১৯৯৬ সালের গল্প। সেই গল্প দিয়েই ইরানের সমাজব্যবস্থার একটি চিত্র দেখিয়েছেন পরিচালক আলী আহমদ। সে সিনেমা সম্প্রতি শেষ হওয়া ৭৬তম লোকার্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু আগে থেকেই ইরান সরকারের বাধার মুখে উৎসবে যেতে পারেননি পরিচালক। শুধু তাই নয়, সিনেমাটি নিয়ে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে পরিচালক, প্রযোজক ও ডিস্টিবিউটরদের। পুরস্কার প্রাপ্তির পর ইরান থেকে পরিচালক ভিডিওতে সিনেমাটি নির্মাণসহ নানা প্রসঙ্গে আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলেন।
‘ক্রিটিক্যাল জোন’ নামের এই সিনেমা সুইজারল্যান্ডের গুরত্বপূর্ণ উৎসবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার খবর প্রকাশের পর থেকেই বাধার মুখে পড়েন এর প্রযোজক ও পরিচালক। তাঁদের বিভিন্নভাবে ই–মেইলে হুমকি দেওয়া হয়। উৎসব কর্তৃপক্ষকেও ইরান সরকারের পক্ষ থেকে সিনেমাটি স্ক্রিনিং থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তাদের একটাই বার্তা ছিল, উৎসব থেকে সিনেমাটি সরিয়ে ফেলা। ডেডলাইন সূত্রে আরও জানা যায়, ইরান সরকার মনে করছে দেশকে ছোট করা হয়েছে ‘ক্রিটিক্যাল জোন’ নামের এই সিনেমায়। একই সঙ্গে সিনেমায় যে নারীদের ক্ষমতা, মাদক, অবাধ জীবনযাপন ও স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, সেটা ইরানের সমাজব্যবস্থার সঙ্গে কোনোভাবেই মানানসই নয়।
আলী আহমদের ক্যারিয়ারের এটি চতুর্থ সিনেমা। এবার ‘ক্রিটিক্যাল জোন’ এই সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে, তেহরানের অন্ধকার জগতের গল্প। আমির নামের এক ড্রাগ ডিলারকে দিয়েই গল্প শুরু হয়। যে গল্পে উঠে এসেছে মাদক, অমানবিক জীবনযাপন, নারীদের সাহসসহ বেশ কিছু বিষয়। এই বিষয়ে পরিচালক পুরস্কারের পর ভিডিও সাক্ষাৎকারে জানান, সিনেমাটির মনোনয়ন তাঁর কাছে গুরত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, তিনি সিনেমাটিতে একটি সময়ের গল্পের মধ্যে অতীতের ইরানকে দেখিয়েছেন। সেটার সঙ্গে বর্তমান সময়ের তরুণের ভিন্ন এক ধারণা পাবে। যাঁরা আসলেই ইরানের সমাজের সত্যকারের পরিবর্তন চায়।
আলীকে এক মাস আগে ইরান থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এমনকি তিনি অফিশিয়ালি ইরানে কোনো সিনেমার কাজ করতে পারবেন না। তবে স্বাধীন একজন নাগরিক হিসেবে ‘ক্রিটিক্যাল জোন’ সিনেমা তিনি সরকারের কোনো অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করেছেন। সিনেমাটি ইতিমধ্যে উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে। আয়োজন সূত্রে জানা যায়, সিনেমার গল্প তাদের মন ছুঁয়েছে। গল্প বর্ণনায় আছে নতুনত্ব। সবার অভিনয় ছিল প্রশংসনীয়। সিনেমাটি উৎসবে গোল্ডেন লিয়োপ্যার্ড পুরস্কার জিতেছে।