তিন সপ্তাহের বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৮১ বছর বয়সে মারা গেলেন অভিনয়শিল্পী জামালউদ্দিন হোসেন। এর মধ্য দিয়ে অভিনয়শিল্পী রওশন আরা হোসেনের সঙ্গে তাঁর ৫৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটেছে। বেশ কিছুদিন ধরে ভালো নেই রওশন আরা হোসেনও। তিনি পারকিনসনস রোগে ভুগছেন। ছেলে তাশফিন হোসেন আজ শনিবার সকালে প্রথম আলোকে বললেন, ‘বাবা মৃত্যুর সময় মা হাসপাতালেই ছিলেন। তাঁর অবস্থাটা এখন এমন, এই মনে থাকে তো এই মনে থাকে না। তাঁকে নিয়ে তো আমাদের চিন্তার শেষ নেই। বাবা যেমন রোগে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন, মা–ও আসলে খুব কষ্ট পাচ্ছেন।
তাশফিন হোসেন কানাডার ক্যালগ্যারি থেকে প্রথম আলোকে জানালেন, শুক্রবার এখানকার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় তাঁর বাবা মারা যান। এই সময়ে তাঁদের সবার সঙ্গে মা–ও ছিলেন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ বাবার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন। কাঁদলেনও কিছুক্ষণ। বুঝতে পেরেছেন, আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
তাশফিন বললেন, ‘ওই যে বললাম, আম্মার অবস্থা এখন এমন, এই কিছু মনে থাকে তো পরক্ষণে মনে থাকে না। তাই হাসপাতালের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে আম্মাকে নিয়ে আমরা বাসায় চলে আসি। এরপর কিছু সময় আমরা ভাইবোন মায়ের সঙ্গে কথা বলি। এরপর রাত নয়টার সময় খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জামালউদ্দিন হোসেন ও রওশন আরা হোসেনের ছেলে তাশফিন হোসেনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ১৯৬৫ সালে তাঁদের মা–বাবা বিয়ে করেন। মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের একসময়ের ব্যস্ত অভিনয়শিল্পী দম্পতি জামালউদ্দিন হোসেন ও রওশন আরা হোসেনের ছেলে–মেয়ে দুজনই কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বাস করার কারণে তাঁরা দুজনও দুই দেশ মিলিয়ে থাকতেন। মায়ের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তাশফিন বলেন, ‘আম্মার শরীরটা মোটেও ভালো নয়। খুবই খারাপ। দুই বছরের বেশি সময় ধরে আম্মা পারকিনসনস রোগে ভুগছেন। ভালো করে কথা বলতে পারেন না। চলতে তো পারেনই না।’
অভিনয়শিল্পী দম্পতি রওশন আরা হোসেন ও জামালউদ্দিন হোসেন একসঙ্গে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন জামালউদ্দিন হোসেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই সদস্য পরে টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। গত ১৫ বছর অভিনয়ে একেবারেই অনিয়মিত ছিলেন তিনি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। মাঝেমধ্যে যখন দেশে আসতেন, টুকটাক অভিনয় করতেন। তবে সাত-আট বছর ধরে একেবারেই অভিনয়ে নেই। জামালউদ্দিন হোসেনের ছেলে তাশফিন হোসেন কানাডার মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক। মেয়ে তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।
তাশফিন হোসেন প্রথম আলোকে জানালেন, কানাডার ক্যালগ্যারিতে স্থানীয় সময় শনিবার বাদ জোহর জামালউদ্দিন হোসেনের মরদেহ সমাহিত করা হবে। ১৯৪৩ সালের ৮ অক্টোবর ভারতের চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করে জামালউদ্দিন হোসেন। দেশভাগের সময় পরিবারের সবাই চট্টগ্রামে আসেন। ওখানেই বসবাস শুরু করেন। জামালউদ্দিন হোসেনের স্কুলে কেটেছে চট্টগ্রামের সেন্ট প্ল্যাসিড স্কুলে। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে এইচএসসি শেষ করে তিনি বুয়েটে ভর্তি হন। বুয়েটের শিক্ষাজীবন শেষে তিনি চট্টগ্রাম স্টিল মিলসে চাকরি শুরু করেন। এরপর আস্তে আস্তে অভিনয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়েন।