুষের স্মৃতি ধারণ করে; কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে তাঁকে পাওয়ারলুমে যেতে হয়। তিনি দারিদ্র্য ও বাস্তবতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁর স্বপ্নকে ধরে রাখতে সংগ্রাম করেন। একজন তাঁতির সংগ্রামকে উপজীব্য করে নির্মিত বাংলাদেশি শর্ট ফিল্ম ‘খোয়াব: ক্যাসেল ইন দ্য এয়ার’ জাপানের আন্তর্জাতিক শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ‘শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যান্ড এশিয়া ২০২৪’–এ আমন্ত্রিত হয়েছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ৪ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় উৎসবের ‘লাইভ-অ্যাকশন এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপিটিশন’ বিভাগে চলচ্চিত্রটি স্থান পেয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২০০টির বেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। ২৫ মিনিটের ‘খোয়াব: ক্যাসেল ইন দ্য এয়ার’ চলচ্চিত্রটি আগামী ১৩ জুন সন্ধ্যায় উৎসবে প্রদর্শিত হবে।

লিজা আসমা আক্তারের গল্পের ওপর ভিত্তি করে ড্রিম শ্যাডোর ব্যানারে নির্মিত ‘খোয়াব: ক্যাসেল ইন দ্য এয়ার’ পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা হেমন্ত সাদিক। চিত্রনাট্য লিখেছেন শাওন কৈরি। চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা সংস্থা ড্রিম শ্যাডোর পক্ষে ‘খোয়াব’-এর প্রযোজক ও প্রধান অভিনেত্রী লিজা আসমা আক্তার এবং পরিচালক হেমন্ত সাদিক আমন্ত্রিত হয়েছেন এ উৎসবে।

সুতা বা সুতা দিয়ে কাপড় তৈরির একটি যন্ত্র ‘তাঁত’। ডিজিটাল রূপান্তরের এই যুগে তাঁত অচল হয়ে যাচ্ছে, তার বদলে জায়গা পাচ্ছে পাওয়ারলুম। কিন্তু অনেক তাঁতির জন্য তাঁত ছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের আয়ের উৎস। সেই তাঁতগুলো ছিল তাঁদের জন্য আবেগ ও স্মৃতির গলি, যেগুলো তাঁদের পূর্বপুরুষের স্বাক্ষর বহন করে। তাঁরা কখনোই সেই চিহ্নগুলো বিক্রি করতে চান না, কিন্তু বাস্তবতা তাঁদের বাধ্য করে।

এই গল্পে কাঞ্চন নামের এক তাঁতি এই বিভ্রান্তির মুখোমুখি হন। তিনি তাঁর পারিবারিক তাঁত বিক্রি করতে চান না। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী আশা করছেন এবং তাঁদের আরও শাড়ি তৈরি করতে হবে, যা শুধু পাওয়ারলুম ব্যবহার করেই সম্ভব।

এই গল্পে কাঞ্চন নামের এক তাঁতি এই বিভ্রান্তির মুখোমুখি হন

কাঞ্চনের পূর্বপুরুষেরা স্বপ্নে এসে তাঁকে তাঁত বিক্রি না করার অনুরোধ করেন। কাঞ্চন তাঁর স্ত্রীর জন্য একটি লাল জামদানি শাড়ি তৈরি করছিলেন, যা বাজারে দামি এবং স্ত্রীর প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও অনুরাগের নিদর্শন। কিন্তু কাঞ্চন তাঁর স্ত্রীর জন্য লাল জামদানি শাড়িটি রাখতে পারেননি। মহাজন (কাপড় ব্যবসায়ী) তাঁদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের আগে জোর করে তাঁর কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে নেন। কাঞ্চন স্বপ্ন দেখতে থাকেন যে আগামী উৎসবে তিনি তাঁর স্ত্রীর জন্য লাল জামদানি তৈরি করতে পারবেন। স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।

২৫ মিনিটের ‘খোয়াব: ক্যাসেল ইন দ্য এয়ার’ চলচ্চিত্রটি আগামী ১৩ জুন সন্ধ্যায় উৎসবে প্রদর্শিত হবে

শেষ পর্যন্ত কাঞ্চন তাঁর পারিবারিক তাঁতটি বিক্রি করেন না। ছবিতে তাঁতি দম্পতির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আশীষ খন্দকার ও লিজা আসমা আক্তার। প্রযোজক ও অভিনেত্রী লিজা আসমা আক্তারের ভাষ্য, ‘এটা সত্যিই আমাদের জন্য দারুণ খবর এবং অর্জন। কারণ, “খোয়াব” মর্যাদাপূর্ণ এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে। আমি আশা করি, এটি দর্শকদের মনে ছাপ রাখবে। এর আগেও এই উৎসবে ড্রিম শ্যাডো প্রযোজিত দুটি সিনেমা “সলতে” এবং “লাইফ” প্রদর্শিত হয়েছে; যার চিত্রনাট্য লিখেছিলেন শাওন কৈরি এবং পরিচালনায় ছিলেন হেমন্ত সাদিক।’