গুরুত্ব পাবে তরুণ নির্মাতাদের সিনেমা

১৪ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ২১তম আসরে তরুণ নির্মাতাদের কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বেশি। উৎসবজুড়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা নিয়ে হাজির হবেন তাঁরা। বাংলাদেশের এতগুলো সিনেমা এই উৎসবে আগে আর প্রদর্শিত হয়নি। উৎসবে ৭০টি দেশের ২৫৪টি সিনেমা দেখানো হবে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশের ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
ভেনিস, বার্লিন, টোকিও, মস্কো, সাংহাই, বুসানসহ একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়া বিদেশি ভাষার সিনেমাগুলো এই আয়োজনের মূল আকর্ষণ। এশিয়ান শাখায় অংশ নিচ্ছে কম্বোডিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের ছবি ‘কার্মালিংক’। সিনেমাটি ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নিয়েছিল। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জ্যাক ওয়াচেল। ইরানের সিনেমা ‘দ্য অ্যাপল ডে’বানিয়েছেন মাহমুদ গফফারি। সিনেমাটি এ বছর বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছে। রাশিয়ার ‘দ্য রায়ট’, শ্রীলঙ্কার ‘দ্য নিউজপেপার’, তুরস্কের ‘দ্য ব্ল্যাক নাইট’ ছাড়াও থাকছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত একাধিক চলচ্চিত্র। সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড শাখায় চীনের সিনেমা ‘আ চ্যাট’, ফিলিপাইনের ‘ওয়াকার’, সিরিয়ার সিনেমা ‘কোবানে’, হাঙ্গেরির সিনেমা ‘সোয়াম্প লায়ন’, ব্রাজিলের সিনেমা ‘মাগোয়াদো’; সিনেমাগুলো মস্কো, তালিনসহ বিভিন্ন উৎসবে প্রতিযোগিতা ও প্রশংসিত হয়েছে। উইমেন ফিল্মমেকার শাখায় বুলগেরিয়ার সিনেমা ‘লিসেন’, ফিলিস্তিনের ‘কন্টিনিউয়াস কাভারেজ’,  ইথিওপিয়ার ‘অ্যামং আস ওমেন’সহ বেশি কিছু সিনেমা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।

স্পিরিচুয়াল শাখায় অংশ নিচ্ছে জর্জিয়ার সিনেমা ‘ক্রিম ইন মাই কফিন’। সিনেমাটি মস্কো, কাজানসহ বেশ কিছু উৎসবে অংশ নেয়। চিলড্রেন শাখায় ‘মার্টিন অ্যান্ড ম্যাজিক্যাল ফরেস্ট’ সিনেমাটি হলিডে, জুরিখসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছিল। ‘জার্নি টু ইয়োরল্যান্ড’ শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অ্যানিমেশন ফিচার ফিল্ম শাখায় পুরস্কার জিতেছিল। মেক্সিকোর সিনেমা ‘হোম ইজ সামওয়ার এলস ইডফা’, হাভানাসহ একাধিক উৎসবে পুরস্কার জয় করে।

বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছাড়াও রয়েছে ২১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা। দেশের তরুণ চলচ্চিত্রকার ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিতে দুইভাবে এই শাখায় সিনেমা জমা নেওয়া হয়। প্রথম ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের সেরা সিনেমাগুলোকে দেওয়া হবে ফিপরেস্কি জুরি পুরস্কার। আর স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার তিন তরুণ নির্মাতাকে দেওয়া হবে অর্থ। এই শাখায় জমা পড়া চলচ্চিত্রগুলোর নির্মাতাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। এই ক্যাটাগারির সিনেমাগুলোর দৈর্ঘ্য ১০ মিনিট বা তার কম। এই শাখায় প্রথম বিজয়ী পাবেন আড়াই লাখ টাকা, দ্বিতীয় দেড় লাখ ও তৃতীয় পুরস্কার এক লাখ টাকা। উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল জানান, দেশের তরুণদের সিনেমা বানানোতে উৎসাহ দিতেই প্রথমবারের মতো অর্থ দেওয়া হবে।

উৎসবে উদ্বোধনী সিনেমা ‘জেকে-১৯৭১’। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য বিমান ছিনতাই করেছিলেন ফরাসি যুবক জ্যঁ কুয়ে। সেই ঘটনা নিয়েই সিনেমাটির গল্প। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ফাখরুল আরেফিন খান। উদ্বোধনী সিনেমা হিসেবে জেকে-১৯৭১ বেছে নেওয়ার কারণ জানালেন উৎসবের পরিচালক, ‘উৎসবে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পরিচালক, প্রযোজকসহ অনেকেই থাকবেন। তাঁদের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবময় অধ্যায়। এর জন্য আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সেই গল্প বিদেশিদের সামনে তুলে ধরতে পারাটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ।’ সিনেমাটির পরিচালক ফাখরুল আরেফিন বলেন, ‘আগে আমাদের সিনেমা মুম্বাই, সিঙ্গাপুর, ইস্তাম্বুলে প্রিমিয়ার হয়েছে। দর্শক পছন্দ করেছেন। প্রশংসা পেয়েছি। এবার সেটা বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে কাছে যাচ্ছে, এটা অনেক ভালো অনুভূতি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জেকের অবদান মানুষের দেখা দরকার। তাঁকে সম্মান জানাতেই সিনেমাটি বানানো।’ পরিচালক জানান, বাংলাদেশ প্রিমিয়ারে সিনেমাটির অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীসহ আরও অনেক কলাকুশলী উপস্থিত থাকবেন।

৯টি শাখায় সিনেমাগুলো প্রদর্শিত হবে। উৎসবের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত তালিকায় আরও দেখা যায়, বাংলাদেশ প্যানোরমা শাখায় জেকে-১৯৭১ ছাড়াও আছে খন্দকার সুমনের ‘সাঁতাও’, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর ‘যা হারিয়ে যায়’, উজ্জ্বল কুমারের ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, আশুতোষ সুজনের ‘দেশান্তর’। এ ছাড়া ওয়াইড অ্যাঙ্গেল শাখায় প্রদর্শিত হবে ‘ওরা ৭ জন’। সিনেমাটির পরিচালক খিজির হায়াত খান। সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড শাখায় দেখানো হবে গত বছরের আলোচিত সিনেমা মেজবাউর রহমান সুমনের হাওয়া ও আশিক মোস্তফার ‘থার্টি ফাইভ’।

এই আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো স্ক্রিন প্লে ল্যাবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর তরুণ নির্মাতাদের কাছে চিত্রনাট্য চাওয়া হয়েছিল। ৮০টির মতো চিত্রনাট্য জমা পড়ে। তার মধ্যে ১০টি বাছাই করা হয়েছে। কর্মশালার মাধ্যমে সেরা ৩টি চিত্রনাট্যকে দেওয়া হবে যথাক্রমে ৩ হাজার, ২ হাজার ও ১ হাজার ডলার পুরস্কার। এই শাখায় বাংলাদেশি নির্মাতাও রয়েছেন।
উৎসবের প্রধান শাখাগুলোর মধ্যে একটি এশিয়ান কমপিটিশন শাখা; এতে দেখানো হবে ২৩টি সিনেমা। এ ছাড়া ওয়াইল্ড অ্যাঙ্গেল শাখায় ১১টি, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড শাখায় ৪৫, বাংলাদেশ প্যানারোমা শাখায় ২৯, উইমেন ফিল্মমেকার শাখায় ২৩, স্পিরিচুয়াল ফিল্ম শাখায় ১৪ ও চিলড্রেন ফিল্ম শাখায় ১৮টি সিনেমা দেখানো হবে। শর্ট ও ইন্ডিপেনডেন্ট শাখায় ৮৪টি পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি দেখানো হবে। রেট্রোস্পেকটিভ শাখায় ফ্রান্সের বিখ্যাত পরিচালক ফ্রঁসোয়া ত্রুফোর ‘দ্য ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ’সহ চারটি সিনেমা দেখানো হবে।
উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, এশিয়ান ইন্ডিপেনডেন্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা বা উইমেন ফিল্মমেকার শাখাসহ সব শাখায় দর্শক সিনেমার বৈচিত্র্য পাবেন। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, স্টার সিনেপ্লেক্সসহ বেশ কিছু ভেন্যুতে সিনেমাগুলো দেখানো হবে। ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে উৎসব।