বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের অনেকে। নিজেরা তো ছিলেনই, কেউ চারপাশের সবাইকে সংগঠিত করার চেষ্টাও করেছেন। তাদের মধ্যে দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ প্ল্যাটফর্মের জাহিন ফারুক এর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁর কাছ থেকে আন্দোলনের শিক্ষা ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশার কথা শুনেছেন মনজুর কাদের
আপনার লড়াই কি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে ছিল নাকি সরকারের থাকা স্বৈরাচারী মনোভাব ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে?
জাহিন ফারুক : ছাত্রজীবন থেকেই আমি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, যদিও সেটা বিশেষ কোনো দলের হয়ে নয়। মতাদর্শিক জায়গা থেকে বলা চলে—আমি মার্ক্সবাদী রাজনীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত, যার একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক সিলসিলা আছে। আমার লড়াইটা ছিল মূলত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। যদিও বিগত সময়ের সব সরকার এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সমানভাবে দায়ী, তবু এটা বলতেই হবে যে আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যার অনিবার্য ফলাফল আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেখতে পেলাম।
আওয়ামী লীগের মতো দেশের এত পুরোনো একটি দলের এমন পরিণতি থেকে অন্য সব রাজনৈতিক দলের কোনো শিক্ষা নেওয়ার আছে কি? তাহলে সেটা কেমন মনে করেন।
জাহিন ফারুক : বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ১৯৪৭ পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস আওয়ামী লীগ ছাড়া লেখা প্রায় অসম্ভব। আমরা যদি সেই ইতিহাসের দিকে তাকাই, তবে শিক্ষণীয় যা তা সেখানেই লুকিয়ে আছে। মোটাদাগে বলতে গেলে, আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। যেকোনো অত্যাচারী শাসক দিন শেষে জনতার কাছে হার মানবেন, সেটা যে মতাদর্শেরই হউক না কেন। বাংলাদেশের লড়াকু জনতা এই সত্যটাই বারবার প্রমাণ করেছে।
যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে তাদের কাছে আপনার প্রত্যাশা।
জাহিন ফারুক : সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক, তবে সেটা তিন শব্দে বলা যায়—সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা। বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য সরকারকে এই তিনটি দফা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান সব শোষণযন্ত্র গুঁড়িয়ে দিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে এর কোনো বিকল্প নেই।
নানা মতের এই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত।
জাহিন ফারুক : প্রথমত, মনে করি, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পেশাদার শিল্পী ও কর্মীদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এটা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। দ্বিতীয়ত, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ-অন্যান্য লিঙ্গ পরিচয়ের মধ্যে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, শিল্প সৃষ্টির স্বাধীনতা ও দ্বিমত পোষণ করার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। এর জন্য প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে।