নিউইয়র্কে জুয়েল আইচের জীবনে ঘটে যাওয়া অবিশ্বাস্য ঘটনা কী, শুনুন তাঁরই বয়ানে

জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ তাঁর জাদুর ক্যারিশমায় সবাইকে বিস্মিত করেন। উপস্থিত অতিথি ও দর্শকের সামনে অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। সবার মধ্যে আনন্দ ছড়ান। হতবাকও করেন। দেশের প্রখ্যাত সেই জাদুশিল্পী এবার নিজেই হতবাক হলেন।

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা সামনে এগিয়ে এলেন। হলুদ শাড়ি পরা। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। আমার মুখের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্না মানুষ। খুবই দৃঢ়। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে আমাকে সুদৃঢ় উচ্চারণে বললেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে ছবি তুলতে আসিনি। এটি সেই মুহূর্তের স্থিরচিত্র
ছবি : জুয়েল আইচের সৌজন্যে

নিউইয়র্কে মঞ্চে জাদু দেখিয়ে নামার পর ঘটে যাওয়া ঘটনাকে অবিশ্বাস্য বলেও অভিহিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক বইমেলা উদ্বোধনে গিয়ে তাঁর জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও জানালেন।

জুয়েল আইচ তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা বিস্তারিত নিজের ফেসবুক পেজে তুলে ধরেছেন। গতকাল নিজের ফেসবুকে পোস্ট করা সেই ঘটনা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ।

জুয়েল আইচ লিখেছেন, ‘এবার নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন এবং আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলায় নানা রকমের অবিশ্বাস্য সমস্ত ঘটনা ঘটেছে। আমি একজন সামান্য জাদুশিল্পী। তরুণ বয়সে ১৯৭১ সালে রাইফেল হাতে যুদ্ধ করেছি। লাখ লাখ মানুষের আত্মদানে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু আমার কথায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হলভর্তি দর্শক পিনপতন নিস্তব্ধতায়, কখনো অট্টহাসিতে ও প্রচণ্ড হাততালিতে ছাদ ফাটিয়ে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করলেন। আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এত ভালোবাসা আমি কোথায় রাখি!’

জুয়েল আইচ জানান, বক্তৃতা শেষে অডিটরিয়ামের মঞ্চ থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সামনে-পেছনে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো নানা বয়সী মানুষের ভিড় ছিল। সবার তাঁর প্রশংসা করছিল। কেউ আবার ছবি তুলছিল। সেলফিও তুলতে চেয়েছেন কেউ।

জুয়েল আইচ ও তাঁর স্ত্রী বিপাশা আইচ

জুয়েল আইচ লিখেছেন, ‘আবার কেউ কেউ আমাকে রক্ষা করার জন্য ভলান্টিয়ারের মতো এগিয়ে এসেছেন। এ সময় হঠাৎ একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা সামনে এগিয়ে এলেন। হলুদ শাড়ি পরা। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। আমার মুখের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্না মানুষ। খুবই দৃঢ়। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে আমাকে সুদৃঢ় উচ্চারণে বললেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে ছবি তুলতে আসিনি। তাঁর এই ব্যক্তিত্ব ও কথা বলার আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি আশপাশের সবাইকে থামিয়ে দিল। তিনি আরও বললেন, ‘আপনি আমার বাংলাদেশ।’ মুহূর্তে একদম মায়ের মতো আমার বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তাঁর কান্না আর থামছে না। আমি পরম শ্রদ্ধায় তাঁর মাথায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ধীরে ধীরে তাঁর কান্না থেমে এল। আশপাশের লোক কাছে এসে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাঁকে এবং আমাকে দেখতে লাগলেন। এমন দৃশ্য এর আগে আমি এবং তাঁরা কেউই কখনো দেখিনি বা দেখেননি।’

জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ ২০১৩ সালের মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার আয়োজনের সঞ্চালক ছিলেন

নিউইয়র্কে ভদ্রমহিলার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আজও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে জুয়েল আইচকে। অনুষ্ঠান শেষে হোটেলে যাওয়ার পর ঘুমাতেও পারছিলেন না। সেই ঘটনার বর্ণনা করলেন এভাবেই, ‘আমি তারপর যা কিছুই করেছি, সবটাজুড়ে মায়ের মতো এই ভদ্রমহিলা আমার সমস্ত সত্তাকে আবিষ্ট করে রাখলেন। হোটেলে গেলাম কিছুতেই আর ঘুম পাচ্ছিল না। সারাটা রাত সেই স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। আমি খুবই তুচ্ছ একজন মানুষ। অথচ এই ব্যক্তিত্বসম্পন্না ভদ্রমহিলা আমাকে কোথায় তুলে দিলেন! আমি কি সত্যিই এর যোগ্য? এই প্রশ্ন শুধু সেই রাত নয়, পরের দিন নয়, এখন পর্যন্ত আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।’