গরমে গলে যাচ্ছে তারকাদের মেকআপ!

নাটকের শুটিংয়ে তৌসিফ মাহবুব ও তানজিন তিশা
ছবি : সংগৃহীত

সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুটিংয়ে দৌড়াতে হয়েছে অভিনেতা তৌসিফ মাহবুবকে। পুরান ঢাকায় ঈদনাটকের শুটিং। মহল্লাজুড়ে ঘুরে ঘুরে শুটিং করতে হচ্ছে। সহ-অভিনেত্রী তানজিন তিশা। শুটিংয়ের আর সব ঠিক থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গরম। এই দাবদাহে ঘামে গলে গলে যাচ্ছে মুখের মেকআপ। গায়ের শার্ট, টি-শার্টও কিছুক্ষণ পরপর ভিজে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ঘামে ভেজা পোশাক নিয়ে, ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিয়ে শুটিং করতে হচ্ছে। এর মধ্যে বাড়তি শুটিং জীবন কাহিল করে দিচ্ছে, শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানালেন তৌসিফ।

এই সময় আবহাওয়া এমন হবে, আগে জানতাম না। শুটিংয়ের ডেটগুলো অনেক আগে থেকে দেওয়া। বাতিল করারও উপায় নেই। এখন শুটিং না করলে ফেঁসে যাবে। বাধ্য হয়েই অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় ক্লান্তি নিয়ে শুটিং করছি। প্রচুর রেস্ট নিয়ে শুটিং করছি। বেঁচে থাকতে হবে তো।

গত সপ্তাহে শুরু হওয়া বৈশাখী দাবদাহের মধ্যে এভাবেই শুটিং করছেন মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্ব, জোভান, সাবিলা নূর, তানজিন তিশা, সাফা কবির, তাসনিয়া ফারিণরা।

তৌসিফ বলেন, ‘এই গরমে অনেকে যেখানে ঘর থেকেই বের হচ্ছে না; ফ্যান, এসির নিচে বসে আছেন, সেখানে রোদ, ধুলাবালুর মধ্যে শুটিং করছি। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। প্রতিটা মুহূর্ত হাঁসফাঁস করছি। গত শনিবার সাভারে একটি রাজনৈতিক গল্পের নাটকে অভিনয় করলাম। রাস্তায় জনসংযোগের দৃশ্য ছিল। দৃশ্যগুলো করতে গিয়ে খুবই খারাপ লাগছিল। কিন্তু কিছুই করার নেই।’

গরমের টানা শুটিং করতে পারছেন না তারকারা। কখনো একটি শট, কখনো একটি দৃশ্যের শুটিং করেই ছুটতে হচ্ছে ফ্যান, গাছ, ছাতার নিচে, অথবা শুটিং হাউসের শীততাপনিয়ন্ত্রিত রুমে। ‘এই গরমে লোকাল বাসের মধ্যে শুটিং, ভিড়ে ঠাসা মার্কেটের মধ্যে শুটিং করতে হচ্ছে। রোজা রেখে কি অবস্থা হতে পারে একটু ভাবেন,’ গরমে শুটিং কেমন চলছে জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সাবিলা নূর। গতকাল উত্তরায় “নিরা” নাটকের শুটিং সেট থেকে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এই সময় আবহাওয়া এমন হবে, আগে জানতাম না। শুটিংয়ের ডেটগুলো অনেক আগে থেকে দেওয়া। বাতিল করারও উপায় নেই। এখন শুটিং না করলে ফেঁসে যাবে। বাধ্য হয়েই অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় ক্লান্তি নিয়ে শুটিং করছি। প্রচুর রেস্ট নিয়ে শুটিং করছি। বেঁচে থাকতে হবে তো।’

বেশির ভাগ গ্রামের গল্পের নাটকগুলো হয় ঢাকার বাইরে পুবাইলে। এসব গল্পে সালাহউদ্দিন লাভলু, জাহিদ হাসান, ফারুক আহমেদ, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, শামীম জামান, আ খ ম হাসান, শাহনাজ খুশি, নাদিয়া আহমেদসহ আরও অনেককে দেখা যায়।

গরমে অতিষ্ঠ অভিনয়শিল্পীরা। শুটিং করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন শিল্পীরা। শুটিংয়ের ফাঁকে বিশ্রামে মোশাররফ করিমের সেলফিতে এভাবেই ধরা দেন অভিনেতা নাহিয়ান, ওয়ালিউল রুমি, সাদিয়া রুবায়েত ও শামীম জামান

অভিনয়শিল্পীদের ছুটতে হয় গ্রামের রাস্তাঘাট, পুকুর, খেত, মাঠ, টিনের ঘরে। কিন্তু গরমের কারণে ঠিকমতো শুটিং করতে পারছেন না। সূর্যের এতটাই তাপ যে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে দুপুরে শুটিং বন্ধ রাখছেন। ৭ পর্বের একটি ঈদ নাটকের শুটিং থেকে অভিনেতা ও নির্মাতা শামীম জামান বলেন, দুপুরে গরমের জন্য শুটিং বন্ধ রাখতে হয়েছে। শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে গরম বাতাস বের হচ্ছে। তিনি আরও জানান, শিল্পী, কলাকুশলীদের জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন, পানি, লেবু, ফ্যান, ছাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কয়েকটি শুটিং বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গরমের মধ্যে তাঁরাও শুটিং বাড়িতে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা

নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত কাজ করছেন। উত্তরার স্বপ্নিল শুটিং বাড়ির মালিক বলেন, ‘আমাদের এক রুমে এসি থাকে। সেটা চালু রেখেছি। গরমের জন্য বাড়তি স্ট্যান্ড ফ্যান দিয়েছি। কিন্তু লাইটের সামনে তারকাদের অবস্থা কাহিল। কারণ, শুটিং শুরু হলে এসি, ফ্যান শব্দের জন্য বন্ধ করে রাখতে হয়।’
তারকাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসেও এখন জায়গা করে নিয়েছে গরম।

এসব স্ট্যাটাসে কেউ ‘গরম’ নিয়ে কবিতা লিখছেন, কেউ মজার ছলে সূর্যের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন তাপ কমাতে, কেউ আবার গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজছেন। অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী তপ্ত দুপুরে কুকুরের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এই গ্রীষ্মের রোদ কুকুরছানাকে বিরক্ত করতে পারে না। সে নিজের মতো করে দৌড়ায়, খেলে, লেজ নাড়াচ্ছে। পাশে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু পেলে সে পাশে থাকবে। সারা দিন রোদ উপভোগ করবে।’

শুটিংয়ের ফাঁকে অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ মজা করে গরম নিয়ে কবিতা লিখে ফেললেন, ‘বাইরে তাপমাত্রা গরম/ভেতরে ঘর গরম/অফিসে বস গরম/শুটিংয়ে ডিরেক্টর গরম/জিনিসের দাম গরম/ঘরে বউ গরম/জ্যামে গাড়ি গরম/রাস্তায় পুলিশ গরম/ধুর কি হাবিজাবি লিখতেসি মাথা পুরা গরম, গরম কবি ইরফান সাজ্জাদ।’ অভিনেত্রী সুষমা সরকার দাবদাহের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘ওগো কড়কড়ে তাপদাহ, আর কত পোড়াবে বলো।’

ছবিটি পোস্ট করে অভিনেত্রী কেয়া পায়েল লিখেছেন, ‘উফ্‌ গরম!’

এর আগে গরমের মধ্যে শুটিং করতে গিয়ে অসুস্থ হয়েছিলেন তরুণ অভিনেত্রী কেয়া পায়েল। তিনি শুটিং থেকে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘উফ্ গরম!’

গরমের মধ্যে গত শনিবার শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন জাহিদ হাসান। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে গতকাল জাহিদ হাসান বলেন, ‘ঈদে এমনিতেই কম কাজ করছি। তার মধ্যে গত শনিবার শুটিং করলাম। নানা রকম অভিজ্ঞতা হলো। খুব কাছ থেকে বুঝতে পারলাম, একজন রিকশাচালকের কষ্টটা কেমন, একজন কৃষকের কষ্টটা কেমন হচ্ছে, একজন খেলোয়াড় যিনি রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে খেলছেন, তাঁর কষ্টটা কেমন। সবার প্রতি সম্মানটা আরও বেড়ে গেল।’