তারাই এখন অন্য চোখে তাকায়

জি। এটা নিয়ে আমি একটু বিব্রত।

গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। সরাসরি অনুষ্ঠানে কথা বলতে গেলে বেশি ঝামেলা হয়।

৩০ তারিখ আমার ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার।

শুধু ছবির প্রদর্শনী নয়, আগে কখনো দেশের বাইরেই যাইনি।

জি। আগে তো পাসপোর্টই ছিল না।

না। এবারের ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে আমার ছবিটি শর্টলিস্টে ছিল। মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তখন করিয়েছি।

জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। ২৩ বা ২৪ তারিখ হবে, মনে নেই।

অনেক দিন হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। শোনার পর মনে হয়েছিল সেটা থেকে মুক্তি পেলাম। ছবি বানানোর পর কাউকে সেভাবে বলতে পারছিলাম না, হতাশা তৈরি হয়েছিল। উৎসবে জায়গা পাওয়ায় মানসিকভাবে স্বস্তি পেয়েছি।

ওরা তো প্রথমে বিশ্বাস করেনি। যখন প্রথম আলোসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলো, তখন ওরা ভীষণ খুশি হয়েছে।

সবাই এখন আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আগে অনেকে হাসাহাসি করত—কী সব বানাচ্ছে, বস্তিতে থাকছে...এসব বলত। কিন্তু তারাই এখন অন্য চোখে তাকায়।

পুলিশ বস্তিতে নিয়মিত তল্লাশি চালায়। একবার তেমনই এক অভিযানে আমাকে আটক করে। আমি যার সঙ্গে কথা বলছিলাম, তার কাছে মাদক পাওয়া যায়। তখন আমাকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে বস্তির মানুষজন পাশে দাঁড়ায়। ওরা পুলিশকে বুঝিয়ে ছাড়িয়ে আনে।

তা তো দিয়েছেই। কত রকমের মানুষ, কতভাবে যে বাধা দিয়েছে, বলে শেষ করা যাবে না।

আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধি দেয় এলাকার সংসদ সদস্যের সঙ্গে ছবি তুলে ঘরে টানিয়ে রাখতে। এটা করে ভালো ফল পেয়েছিলাম। ‘প্রভাবশালী’ ভেবে কেউ ঘাঁটায়নি। এ ছাড়া আমার আগের বিভিন্ন কাজের ছবি, ছোটখাটো পুরস্কার বস্তিতে যে ঘরে থাকতাম, সেখানে রেখেছিলাম, যাতে মানুষ বিশ্বাস করে, আমি আসলেই নির্মাতা।

কতবার যে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। রাতের পর রাত ফেসবুকে সিনেমার শেয়ার বিক্রির পোস্ট দিয়েছি। কখনো কেউ সাড়া দেয়নি, কখনো অপ্রত্যাশিতভাবে সাড়া পেয়েছি।

অনেক খুশি। মস্কোর সঙ্গে তো আমাদের দেশের পুরোনো সম্পর্ক। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস থেকে নির্মিত ছবি জাগো হুয়া সাভেরা প্রথম মস্কো উৎসবে দেখানো হয়। কাকতালীয়ভাবে আমিও তাঁর প্রাগৈতিহাসিক গল্পটি পড়ার পর আদিম-এর অনেক ভাবনা পাই।

জি, যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া—সব ওরাই ব্যবস্থা করেছে।

কর্তৃপক্ষ বলেছে উৎসব শেষ হওয়ার আগে না ফিরতে। দেখা যাক।