চলচ্চিত্র, নাটক ও সংগীতাঙ্গনের প্রিয় তারকাদের সমসাময়িক কাজ, ব্যস্ততা এবং জানা-অজানা নানা গল্পকথার আয়োজন ‘মেরিল ক্যাফে লাইভ’। দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠানটি সরাসরি একযোগে প্রচারিত হয় ইউটিউবে ‘প্রথম আলো এন্টারটেইনমেন্ট’ চ্যানেল, প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে। গত দুই সপ্তাহে প্রচারিত উল্লেখযোগ্য পর্বগুলোর তথ্য-গল্প নিয়ে এ লেখা ‘মেরিল ক্যাফে লাইভ: ফিরে দেখা’।
‘এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরে চিত্রনায়ক জিয়াউল রোশানের “ডেড বডি” আসছে।’ উপস্থাপক এমন চমকে যাওয়ার মতো কথা বললেও ঘটনা ছিল সত্য। ১ এপ্রিল প্রচারিত মেরিল ক্যাফে লাইভের পর্বটিতে আড্ডার এক ফাঁকে এমনই কথা প্রসঙ্গে হাসিতে ফেটে পড়েন অতিথি রোশান এবং উপস্থাপক নীল হুরেজাহান।
প্রথম আলো ডিজিটালের আয়োজনে তারকাদের গল্প-আড্ডায় ঈদের আমেজ ছিল গত দুই সপ্তাহের (১ থেকে ১৫ এপ্রিল) ‘মেরিল ক্যাফে লাইভ’ অনুষ্ঠানে। তারকাদের ঈদের ব্যস্ততার নানা খবর নিয়ে সাজানো ছিল পর্বগুলো। উপস্থাপনায় ছিলেন মৌসুমী মৌ ও নীল হুরেজাহান।
এপ্রিল মাসের প্রথম পর্বটি শুরু হয় চিত্রনায়ক জিয়াউল রোশানের চলচ্চিত্র ‘অপারেশন জ্যাকপট’–এর গল্পের মাধ্যমে। নির্মাণাধীন সিনেমাটির এখনো প্রায় দেড় মাসের কাজ বাকি। এ সিনেমায় আটজন নায়ক আছেন। রোশান ছাড়া বাকিরা কারা?
‘আমার সঙ্গে আছেন অনন্ত জলিল ভাই, নিরব ভাই, ইমন ভাই, জয়, সাঞ্জু, আমান রেজা ও শিপন,’ বলেন রোশান। স্বাধীনতাযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক ও সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্রটি। পর্বের শিরোনাম ছিল ‘প্রতি ঈদেই চিত্রনায়ক রোশানের ছবি থাকছে’।
দেশের চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে রোশান বলেন, ‘আমি আমাদের দর্শকদের বলব, কখনোই ঢালিউডের চলচ্চিত্রের সঙ্গে অন্যদের তুলনা করবেন না। কারণ, আমাদের বাজেট থেকে শুরু করে মুভির পেছনে দেওয়া সময়টা অন্য ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় কম।’ রোশান জানান, এবারের ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘মায়া: দ্য লাভ’ ও ‘ডেড বডি’। সামনের ঈদে আসবে ‘রিভেঞ্জ’। এ ছাড়া চিত্রনায়িকা বুবলীর সঙ্গে মুক্তির অপেক্ষায় আছে আটটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ‘বিট্রে’, ‘জামদানি’, ‘পুলসিরাত’ ও ‘প্রেম পুরান’ উল্লেখযোগ্য। কমেডি সিনেমা ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’র কাজ এখনো শুরু হয়নি। ‘আজকের পর্বটি বেশ জমজমাট। কারণ, আজ যিনি অতিথি হিসেবে আছেন, তিনি বড় পর্দা থেকে শুরু করে মুঠোফোনের ছোট পর্দায়ও বেশ জনপ্রিয়। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, তাঁকে এড়িয়ে চলার কোনো সুযোগ নেই। তিনি হচ্ছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান।’ এমনই ভূমিকা দিয়ে ২ এপ্রিলের পর্বটি শুরু করেন উপস্থাপক নীল।
অতিথি চলচ্চিত্রশিল্পী হলেও তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ভাইরাল’ তকমা। বিষয়টি তাঁর ওপর কতটা প্রভাব ফেলে? এমন প্রশ্নে চিত্রনায়ক জায়েদ খান বলেন, ‘আমার একটাই কথা। হিরো মানে হচ্ছে, সে যখন গাড়ির দরজা খুলে নামবে, সবাই তাকিয়ে থাকবে। সুন্দরী মেয়ে নায়ককে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখবে। আর নেগেটিভ পাবলিসিটি অলসো আ পাবলিসিটি। তাই আমাকে নিয়ে কে কী বলে, আই ডোন্ট কেয়ার। আলোচনায় আছি বলেই সমালোচিত হচ্ছি।
যে গাছের ফল বেশি, সে গাছে ঢিল পড়েও বেশি।’ গত ঈদে মুক্তি পেয়েছে জায়েদ খানের ‘সোনার চর’ সিনেমা। মুক্তির অপেক্ষায় আছে সিনেমা ‘লিপস্টিক’ ও ‘বাহাদুরি’। উপস্থাপকের অনুরোধে ‘পৃথিবীর জন্ম যেদিন’ গানটি গেয়ে শোনান জায়েদ খান। মিডিয়ার ব্যস্ততার বাইরে প্রযোজনা সংস্থার কাজ এবং পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনায় ব্যস্ত থাকেন তিনি। এ ছাড়া আড্ডায় উঠে আসে তাঁকে ঘিরে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার জায়েদ খানের ব্যাখ্যা। পর্বটি শেষ হয় ‘ফুটপাত থেকে শপিং করেন জায়েদ খান’ শীর্ষক ভাইরাল প্রসঙ্গটি আলোচনার মাধ্যমে। উপস্থাপকের মুখে অতিথির ভূয়সী প্রশংসার মাধ্যমে শুরু হয় ৩ এপ্রিলের পর্বটি। খুব বেছে কাজ করেন তিনি। ক্যারিয়ারের বয়স ১ বছর, নাটকের সংখ্যা ৭, ঈদুল ফিতরের পর হয়েছে ১০টি। ‘লাভ লাইন’ নামের নাটকটিতে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এই অতিথির নাম নাজনীন নাহার নিহা। পর্বটির শিরোনাম ছিল ‘লাভ লাইন নাটকটি ভিউর দিক থেকে রেকর্ড গড়েছে’। গেল ঈদে প্রচারিত হয়েছে নিহার তিনটি নাটক ‘ম্যাচমেকার’, ‘লাভ রেইন’ ও ‘তখন যখন’। ব্যক্তিগত জীবনে নিহা ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। শিক্ষাজীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায়। এর মধ্যে পেয়েছেন ওটিটিতে কাজের প্রস্তাব। কিন্তু তিনি আস্তেধীরে এগোতে চান, তাই এখনই ওটিটির কাজ শুরু করতে চান না। ভালো গল্প পেলে ভবিষ্যতে করতে পারেন বলে জানান। ‘প্রেম করা হয়েছে কতটি?’ উপস্থাপক মৌয়ের প্রশ্নের উত্তরে নিহা বলেন, ‘যেগুলো করেছি, আমার কাছে আবেগ মনে হয়েছে। এখন ক্যারিয়ার ও পরিবার নিয়েই থাকতে চাই। আপাতত প্রেম ও আবেগে নিজেকে জড়াতে চাই না।’ ফটোশুটের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের শুরু। করছেন বিজ্ঞাপন ও মিউজিক ভিডিওতে কাজ। নিহার তিনটি ভালো ও মন্দ দিক জানতে চান উপস্থাপক। নিহা বলেন, ‘আমার ভালো দিক—সবাইকে ভালোবাসতে পারি, মিশতে পারি এবং বড় বোন হিসেবে ভালো।
আর মন্দ দিক—আবেগপ্রবণ, কথা গুছিয়ে বলতে পারি না এবং বোকা প্রকৃতির।’ ‘প্রিন্সের আবিষ্কার আলিফ’ শিরোনামে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ৭ এপ্রিলের পর্বটি। অতিথি হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয় গীতিকবি ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ।
সঙ্গে ছিলেন নবাগত কণ্ঠশিল্পী আলিফ। ‘প্রিয়তমা’ চলচ্চিত্রের দুটি গানের পর এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাজকুমার’ চলচ্চিত্রের ‘বরবাদ’ গানটিও প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুর করা। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন আলিফ। আলিফের কণ্ঠে গানটি শোনার মাধ্যমেই শুরু হয় পর্বটি। ‘কীভাবে আলিফকে খুঁজে পেলেন প্রিন্স?’ উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তরে প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ‘তাকে খুঁজে পাই ফেসবুকে। সে আমার কমেন্টে এসে নিজের গান পাঠাত। শুনে দেখলাম, এ কণ্ঠই আমি দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছি। তারপর কথা হলো, দেখলাম সে কথাও এভাবে বলে। তার মানে সে কারও কণ্ঠ নকল করে না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে নিয়ে কাজ করার।’ আলিফের কাছে উপস্থাপক জানতে চান, তিনি কখনো ভেবেছিলেন কি না, তাঁর যোগাযোগে প্রিন্স মাহমুদ সাড়া দেবেন? উত্তরে আলিফ বলেন, ‘আমি কোনো দিনই ভাবিনি। এটা আমার জন্য বড় একটা পাওয়া। এর অবদান পুরোটাই প্রিন্স ভাইয়ের।’ প্রিন্সের সঙ্গে আলিফের প্রথম কথা হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ। যখন ‘বরবাদ’ গানটি রেকর্ড হচ্ছিল, আলিফ জানতেন না গানটা কোথায় যাবে। গানটি মুক্তি পাওয়ার এক ঘণ্টা আগে তিনি জানতে পারেন, তাঁর গান শাকিব খানের ‘রাজকুমার’ চলচ্চিত্রের জন্য তৈরি হয়েছে। রিয়াদ-আলিফদের মতো নতুনদের তুলে আনার ক্ষেত্রে কিসে প্রাধান্য দেন প্রিন্স? উত্তরে প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ‘শুধু ভালো গাইলেই চলবে না, তার কণ্ঠটা আমাকে টানতে হবে।’ আলিফের কণ্ঠে অরিজিৎ সিংয়ের ‘মে ঢুন্ডনে কো জামানে মে’ গানের মাধ্যমে পর্বটি শেষ হয়।
জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন ও কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীরের দ্বৈত কণ্ঠে ‘কফির পেয়ালা’ গানটির মাধ্যমে শুরু হয় ৯ এপ্রিলের পর্বটি। ২০ বছর পর একসঙ্গে গাইলেন তাঁরা। আশিক মাহমুদের কথায় এবং আকাশ মাহমুদের সুরে গানটি ৩১ মার্চ ২০২৪-এ দর্শকদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে মুক্তি দিয়েছে ‘ধ্রুব মিউজিক স্টেশন’ ইউটিউব চ্যানেল।
মিউজিক ভিডিওটির প্রসঙ্গে ইমন বলেন, ‘কোন জায়গায় কোন এক্সপ্রেশন দিতে হবে, সেটা বোঝা আমার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। যতবারই আঁখির দিকে তাকাচ্ছিলাম, আমি হেসে দিচ্ছিলাম। ফলে ডিরেক্টরের আমাকে নিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।’ একই প্রসঙ্গে আঁখি আলমগীর বলেন, ‘ইমনের সঙ্গে তো আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। যার কারণে রোমান্টিকতার ক্ষেত্রে ইমন সেভাবে অনুভূতিটা প্রকাশ করতে পারছিল না।’ দুজনের পরিচয়টা অবশ্যই গান দিয়ে। একটি স্টুডিওতে মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন আঁখি। সেখানেই গান রেকর্ড করছিলেন ইমন। তাঁর গান রেকর্ডিংয়ের সময় স্টুডিওর বাইরে গুনগুন করা গানটা গাচ্ছিলেন আঁখি। নজরে পড়ে ইমনের। তারপর ইমন নিজে থেকে এগিয়ে এসে আঁখির প্রথম মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ানোর দিনই পাঁচটি গান রেকর্ড করে নিলেন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ‘ওই চোখে চোখ রাখো’, ‘প্রজাপতি আমরা দুজন’ গানগুলো গেয়ে শোনান অতিথিরা। সবশেষে ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ গানটির মাধ্যমে শেষ হয় পর্বটি। উল্লেখ্য, ‘মেরিল মিল্ক সোপ বার’-এর সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের রবি থেকে বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রচারিত হয় ‘মেরিল ক্যাফে লাইভ’ অনুষ্ঠানটি।