নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ইরফান সাজ্জাদ। ওটিটিতেও কাজ করে থাকেন। নতুন একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খবরও পাওয়া গেল। ভয়াল নামে ছবিটি সেন্সর সার্টফিকেশন বোর্ড থেকে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। এসব নিয়ে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন মনজুর কাদের
ফেসবুকে দেখলাম, উড়োজাহাজে বসা একটি ছবি পোস্ট করেছেন?
ইরফান সাজ্জাদ : আমি এখন ব্যাংককে। সব সময় তো শুটিংয়ে বা ঘুরতে আসি। এবার অন্য কাজে এসেছি। আমার একটা ব্যবসা আছে, সেই কাজটা করতেই আসা।
‘ভয়াল’ নাকি সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে ‘এ’ গ্রেড সনদ পেয়েছে?
ইরফান সাজ্জাদ : আমিও তা–ই শুনেছি, গ্রেড ‘এ’–তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ভয়াল। এর পরিচালক বিপ্লব হায়দার। ছবিটি দেখে সার্টিফিকেশন বোর্ডের কয়েকজন ভালো লাগার কথাও ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ভিন্নধর্মী গল্প। যদিও ‘এ’ গ্রেড তকমা পেয়েছে। তবে ছবির যে বার্তা, তা খুবই ইউনিক। যাঁরা ছবিটি দেখবেন, ভিন্ন রকম স্বাদ পাবেন। বাংলাদেশের সিনেমা তো এখন আস্তে আস্তে অন্য রকম একটা অবস্থান তৈরি করছে। অনেক আনকনভেনশনাল সিনেমার কাজ হচ্ছে। সে জায়গা থেকে আমারও মনে হয়, ভয়াল একটা ভালো প্রভাব ফেলতে পারে।
ছবিটাকে ১৮+ বলা হচ্ছে। এ ছবিতে এমন কী আছে যে ১৮+ বলা হচ্ছে?
ইরফান সাজ্জাদ : (হাসি) গল্পটা এমন একটা ম্যাচিউরড বিষয় নিয়ে যে সেন্সর সার্টিফিকেশন মনে করেছে, এইটিন প্লাস দেওয়া উচিত। ছবির শুরুতে এমন কিছু জিনিস দেখানো হয়, সমাজে যা অহরহ ঘটে থাকে। সচরাচর ১৮ বছরের নিচে যারা, তাদের এটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন হবে। তাদের জন্য এটা ট্রমাও হতে পারে। এসব ভাবনা থেকে এই বার্তা দিয়ে দেওয়া। ১৮+ বলতে আমরা সাধারণত যে ধরনের সিনেমা বুঝি, এটা মোটেও সে ধরনের কিছু নয়। ১৮+ হলেও এটা সামাজিক একটা ছবি। যেকোনো ধরনের মানুষের এ ধরনের গল্পের ছবি দেখা উচিত। যেহেতু এটা এইটিন গ্রেডের তকমা পেয়ে গেছে, তাই অবশ্যই ১৮ বছরের নিচে যারা আছে, তাদের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।
রাজনৈতিক অবস্থার কারণে অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিল। এখন সার্বিকভাবে কাজের অবস্থা কী?
ইরফান সাজ্জাদ : আমরা জানি, কয়েক মাস ধরে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু আমাদের কাজ নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রের কাজকর্মও বন্ধ ছিল। আস্তে আস্তে সব অঙ্গনের মানুষ কাজে ফিরছে। মাসখানেক হলো আমরাও কাজে ব্যস্ত হয়েছি। মানুষ এখন পুরোদমে কাজে ফেরার চেষ্টা করছে। আমি বিশ্বাস করি, সিনেমায় যে স্থবিরতা চলছে, দু-তিন মাসের মধ্যে সেটাও চাঙা হবে। আমার নিজেরই দুটি নতুন সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যেগুলো বন্ধ আছে। এখন সবাই যার যার কাজে ফিরুক।
দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। নাটকের ক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি দরকার বলে মনে করেন?
ইরফান সাজ্জাদ : নাটকের ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলতে যদি বলেন, আমি বলব, এটা খুব কঠিন। কারণ, নাটক এখন আর টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নাটকের সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন ইউটিউব। এটা যেহেতু একেবারে ব্যক্তিগত একটা মাধ্যম, সেখানে চাইলেও কাউকে আপনি আটকে রাখতে পারবেন না। কোন ইউটিউব চ্যানেল কী গল্পের, কী ভাবনার নাটক দেখাবে, তা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে ভিউ অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সত্যি কথা বলতে, যদি নাটকের সংস্কারের কথা বলি, অনেক বিষয় বলতে পারি। গল্প ও কনটেন্টের কথা বলতে পারি। একেবারে ভালো গল্পের কাজ যে হচ্ছে না, এটাও আমরা বলতে পারব না। কিন্তু দিন শেষে যে ধরনের গল্পের কনটেন্ট আমরা দেখতে চাই, তেমনটা খুবই কম। এখন স্থূল কনটেন্টের কাজ অনেক বেশি। যেহেতু ইউটিউবের দর্শক আমজনতা, তাঁদের তো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাঁরা দেখা যায় বেশির ভাগ স্থূল কনটেন্ট পছন্দ করেন। টেকনিক্যালি এই নিয়ন্ত্রণ একেবারে অসম্ভব। তাই নাটকে সংস্কারের কথা যদি বলেন, সেটা কঠিন হবে। তারপরও চ্যানেলের মালিক যাঁরা আছেন, তাঁরা চাইলে মানের জায়গাটা নিয়ে কিছুটা হলেও ভাবতে পারেন।
সারা বছরই টিভি, ওটিটিতে আপনার কাজ থাকে। নিজের কাজ নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?
ইরফান সাজ্জাদ : অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজের জন্য যেমন কাজ করি, মানুষের জন্যও করি। নিজের কাজের মূল্যায়ন করাটাও জরুরি। পারিবারিক কারণে মাঝের দুই বছর কাজ থেকে দূরে ছিলাম। ফেরার পর মান নিয়ে অনেক বেশি সচেতন ছিলাম। গল্পপ্রধান কাজে মনোযোগী হয়েছি। দুটি সিনেমার কাজও শেষ করেছি। কাজ করছি, আলটিমেটলি সন্তুষ্টি তখন পাব, যখন মানুষের মুখে মুখে আমার একটা অভিনীত চরিত্র নিয়ে কথা শুনব। মানুষ আমার প্রশংসা করবে। ‘ভয়াল’ ছাড়াও আরেকটি ছবির শুটিং করেছি। এসব কাজ যখন মানুষ দেখবে, একজন ভিন্ন রকম ইরফান সাজ্জাদকে দেখবে।