ঈদ সামনে রেখে সচরাচর দুই থেকে তিন মাস আগে ঈদের নাটকের শুটিং শুরু হয়। সেটা চলে চাঁদরাত পর্যন্ত। কিন্তু এবার ভিন্ন পথে হাঁটছে টেলিভিশন ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এনটিভি, বাংলাভিশন, মাছরাঙাসহ ৭টি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে ঈদের নাটকের প্রায় ৪০ ভাগ কাজ শেষ করেছেন। কেউ বা ৩০ ভাগ। বেশির ভাগ টেলিভিশন ২০ ভাগের ওপর ঈদের নাটকের শুটিং করেছেন। বাকি কাজের প্রস্তুতি শেষের দিকে। কেউ কেউ আবার একসঙ্গে দুই ঈদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
এর আগে করোনা শুরু হলে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঈদের নাটকের সংকটে ভুগেছিল। কারণ, ঈদের নাটক নিয়ে কাজ করার সময় শুরু হয় করোনা। দীর্ঘ সময় শুটিং বন্ধ ছিল। এর মধ্যেই চলে আসে ঈদ। করোনায় ঘরবন্দী সময়ে নাটক নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল। কিন্তু টেলিভিশনের হাতে খুব বেশি নতুন নাটক ছিল না। নাটকের অভাবে অনেক টেলিভিশন প্রতিবারের মতো ঈদের আয়োজন করতে হিমশিম খায়। জানা যায়, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল এখন আর ঝুঁকি নিতে চায় না।
এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান আলফ্রেড খোকন বলেন, ‘আমরা এবার অনেক আগেই ঈদের নাটকের শুটিং শুরু করেছি। সামনে নির্বাচন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে যায়, বলা যায় না। তা ছাড়া আমরা সময় নিয়ে মানের দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা শুরুর দিকে এভাবেই নাটক নির্মাণ করতাম। মাঝখানে চাঙ্ক বিক্রি করে দেওয়ার কারণে অনেক নাটকের মান নিয়ে আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখন আবার আমরাই প্রযোজনা করে নাটকগুলো নির্মাণ করছি। ইতিমধ্যে আমাদের ৪০ ভাগ নাটকের কাজ শেষ হওয়ার পথে। এর মধ্যে কিছু নাটক ভালোবাসা দিবসের জন্যও।’ এনটিভি ঈদের আয়োজনে নানা চমক রেখেছে বলেও জানান তিনি। তবে সেগুলো এখনই বলতে চান না।
ঈদকে সামনে রেখে এবার একসঙ্গে দুই ঈদের কাজ কিছুটা গুছিয়ে নিচ্ছে মাছরাঙা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে তারা ঈদ আয়োজনের জন্য বেশ কিছু নাটক চূড়ান্ত করে ফেলেছে। বৈচিত্র্য আনতে বিভিন্ন ধরনের তারকাদের কাজকে প্রাধান্য দিচ্ছে। মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রোগ্রাম ইনচার্জ এ এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঈদের প্রস্তুতি শুরু করেছি। আমার মনে হয় অন্যরাও করছে। কারণ, পরিস্থিতি কী হয়, সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। আমরা দুটোকে সামনে রেখে একটা সামঞ্জস্য করে এগোচ্ছি। কিছু নাটক হাতে পেয়েছি। কিছু কাজ হচ্ছে।’ একই কথা বললেন বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান তারেক আকন্দও। তাঁরা প্রায় ২০ ভাগের মতো কাজে হাত দিয়েছেন। বাকি ৮০ ভাগের মধ্যে সিংহভাগ কাজ বণ্টন করে দিয়েছেন।
বিভিন্ন চ্যানেল সূত্রে জানা গেল, সময়ের জনপ্রিয় তারকাদের ওপর নির্ভর করেই নির্মিত হচ্ছে কাজগুলো। এসব তারকার মধ্যে রয়েছেন মোশাররফ করিম, জোভান আহমেদ, নিলয় আলমগীর, ইরফান সাজ্জাদ, খাইরুল বাসার, তানজিন তিশা, সাফা কবির, তানিয়া বৃষ্টি, হিমি, সাদিয়া, আয়মানসহ আরও অনেকে।
নাটকগুলো এনটিভি, বাংলাভিশনসহ বেশ কিছু টেলিভিশনে প্রচারিত হবে। অভিনেতা খাইরুল বাসার জানান, আগামী মাস থেকে তিনি নাটকের বাইরে অসমাপ্ত দুটি সিনেমা ও ওটিটির কাজে অংশ নেবেন। এর ফাঁকেও কিছু কাজে অংশ নিয়েছেন। সেগুলো ঈদে প্রচারিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পুরোদমে ঈদের কাজ শুরু করবেন। তবে অনেক অভিনয়শিল্পী এখনো ঈদের কাজ শুরু করেননি। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন তৌসিফ মাহবুব। তিনি বলেন, ‘ঈদের বেশ কিছু কাজের চিত্রনাট্য পেয়েছি। খুব বেশি কাজ করব না। এ জন্য তাড়াহুড়া নেই। আমি আগামী মাসে ঈদের কাজে হাত দেব।’
সেরনিয়াবত শাওন, জুবায়ের ইবনে বকর, রাফাত মজুমদার, রুবায়েতসহ আরও অনেক নির্মাতা এর মধ্যেই ঈদের নাটকের শুটিং করছেন। শাওন বলেন, ‘নির্বাচন বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে যায়, সে কারণেই চ্যানেলগুলো তড়িঘড়ি করে ঈদের নাটক নির্মাণ করছে। এর মধ্যে কিছু নাটক ঈদের আগেও সুযোগ বুঝে প্রচারিত হবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক পরিচালক বলেন, ‘এখন যে ঈদের নাটকের বাজেট পাঁচ লাখ টাকা, জানুয়ারিতে সেই নাটকেরই বাজেট দুই লাখ বাড়বে। এটাও শুটিং শুরুর কারণ।’