মডেল ও অভিনেত্রী সীমানা ১০ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী। কবে তাঁর জ্ঞান ফিরবে, সে ব্যাপারে এখনই কিছু জানা যাচ্ছে না। এর মধ্যে একটি অস্ত্রোপচারও হয়েছে। দিনের পর দিন মাকে এভাবে বিছানায় দেখে হতবাক ছেলে।
বারবার মায়ের কাছে ফিরতে চাইছে ছেলে আকাইদ সাজ্জাদ শ্রেষ্ঠ। মা কেন চোখ খুলছে না। কেন কথা বলছে না। কখন মায়ের বুকে ঘুমাতে পারবে—এসব প্রশ্ন আট বছর বয়সী ছেলে শ্রেষ্ঠর। মায়ের জন্য ক্ষণে ক্ষণে চিৎকার করে কাঁদছে ছেলে। এমন চিৎকারের কান্না পরিবারের কেউ সহ্য করতে পারছেন না। সবাই তার মায়ের সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন। প্রথম আলোকে আজ শুক্রবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন সীমানার ছোট ভাই এজাজ বিন আলী।
সীমানার দুই সন্তান। বড় সন্তান শ্রেষ্ঠর বয়স আট বছর, আর ছোট সন্তান স্বর্গ তিন বছর বয়সী। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, ছোট ছেলে এখনো বুঝতে পারছে না তার মায়ের কী হয়েছে। কিন্তু বড় ছেলে মা যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। কিন্তু মাকে এভাবে দেখতে পারছে না সে। তাই মায়ের সঙ্গে কথা না বলা, মায়ের বুকে যেতে না পারা, জড়িয়ে ধরতে না পারার কথাটা বিলাপ করে সবাইকে বলছে। আট বছরের শ্রেষ্ঠর কান্না পরিবারের কেউ সহ্য করতে না পেরে নানান আশ্বাস দিচ্ছেন বটে, তবে চিকিৎসকের কোনো আশার কথা সীমানার পরিবারের সদস্যরা আপাতত শুনতে পারছেন না।
চিকিৎসকদের বরাতে সীমানার পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, ‘অলৌকিক যদি কিছু ঘটে তাহলে হয়তো একটা কিছু হবে। এই মুহূর্তে অবস্থাটা মোটেও ভালো কিছু না। আমরা শুধু প্রার্থনা করছি। সবার কাছে সীমানার সুস্থতার জন্যও দোয়া চাইছি।’
সীমানার পরিবার জানিয়েছে, ২১ মে রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সীমানা। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে দ্রুত ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জানতে পারেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। পরদিন আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য সীমানাকে ধানমন্ডির আরেকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গেল কয়েক দিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত শনিবার এই হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। এদিকে গত বুধবার বিকেল থেকে সীমানার চিকিৎসা চলছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সীমানার শারীরিক অবস্থা প্রতিনিয়ত অবনতি হয়েছে। শুরুর দিকে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হলেও বুধবার থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার পর পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বলে জানান সীমানার ভাই এজাজ বিন আলী। সীমানার বাবা বলেন, ‘আমরা ভালো নেই। আমার মেয়ে ভালো নেই। আমাদের প্রচুর টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’
প্রসঙ্গত, সীমানা ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। পরে নাটকেও অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ ২০১৬ সাল থেকে অভিনয়ে বিরতি। পরে জানা যায়, মা হওয়ার জন্যই এই বিরতি। দুবার মা হওয়ার কারণে তাঁর এই দীর্ঘ বিরতি। বিরতি ভেঙে গত বছর আবার নাটকে অভিনয় শুরু করেন।