শ্রীজাত ও কপিল শর্মা। কোলাজ
শ্রীজাত ও কপিল শর্মা। কোলাজ

‘একলা চলো রে’ গানে অশালীন অঙ্গভঙ্গি! কপিলের অনুষ্ঠান নিয়ে ক্ষুব্ধ শ্রীজাত

নেটফ্লিক্সের আলোচিত ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’ নিয়ে এবার তৈরি হয়েছে বিতর্ক। জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানের একটি পর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ‘একলা চলো রে’ নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের কবি, গীতিকার ও নির্মাতা শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ নিয়ে একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট দেন শ্রীজাত, এরপর প্রতিবাদ জানান পশ্চিমবঙ্গের অনেক শিল্পী, কলাকুশলী।

নিজেকে ‘কপিল শর্মার আমি একজন অনুরাগী’ দাবি করে লেখা এই পোস্টে শ্রীজাত তুলে ধরেছেন কপিলের অনুষ্ঠানের একটি সাম্প্রতিক পর্ব দেখার অভিজ্ঞতা। শ্রীজাত লিখেছেন, ‘এইবার রংটা একটু বেশি চড়ে গেছে, তাই লিখছি। বহুবার টেলিভিশনের জন্য নানা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছি, তাই জানি, পর্দায় একজন শিল্পী বা সঞ্চালক যা যা বলেন, তার সবটাই যে তাঁর নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত কথা, এমনটা নয়।

‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’ শুরু হয়েছে । এক্স থেকে

একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠানেও ক্রিপ্ট তৈরি করে দেওয়ার জন্য একাধিক লেখকের দল থাকে, সেই চিত্রনাট্য অনুযায়ী অনুষ্ঠানের চলন সাজানো হয়, সঞ্চালক বা শিল্পীদের কথার বেশ কিছু অংশও সেই সাজানো চিত্রনাট্যের আওতায় পড়ে। আমি নিশ্চিত এই শোর চিত্রনাট্য লেখার জন্য নির্দিষ্ট লেখকেরা আছেন এবং নিঃসন্দেহে কপিল শর্মারও সে বিষয়ে বক্তব্য, সংযোজন ও সম্মতি আছে। তাই যদি ধরে নিই, তাহলে বলতে হয়, তাঁরা সম্প্রতি জেনে বা না জেনে একটি অন্যায় করেছেন। ভুল নয়, অন্যায়। আমি স্পষ্টভাষায় তার বিরোধিতা করার জন্য প্রাথমিক ভাবে এই লেখাটি লিখছি।’

সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের ওয়েব ফিল্ম ‘দো পাত্তি’র প্রচার উপলক্ষে কপিলের শোতে এসেছিলেন কাজল ও কৃতি শ্যানন। শ্রীজাতের অভিযোগ সেই পর্বকে ঘিরেই। কী এমন হয়েছিল সেই পর্বটিতে? শ্রীজাত লিখেছেন, ‘কৃষ্ণ অভিষেক সম্ভবত কাজলকে বাঙালি বংশোদ্ভূত হিসেবে পেয়েই রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে মশকরার সরঞ্জাম হিসেবে বেছে নেন। হঠাৎ তো বেছে নেননি, সেভাবেই চিত্রনাট্য সাজানো ছিল। ঠিক কী হয়েছে, কেমনভাবে হয়েছে, এখানে বিস্তারিত বলছি না। কিন্তু “একলা চলো রে” গানটি নিয়ে কৃষ্ণ অভিষেক যে ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তার উদ্রেক করেছেন, তা সম্মান ও শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে গেছে, অন্তত আমার চোখে। যে বা যাঁরা ওই কৌতুক–দৃশ্য রচনায়, উপস্থাপনায়, অনুমোদনে ও সম্প্রচারে জড়িত থাকলেন, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালাম। স্পষ্টভাষায়, দ্ব্যর্থ উচ্চারণে।’

নিজের পোস্টে শ্রীজাত আরও লিখেছেন, ‘কৌতুক আর তামাশার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম রেখা আছে, সেটা ঝাপসা হয়ে এলেই বিপদ। কী বলছি, কাকে নিয়ে বলছি, কতটুকু বলছি, এসব না ভেবে কেবল লোক হাসানো টিআরপির জন্য নিবেদিতপ্রাণ হতে হতে মানুষ একসময়ে নিজের সীমা বিস্মৃত হয়। তখন তাকে মনে করিয়ে দিতে হয়, এই চৌকাঠ পেরোনো তোমার উচিত হয়নি। আমি সেটুকুই করছি।’

একইসঙ্গে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল’ শোর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার দাবিও জানান শ্রীজাত। তা না হলে আইনি পথে হাঁটার কথাও জানিয়ে রেখেছেন তিনি।
তাঁর এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অনেক শিল্পী। পরে শ্রীজাতের পোস্টটি শেয়ার করেন সুরকার ও নির্মাতা ইন্দ্র দ্বীপ দাশগুপ্ত। তাঁর পোস্টের মন্তব্যে ঘরেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকে।
তবে এ বিষয়ে নেটফ্লিক্স বা কপিল শর্মার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।