ভারতে ঘুরতে এসে দিল্লির একটি আর্ট গ্যালারিতে হঠাৎ দেখা পান ‘সুলতানা’স ড্রিম’ নামের একটি বইয়ের। সেদিনই নারীপ্রধান চরিত্রটি মনে ধরে যায় স্পেনের পরিচালক ইসাবেল হারগুয়েরার
ভারতে ঘুরতে এসে দিল্লির একটি আর্ট গ্যালারিতে হঠাৎ দেখা পান ‘সুলতানা’স ড্রিম’ নামের একটি বইয়ের। সেদিনই নারীপ্রধান চরিত্রটি মনে ধরে যায় স্পেনের পরিচালক ইসাবেল হারগুয়েরার

‘দিল্লিতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে ‘সুলতানা’স ড্রিম’ বইটি হাতে পেয়েছিলাম’– বললেন স্পেনের পরিচালক

ভারতে ঘুরতে এসে দিল্লির একটি আর্ট গ্যালারিতে হঠাৎ দেখা পান ‘সুলতানা’স ড্রিম’ নামের একটি বইয়ের। সেদিনই নারীপ্রধান চরিত্রটি মনে ধরে যায় স্পেনের পরিচালক ইসাবেল হারগুয়েরার। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া হোসেনের গল্পটি দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেন। সেই সিনেমা ৭১তম সান সেবাস্তিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রতিযোগিতা বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে। সিনেমাটির নির্মাণসহ নানা বিষয় সিনেইউরোপার সিনেমা সমালোচক জুলিয়া অলমো ও উৎসবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো—
‘সুলতানা’স ড্রিম’ সিনেমার পোস্টার
প্রশ্ন

প্রথম ইউরোপীয় অ্যানিমেটেড সিনেমা এবার উৎসবে প্রতিযোগিতা করছে। সেই গল্প কীভাবে খুঁজে পেয়েছেন?

১০ বছর আগে আমি ভারতে গিয়েছিলাম। দিল্লিতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে ‘সুলতানা’স ড্রিম’ বইটি হাতে পেয়েছিলাম। সুলতানার গল্পটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আমার কাছে মনে হয়েছিল, হাতে সমৃদ্ধ কিছু পেয়েছি। কারণ এখানে নারীদের ভিন্ন ভাবে চিন্তা করার প্রসঙ্গেগুলো দেখানো হয়েছে।

প্রশ্ন

তখনই কি মনে হয়েছিল বাংলা সাংস্কৃতিক এই গল্প নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করবেন?

গল্পটা কীভাবে বড় পরিসরে নিয়ে আসা যায়, এটা নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়ি। প্রথমে আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, এটা সিনেমা বা তথ্যচিত্র বা স্বল্পদৈর্ঘ্য হতে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে বছরের পর বছর ধরে একটু একটু করে চারাটি বেড়ে উঠেছে। সবকিছুর পরও আমরা জানতাম না সিনেমাটি কোন দিকে যাচ্ছে। আমরা আবার সময় নিয়েছি। আবার স্টোরির গাঁথুনি ঠিক করেছি।

প্রশ্ন

এর আগে আপনি বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানিয়েছেন। বলা যায়, ব্যাপক কর্মজীবন। কেন আপনি সিনেমাটি নির্মাণের জন্য নতুন এই ধরন বেছে নিলেন?

এখানে একই সঙ্গে যেমন ছিল সরলতা তেমনি অজ্ঞতা, যেটা আমাকে ভাবিয়েছে গল্পটি ফিচার ফিল্ম হতে পারে। এটা আমার প্রথম ছবি। এর প্রযোজক পাওয়া অনেক কঠিন ছিল। কারণ, অ্যানিমেশনের যে প্রক্রিয়ায় আমরা গল্পটি দেখিয়েছি, সেটা ছিল ব্যয়বহুল। এর জন্য অনেক ম্যানপাওয়ার ও অর্থ প্রয়োজন পড়েছে; এসব যখন প্রয়োজন হয়েছে তখন পাইনি। আমার নতুন অভিজ্ঞতা। স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণের পদ্ধতিগত দিক একদমই আলাদা।

প্রশ্ন

সিনেমাটি অনেক সুন্দর ও শৈল্পিক জায়গা থেকে এটা অনেকটা জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে। সিনেমা উপস্থাপনায় কৌশলগত দিকে কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

আমি তিনটি ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছি। কারণ, দৃশ্যগত জায়গা থেকে তিনটি গল্প আলাদা করে উপস্থাপন করেছি। কখনো অ্যানিমেশন এই সিনেমায় ওয়াটার কালার গভীর ভাবনায় ফেলেছে। বেগম রোকেয়া হোসেনের জীবনের ঘটনা দেখানোর জন্য ‘অ্যাম্বিয়েন্স অব শ্যাডো থিয়েটার’ ব্যবহার করেছি। এটা গত শতাব্দীর ভারতের বিনোদনের অনেক জনপ্রিয় ফর্ম। ভারতের বিয়ের সময় কনেকে সাজানোর জন্য মেহেদি বা এক ধরনের ট্যাটু দেওয়া হতো। ঐতিহ্যগতভাবে এই সাজসজ্জার মধ্যে এক ধরনের পেইন্টিংয়ের ছাপ পাওয়া যায়। এর প্রতীকী একটা মান থাকত। সেটা আমরা যথাযথ তুলে ধরেছি।

‘সুলতানা’স ড্রিম’ সিনেমার দৃশ্য
প্রশ্ন

ভারতীয় অঞ্চলের সংস্কৃতির অনেক কিছু রয়েছে এই সিনেমায়। চিত্রনাট্য করার সময় কী ধরনের কাঠামোর সহায়তা নিয়ে এটি তৈরি করেছিলেন?

আমার স্বামী জিয়ানমার্কো সের্রা সঙ্গে মিলে আমি চিত্রনাট্য লিখেছি। সে লিখতে ভালোবাসে, আমি ইমেজ ভালোবাসি। এই চিত্রনাট্য করতে গিয়ে ভারতে অনেক সময় কাটাতে হয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন পেশার নারীদের সঙ্গে কেটেছে, কর্মশালা করেছি। শত বছর আগে নারীদের জীবন যাপন কেমন ছিল জেনেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে রোকেয়া হোসেনের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলার জোরালো ইচ্ছা ছিল। ফিল্মটি একটি বন্য ঝোপের মধ্যে বেড়ে উঠেছে, যেমন মাঝেমধ্যে অপ্রত্যাশিত জায়গায় ফুল ফোটে তেমনটি। কিছু দৃশ্য লেখার আগেই এঁকে ছিলাম, কিছু লেখায় মধ্যে দিয়ে এসেছে। আর আমরা দীর্ঘদিন ভারতে থাকার সময়ে ভিডিও রেকর্ড করেছিলাম সেখান থেকে উপকরণ নিয়েছি। চিত্রশিল্পীদের পরামর্শ নিয়েছি। আমরা শুধু একের পর এক চিত্রনাট্য পরিবর্তন করেই গিয়েছি।

বেগম রোকেয়া। ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন

সিনেমাটি স্পেনের মর্যাদাপূর্ণ উৎসবে প্রতিযোগিতা করছে, হয়তো আরও উৎসবে প্রিমিয়ার হবে। উপলব্ধি কী?

কাজ শেষ করার পরে আমার কাছে মনে হয়েছে এটা মাইন্ডব্লোয়িং কিছু হয়েছে। এটা হয়তো ভাবিনি। এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমি শুধু শান্ত ছিলাম এই ভেবে যে কাজটি শেষ করতে পেরেছি। এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, সিনেমাটির গল্প আর দশটি সিনেমার মতো নয়। নির্মাণের সময় সতর্ক ছিলাম। কিন্তু আমার কোনো ধারণাই ছিল না এটা কোনো উৎসবে যাবে বা কিছু গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এটা দারুণ অভিজ্ঞতা। আমরা ১৭ নভেম্বর সিনেমাটি স্পেন–ভারতসহ বেশ কিছু দেশে মুক্তি দেব।