নাট্য অভিনেত্রী শারমিন আঁখির শারীরিক অবস্থা গত দুই দিনের মতো এখনো অপরিবর্তিত। জানা যায়, মাঝে কিছুটা ভালো হলেও পরবর্তী সময়ে তাঁর রক্তে প্লাজমা কমতে থাকে। দুর্বল হতে থাকেন আঁখি। বর্তমানে তাঁকে প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের এইচডিইউতে রেখেই চলছে চিকিৎসা। শারীরিক অবস্থা বুঝে আগামীকাল এই অভিনেত্রীকে কেবিনে স্থানান্তর করা হতে পারে।
শারমিন আঁখির শারীরিক অবস্থা জানতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর অবস্থা আজও একই রকম রয়েছে। তেমন পরিবর্তন হয়নি। আমরা তাঁকে নিয়মিত দেখভাল করছি। সেরে উঠতে একটু সময় লাগবে।’ গতকাল তিনি জানিয়েছিলেন, আঁখির শরীরের ৩৫ ভাগ অংশ পুড়ে গেছে (ডিপ বার্ন)। তাঁর শ্বাসনালি পুড়ে গেছে, খুব একটা শঙ্কামুক্ত নন।
গত শনিবার মিরপুরের একটি শুটিংবাড়ির মেকআপ রুমে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। সেদিনই তাঁকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেই বিস্ফোরণে আঁখির হাত, পা, চুলসহ শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়। তিন দিন ধরে তাঁর চিকিৎসা চলছে। আঁখির স্বামী নাট্য নির্মাতা রাহাত কবির হাসপাতাল থেকে বলেন, ‘অবস্থা এখনো স্ট্যাবল নয়। এর মাঝেই হঠাৎ করে অবস্থা কিছুটা খারাপ হয়েছিল। প্লাজমা কমে যাচ্ছিল। চিকিৎসকেরা আমাদের জানিয়েছিলেন রক্ত প্রস্তুত রাখতে। এখন প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত ডোনার প্রস্তুত রাখতে হচ্ছে। কারণ, বার্ন রোগীর শারীরিক অবস্থা ফল করার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের রোগী সেনসেটিভ। পাঁচ থেকে দিন না গেলে অবস্থা বোঝা যাবে না। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে।’
রাহাত আরও বলেন, ‘আঁখির হাত, পা ও মুখ ঝলসে গিয়েছিল। পোড়া চামড়ার কিছু অংশ খুলে পড়ছিল। প্রথম দিনেই চিকিৎসকেরা আঁখির হাতের কনুই পর্যন্ত চামড়া কেটে ফেলেছেন, ঊরুর চামড়াও কাটতে হয়েছে। মুখের কিছু অংশ পুড়েছে। তার দুই হাত–পা মুড়িয়ে গেছে। কথা বলতে পারলেও আঁখি মানসিকভাবে কিছুটা চিন্তা করছে। ডাক্তাররা বলেছেন, শিগগির অবস্থা ভালোর দিকে যাবে। তাঁর জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
ইমদাদুল হক মিলনের ‘প্রিয় দর্শনী’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘অমীমাংসিত প্রেম’ নামে একটি নাটকের শুটিংয়ের প্রথম দিন ছিল গত শনিবার। আঁখির দুর্ঘটনার পরে শুটিং আপাতত বন্ধ। শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন সজল, মৌসুমী হামিদসহ অনেক অভিনয়শিল্পী। কীভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে জানতে চাইলে নাটকের পরিচালক আশফাকুল আলম গতকাল বলেছিলেন, ‘আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না, কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটল। তবে নতুন বাসা, মেকআপ রুমে গ্যাস জমে থাকতে পারে।’ আঁখির স্বামী রাহাত সেই সময় শুটিংবাড়িতেই ছিলেন। তিনি গতকাল জানিয়েছিলেন, ‘পরে আমি আঁখির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সে আমাকে জানায় শুটিংয়ের জন্য তৈরি হতে চুল স্ট্রেট করে নিচ্ছিল। সকেট থেকে স্ট্রেট মেশিনের প্লাগ খোলার সময় ভয়াবহ শব্দ হয়। পরে আর তার কিছু মনে নেই। ধারণা করা হচ্ছে, রুমে গ্যাস জমে ছিল, স্পার্কিং থেকে আগুন ধরে যায়।’
দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন শারমিন আঁখি। শুরুতে বেশ কিছু কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১০ সালে নার্গিস আক্তারের ‘ভালোবাসা কি করে ভালো হয়’ নাটকের অভিনয়। পরে নাটক, বিজ্ঞাপন, স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ও মডেলিং শুরু করেন। পরে ২০১৮ সালে নাম লেখান সিনেমায়। প্রথম সিনেমা ছিল ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’। এই সিনেমার ১১ জন নির্মাতার ১১টি গল্পের মধ্যে ‘জিন্নাহ ইজ ডেড’-এ অভিনয় করে প্রশংসা পান আঁখি। পরে তিনি নাম লেখান, ‘কোনো এক কালে’, ‘জাস্ট এ জোক ডার্লিং’সহ বেশ কিছু সিনেমায়। গত বছর শঙ্খ দাশগুপ্ত পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘বলি’তে পতিতার চরিত্রে তিনি দারুণ অভিনয় করেন।
জানা যায়, আঁখির বেড়ে ওঠা চট্রগ্রামে। সেখানে মঞ্চনাটকদের দল ‘অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়’ অভিনয়ে হাতেখড়ি। এই দলের তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাস অবলম্বনে নাটকের বসন্ত চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান তিনি। তারপর থেকে তাঁর অভিনয়ের দিকে ঝোঁক বাড়ে।