শৈশব থেকে সহপাঠী, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের কাছে শুনতে হতো, ‘তোমার বোন অভিনয় করে, তুমিও একদিন অভিনেত্রী হবা।’ এসব শুনে মালাইকা উত্তর দিতেন—‘হয়তো অভিনেত্রী হতে পারি, আবার না–ও পারি।’ শৈশব পেরোনো সেই মালাইকা এখন বোনের পথেই হাঁটছেন। বড় বোনকে আদর্শ মেনে অভিনয়ের পথে পা বাড়াতে চান বলেও জানালেন।
মালাইকার বয়স যখন ছয়–সাত বছর, তখন অভিনয় করবেন কি না, এ নিয়ে কিছুটা দোটানায় ছিলেন। এর মধ্যে একদিন পরিবারে জানান, অভিনয় করতে চান। সেদিন অভিনয় নিয়ে পরিবারের সায় থাকলেও আগে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলেন সবাই। সেদিনের কথা মনে করে মালাইকা বলেন, ‘ছোটবেলায় আপুকে অভিনয় করতে দেখে আমিও চেয়েছিলাম অভিনয় করতে। তখন আব্বু–আম্মু বলেন, “আগে পড়াশোনা শেষ করতে হবে। একসঙ্গে দুইটা করতে গেলে, পড়াশোনার ক্ষতি হবে। দেখা যাবে, মনোযোগ পড়াশোনা থেকে অভিনয়ে ডাইভার্ট হয়ে গেছে।” তাই তখন পড়াশোনায় মন দিই। তবে মনে মনে অভিনেত্রী হওয়ার পরিকল্পনাও করি।’ মালাইকা অভিনেত্রী মেহজাবীনের আদরের ছোট বোন।
শৈশবের মালাইকা যখন তাঁর বড় বোন মেহজাবীনের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন, তখন মেহজাবীনকে শুনতে হতো, ‘তোমার বোন অভিনয় করবে কি না।’ কিন্তু তখন মালাইকার বয়স কম থাকায় তাঁরাও চাইতেন না, তখনই অভিনয়ে আসুক। বাড়িতে বোনের অভিনয় দেখে বড় হওয়া মালাইকা তাঁর বোনের জনপ্রিয়তাও টের পেতেন।
মালাইকার অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা জানতেন বড় বোন মেহজাবীন। বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে মালাইকা বলেন, ‘আমি যখন ও–লেভেল শেষ করে, এ–লেভেলে পড়ছি, তখন মাঝেমধ্যে আপু আমাকে বলতেন, “একটি টিভিসির কাজ আছে, মডেল হবি কি না। অভিনয় করবি কি না।” কিন্তু পড়াশোনার চাপ থাকায় করা হয়নি। গত বছর জুনে আপু যখন বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার প্রস্তাব দেয়, রাজি হয়ে যাই। তখন আমার ছুটিও ছিল। ভাবলাম, যেহেতু অভিনয় করতে চাই, শুরুটা তো করতে হবে। ভালো ব্র্যান্ড ও পরিচালকের কারণে রাজি হয়ে যাই।’
মালাইকা প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান গত বছর জুনে। তখন পাশে ছিলেন বোন মেহজাবীন। সেদিন মালাইকা লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন শুনে ঘাবড়ে যাননি; বরং শব্দগুলো তাঁর ভালো লেগেছিল। কী বলেছিলেন মেহজাবীন চৌধুরী—এমন প্রশ্নে মালাইকা বললেন, ‘আমি সেদিন একটুও ভয় পাইনি। আমার মতো করেই অভিনয় করছিলাম। পরে আপুর দিকে তাকালাম। আপু বললেন, ‘‘তোমার অভিনয় ভালো হচ্ছে। আমি কোনো সমালোচনা করব না। তুমি প্রেশার নিয়ো না। তোমাকে পরিচালক যেভাবে বুঝিয়ে দেয় সেভাবে অভিনয় করো।” পরে আমি আমার মতো করেই চেষ্টা করতে থাকি ও শিখি।’
মেহজাবীনরা তিন বোন ও দুই ভাই। বোনদের মধ্যে সবার ছোট মালাইকা। শৈশব থেকে মেহজাবীনকে দেখে বড় হয়েছেন মালাইকা। পরিবারের অন্যদের চেয়ে মালাইকার বেশি সময় কেটেছে মেহজাবীনের সঙ্গে। তাঁর কাছে বোনই আদর্শ। বোনের মতো করে সামনে এগিয়ে যেতে চান। বোনের কাছ থেকে অভিনয়ের স্কুলিং নিয়েছেন। এ–লেভেলের শিক্ষার্থী মালাইকা গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বোনের জন্য অনেক খুদে বার্তা ও শুভেচ্ছা পাচ্ছেন।
জানা যায়, মেহজাবীন এদিন ছোট বোনকে নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মালাইকা বলেন, ‘আমার ডেব্যু বিজ্ঞাপনটি নিয়ে আপু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর অনেকে আমাকে দেখতে চাচ্ছেন। আমাকে ফেসবুকে শুভকামনা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, আমাকে পর্দায় বেশি দেখতে চান। আমার খুবই ভালো লাগছে। আবার চিন্তাও হচ্ছে।’ এখন পড়াশোনার চাপ থাকলেও অভিনয় করে যেতে চান। এ প্রসঙ্গে মালাইকা বলেন, ‘এখনো আমার পড়াশোনা নিয়ে অনেক ব্যস্ততা। এর মধ্যে আমি কাজ করব। নাটক আমার অনেক পছন্দের। সেখানেও অভিনয় করব। তবে আপাতত বিজ্ঞাপনে বেশি কাজ করতে চাই।’
ছোট বোনের অভিনয়ে আসা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে সব সময় বোনের পাশে আছেন। তিনি বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি কী করবে, এটা মালাইকাকে কখনোই বলে দিতে হয়নি। ওর ইচ্ছা থেকেই অভিনয়ে নাম লিখিয়েছে। প্রথম বিজ্ঞাপন করল। এটার প্রস্তাব যখন আমার কাছে আসে, তখনই আমি মালাইকাকে বলি। ওর তখন এক্সাম শেষ হয়েছিল। ছুটি চলছিল। আর হিমালয়া ভালো একটা ব্র্যান্ড। প্রথম কাজ হিসেবে ভালো মনে হয়েছিল আমার। পরে মালাইকা স্ক্রিপ্ট দেখে রাজি হয়। তার কাজটা দেখে আমার নিজেরও ভালো লাগছে।’
মেহজাবীনের বোন মালাইকা অভিনীত বিজ্ঞাপনচিত্রের পরিচালক আদনান আল রাজীব। তাঁরা প্রথম দিকে এই মডেলকে নিয়ে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন। পরে স্ক্রিন টেস্ট ও মালাইকার অভিনয়ের স্বকীয়তা দেখে রাজি হয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। সেসব কথা উল্লেখ করে মেহজাবীন বলেন, ‘পরিচালক ও টিম বেশ সহায়তা করেছে, যে কারণে অভিষেকটা ভালোই হলো। এখন সে অ্যাক্টিং করতে চায় কি না, তার ইচ্ছা। আমি কখনোই ইন্টারফেয়ার করতে চাই না। ওর পড়াশোনা ঠিক রেখে অভিনয়টা করতে পারে। আর ইন্টারেস্টটেড না হলেও সমস্যা নাই। পরিবার থেকে আমরা সবার ব্যাপারে সাপোর্টিভ। আমি যেভাবে সাপোর্ট পেয়েছি, মালাইকাও সেভাবেই পাবে। অভিনয়, মডেলিং বা অন্য কোনো জব হোক—সে যেটা করতে চায়, সেটাতে আমরা তাঁর পাশে আছি।’