তারকা দম্পতি নিয়ে কথা হলে শুরুর দিকেই আসবে অভিনেতা জাহিদ হাসান ও সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের কথা। তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কের দীর্ঘ গল্প উদাহরণ হয়ে আছে ভক্ত ও সহকর্মীদের কাছে। এ দম্পতিকে বিভিন্ন সময় নানা অনুষ্ঠানে পাওয়া যায়। তেমনই একটি অনুষ্ঠানে দুই সন্তানসহ ফ্রেমবন্দী হলেন জাহিদ-মৌ। আর সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন জাহিদ হাসান। সেই ছবি এখন ভাইরাল। কারণ, মা–বাবার সঙ্গে তাঁদের তেমন কোনো ফ্রেমবন্দী হওয়া ছবি নেই। থাকলেও সেগুলো ফেসবুকে তেমন একটা দেখা যায় না। তা ছাড়া এই দম্পতির ছেলেমেয়েরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেভাবে সক্রিয় নন। তবে প্রিয় তারকার সন্তানদের ছবি দেখে ভক্তদের প্রশ্ন, জাহিদ–মৌয়ের ছেলেমেয়েরা কী করেন?
মা-বাবা তারকা হলেও সে পথে হাঁটতে চান না এই তারকা দম্পতির সন্তানেরা। তাঁদের ক্যারিয়ার নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। তাঁদের কথা ছেলেমেয়েরা এখন বুঝতে শিখছেন। তাঁরা তাঁদের ভবিষ্যৎ যা ভালো মনে করেন, সেটাই করবেন। জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার মেয়ের নাম জোহায়রা জাহিদ পুষ্পিতা। সে ছোটবেলায় নাচ শিখেছে, অভিনয়ও করেছে। শৈশবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছে। সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছে। তখন আমরা সবাই তাকে উৎসাহ দিয়েছি। পরে যখন বুঝতে পারলাম, সে আমাদের পথে হাঁটতে চায় না। পড়াশোনায় খুবই সিরিয়াস ছিল। আমরা সেভাবেই উৎসাহ দিয়েছি। সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছে।’
জাহিদ হাসান–মৌদের ছোট সন্তান জারিফ জাহিদ সাইম। তিনিও সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু অভিনয় নিয়ে তাঁর কখনোই কোনো ইচ্ছা ছিল না। তাঁরা তাঁদের ক্যারিয়ার নিয়ে কখনোই কোনো বাড়তি চাপ দেননি। জাহিদ হাসান বলেন, ‘মানসিক চাপে কখনোই কোনো সন্তান বড় হতে পারে না। এটা আরও সমস্যার সৃষ্টি করে। আমাদের ছেলেমেয়েদের এত পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট বের হয়। এটা নিয়ে আমি কখনোই বকাবকি করিনি। সব সময় আমি ও মৌ তাদের বলি, ভালো ফলের চেয়ে ভালো মানুষ হতে হবে। রেজাল্ট খারাপ হতে পারে, কিন্তু তোমাদের মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজে বড় হয়ে উঠতে হবে। সেটা যদি অভিনয় হয়, তাতেও কোনো বাধা নেই।’ ছেলেকে কখনো অভিনয় করার কথা বলেছেন কি না জানতে চাইলে জাহিদ হাসান বলেন, ‘বলেছি। সে বলে, অভিনয়ে একই জিনিস বারবার করতে হয়; সে কারণে অভিনয় তার পছন্দ নয়।’
শৈশব থেকে মা–বাবার অভিনয় দেখে বড় হয়েছেন সন্তানেরা। অভিনয় নিয়েও প্রায়ই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা হতো। জাহিদ হাসানের কাছে সন্তানেরা তাঁর কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। অভিনয় নিয়ে সন্তানেরা কী বলেন জানতে চাইলে জাহিদ হাসান বলেন, ‘তারা নাটক, সিনেমা দেখে। কাজগুলো নিয়ে কখনো হাসে, কখনো খুশি হয়, আবেগপ্রবণ হয়, অনেক সময় বলে—বাবা, এ চরিত্র তোমার করা ঠিক হয় নাই। আবার কোনো চরিত্র দেখে বলে—বাবা, চরিত্রটি তোমার করার দরকার ছিল, কেন করলে না। তাঁদের সমালোচনার পয়েন্টগুলো যৌক্তিক থাকে।’
সাম্প্রতিক সময়ের নাটকের মান নিয়ে কথা বলেন সন্তানেরা। অনেক কাজ তাঁদের ভালো লাগে না। এখন যে ভালো মানের নাটক হচ্ছে না, সেটা নিয়েও সন্তানের সঙ্গে কথা হয়। জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখন তো আগের মতো ভালো কাজ তেমন হচ্ছে না। এমনও হয় যে আমার অনেক কাজ দেখে তারা বলে—বাবা এগুলো কী কর, কাদের সঙ্গে কর, ভালো হয়নি। তারা আমার সমালোচনা করে। ভালো–মন্দ দুটোই বলে। তাদের এই সমালোচনা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
মেয়ে পুষ্পিতা এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চেষ্টা করছেন। তাঁর ইচ্ছা কানাডার ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এ জন্য একাডেমিক নানা প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। জানা গেল, আইইএলটিএসে ভালো স্কোর করেছেন। হয়তো সব ঠিক থাকলে এ বছর পড়াশোনার জন্য দেশ ছাড়বেন পুষ্পিতা। অন্যদিকে তাঁদের ছেলে সম্প্রতি ও লেভেল শেষ করেছেন। সামনে এ লেভেল পরীক্ষা দেবেন।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সমানভাবে জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করে গিয়েছেন জাহিদ হাসান। এমনও হয়েছে, পরিবারের চেয়ে শুটিংয়ে বেশি সময় কেটেছে। আফসোসের সুরে সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমি তো বেশির ভাগ সময় শুটিংয়ে কাটিয়েছি। সন্তানদের সঙ্গে আমার সময়টা বেশি কাটেনি। তাদের সবচেয়ে বেশি সময় দিয়েছে মৌ। তবে কাজের ফাঁকে যতটুকু পারি পরিবারকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন মাঝেমধ্যে কষ্ট লাগে। বাচ্চা দুটো বড় হয়ে গেল। আফসোস বাচ্চাদের সেভাবে সময় দিতে পারিনি। তখন একটানা শুটিং করেছি। এর মধ্যে কখন যে বাচ্চারা বড় হয়ে গেল...এটা ভাবতেই কষ্ট লাগে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সব মা–বাবার মতো আমি চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক। তাদের সব সময় বলি ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার পড়াশোনা করতে, জীবন চলাতে। তাদের কোনোভাবেই মানসিক চাপে রাখতে চাই না।’
মেয়ে দেশের বাইরে চলে যাবেন, সেটাও কষ্টদায়ক এই তারকার জন্য। মেয়ের ভালোর জন্য কষ্ট মেনে নিতে হচ্ছে। জাহিদ হাসান বললেন, ‘এখন অনেকে বিদেশে পড়তে গেলে আর দেশে আসতে চান না। কিন্তু আমি মেয়েকে বলে দিয়েছি, মা তোমরা দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাও অসুবিধা নেই, কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরতে হবে। পড়াশোনার জন্য আমি যেমন সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা এসেছিলাম। আমি কিন্তু সিরাজগঞ্জ বাড়ি করেছি, এখনো যাই। নাড়ির টান রাখি। আমার ভাইসহ পরিবারের আরও অনেকে দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছেন। তারা সবাই বড় সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছেন। মেয়েও সব শুনে বলল—না বাবা, দেশে ফিরে আসব। পড়াশোনার জন্যই যাচ্ছি।’ সবশেষে জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাকে সবাই যেভাবে আপন করে নিয়েছেন, সেভাবে সবাই আমার সন্তান ও পরিবারকে আপন করে নেবেন। সবার কাছে সন্তানদের জন্য দোয়া চাই।’