হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন, কে এই মিহির

রূপসজ্জাকারী মিহির দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ায় কাজ করেন। তাঁর বাড়ি সিলেট অঞ্চলে। নানা কারণে তাঁকে এড়িয়ে চলতেন শিল্পী–কলাকুশলীরা। পরবর্তী সময়ে কাজ কমায় সে হতাশ হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে কাজ কম থাকলেও শুটিংয়ে পরিচয় হওয়া বিভিন্ন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ান। এভাবেই তাঁর সঙ্গে করোনার আগে অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

হোমায়রা হিমু। ছবি: ফেসবুক

অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান বলেন, ‘মিহির অনেক আগে নিয়মিত কাজ করত। কিছু সমস্যার কারণে তাকে কাজে তেমন ডাকা হতো না। কোনো অভিনয়শিল্পী প্রস্তাব করলে হয়তো তার ডাক পড়ত। মিহিরের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, অল্প সময়ে সে সবার সঙ্গে মিশতে পারত। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্যদের মতো হয়ে যেত। একবার ভালো সম্পর্ক হলেই যেকোনো প্রয়োজনে যে কেউ সহজেই তাকে পেত। এই কারণে একসময় সে সম্পর্ক গড়ে তোলা অভিনয়শিল্পীদের বাসাতেই থাকা শুরু করে। ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পাশে থাকত। এমনটাই জানতে পেরেছি।’

সম্প্রতি হোমায়রা হিমু মারা যাওয়ার পর আবার মিহিরের নাম এলে বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী চিন্তিত হন। অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘হোমায়রা হিমু কিছুদিন কাজ করেননি। কিছুটা বিরতির পর সম্প্রতি সে দু–তিনটা ধারাবাহিকে নাম লিখিয়েছিল। এই বছরের শুরুর দিকে আমাদের শিল্পীদের বড় আয়োজন ছিল। সেখানে তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ ছিল। এমন না যে তার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল বা কাজ পাচ্ছিল না। অনেকেই বলছেন, কেউ মারা গেলেই তাকে সবাই স্মরণ করেন, বিষয়টা এমন না। কেউ দূরে থাকলে অন্যদের কী করার আছে?’

হোমায়রা হিমু। ছবি: ফেসবুক

হোমায়রা হিমুর বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। তাঁর মা–বাবা কেউ বেঁচে নেই। এসব নিয়ে মাঝে মধ্যে তাঁর মধ্যে একাকিত্ব পেয়ে বসত বলে জানান তাঁর সহকর্মীরা। এ জন্য অনেকটা নিজের মতো করেই চলতে পছন্দ করতেন। অনলাইনে তাঁর সক্রিয় থাকা কথা জানা গেছে।

কেউ না থাকায় মৃত্যুর পরে তাঁর সব দায়িত্ব পালন করেছেন অভিনয় শিল্পী সংঘ। তখন তারা স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করেই পাশে ছিল। কিন্তু এবার মনে সন্দেহ জাগায়। নাসিম আরও বলেন, ‘এর আগেও একইভাবে আরেক অভিনয় শিল্পীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে একজন পালিয়ে যায়। এবারও হিমুকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে একজন পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, তার বাসায় সেই মিহিরই ছিল। এই নিয়ে ঘটনা কী, কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, সেটা পোস্টমর্টেম হওয়ার পরেই জানা যাবে। কেউ দায়ী থাকলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলব। কিন্তু এখন আমরা কোনো কিছু বলতে পারছি না।’

অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর আত্মহত্যা করার কথা শুনে হতবাক সহকর্মীরা। ঘটনাটি তাঁরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। অভিনেত্রী দীপা খন্দকার বলেন, ‘অনেকেই বলছে, হিমুর জীবন যাপন একটু অন্য রকমের ছিল। আমাদের যুক্তি হচ্ছে, একটা মানুষ শৃঙ্খলার বাইরে জীবন যাপন যদি করেও এর মানে এই না যে কারও তাকে মেরে ফেলার অধিকার আছে। মিহির এবং ওর সঙ্গে আরেকজন যে ছিল, শুনেছি সে তার বয়ফ্রেন্ড। এখন যেই হোক না কেন, আমার ভাষ্য, একটা বাসায় দুটো মানুষ ছিল। তাদের উপস্থিতিতে একটা মানুষ আত্মহত্যা করে বসল। দরজা খোলা ছিল, একটা মানুষ বলছেও সুইসাইড করে ফেলবে, অথচ তারা কিছুই দেখতে পেল না। মেয়েটা মরেই গেল। এটা আমার কাছে রিয়েলিস্টিক মনে হচ্ছে না।’

ঘটনার দিন হিমুকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান জিয়াউদ্দিন। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকার বংশাল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিয়াউদ্দিনের বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উঠে আসে, হিমুর সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের ৯ বছর ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাঁরা একসঙ্গে থাকতেন। তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। তাঁদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া হতো। পরে আত্মহত্যা করেন হিমু।
অভিনেতা রওনক হাসান বলেন, ‘এই আত্মহত্যার ঘটনাটা আমাদের কাছে একটু ধোঁয়াশা তৈরি করছে। এ ছাড়া হিমুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এখন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়া কিছুই বলা যাবে না।’ সব শেষে দীপা খন্দকার জানান, মিহিরকে তিনি অনেক দিন থেকেই চেনেন। বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে সহযোগিতাও নিয়েছেন।

দীপা বলেন, ‘মিহিরকে আমি মেকআপশিল্পী হিসেবেই বেশি পেয়েছি। পারসোনালি খুব একটা মিশিনি। পরিচয় থাকার কারণে সে অনেক সময়ই ফোন করে বলেছে, ভালো নেই, খেতে পায় না। শুনেছি, এটা–ওটার অভ্যাস আছে। বিভিন্ন সময় টাকা ধার চেয়েছে। অনেকেই তো অনেক সময় হেল্প করি, সেভাবেই মিহিরকেও হেল্প করেছি। কিন্তু হিমুর বাসায় মৃত্যুর আগে থাকাটা সন্দেহজনক, স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। বলতে তো পারব না কে দোষী।’ জানা যায়, আগে অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন।