বিখ্যাত মা-বাবার সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠায় অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন, তাঁর খ্যাতি পরিবার সূত্রেই পাওয়া। এতে মন খারাপ হলেও নিজের মতো করেই এগিয়ে চলেছেন অভিনেতা ইরেশ যাকের। চিকিৎসার কারণে তিনি এখন আছেন থাইল্যান্ডে। হাসপাতাল থেকেই কাজ ও অন্য নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন মনজুরুল আলমের সঙ্গে।
সম্প্রতি ভিডিও প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ওয়েবফিল্ম ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। এখানে ‘তানভীর’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের। ওয়েব সিনেমাটি নিয়ে যখন দর্শকমহলে আলোচনা হচ্ছে, তখন দেশের বাইরে অভিনেতা। জানালেন একটি অস্ত্রোপচার করাতে থাইল্যান্ডে গিয়েছেন। তাই দর্শকেরা চরিত্রটি কতটা পছন্দ করছেন, সেটা তেমন একটা জানার সুযোগ পাননি। তবে ফেসবুক গ্রুপে আলোচনা হচ্ছে, সেটা নজর কেড়েছে। তিনি জানান, বাঁ পায়ের একটা অংশের হাড় কিছুটা বড় হয়েছে। সেটার অস্ত্রোপচার করাতেই স্ত্রীসহ থাইল্যান্ডে রয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে অস্ত্রোপচারের আগে কথা বললেন তিনি।
চরিত্র থেকে চরিত্রে
‘একজন অভিনয়শিল্পীর কাজ কী?’ শুরুতেই প্রশ্ন করলেন ইরেশ। তিনি মনে করেন, চরিত্র ছোট হোক বা বড় হোক, এটা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু চরিত্রের আলাদা বিন্যাস থাকবে। চরিত্রটিকে যেন আলাদা করে খুঁজে পাওয়া যায়। এটাকেই গুরুত্ব দেন ইরেশ। তিনি বলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে সবাই চান, পর্দায় উপস্থিতির সময়টা যেন দর্শকের ওপর প্রভাব ফেলে। মানুষের মনে রাখার জন্য চরিত্র বড় হতে হবে, সেটা আমি মনে করি না। এটা প্রচলিত একটা বিশ্বাস। অনেক সময়ই আমাকে শুনতে হয় ছোট চরিত্রে যেন অভিনয় না করি। কিন্তু চরিত্রটি ভালো হলে চরিত্র থেকে চরিত্রে যেতে আমার কোনো বাধা নেই।’
মানুষ যা বলার বলুক
অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ইরেশ যাকেরের। অনেক সময় দেখা যেত, গল্প বা চরিত্র পছন্দ হলে নিজস্ব প্রযোজনায় দুই–একটা নাটকে কাজ করতেন। কিন্তু সেগুলো নিয়েও শুনতে হতো নানা কথা। তিনি বলেন, ‘নিজের প্রযোজনায় একটি কাজ করলে সেটা নিয়ে বহু নেতিবাচক কথা হয় আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। ভীষণ খারাপ লাগত। একসময় কম কাজ করেছি, সংকোচবোধ হতো। কিন্তু এগুলো এখন আর আমার কাছে ঝামেলা মনে হয় না। স্ত্রী একবার বলল, “শোনা যাচ্ছে ইরেশকে কাস্টিং না করলে কাজ পাওয়া যায় না।” অদ্ভুত কথা। মানুষের এসব কথা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মানুষ যা বলার বলুক।’
বিখ্যাত মা–বাবার সন্তান হলে যা হয়
দেশের গুণী অভিনয়শিল্পী আলী যাকের ও সারা যাকেরের সন্তান ইরেশ যাকের। নিজের মতো করে অভিনয় শিখেছেন। ভক্তদের কাছে হয়ে উঠেছেন ইরেশ যাকের। নিজের এই অর্জন নিয়ে নানা কথা শুনতে হয়। ইরেশ বলেন, ‘বিখ্যাত মা–বাবার সন্তান হলে যা হয়, সবাই মনে করেন, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। ব্যক্তিগত বা পারিপার্শ্বিক দিক থেকেই ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই বিচার করেন। সেই জায়গায় গুণগত মান ও পারিপার্শ্বিকতা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রির মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, ইন্ডাস্ট্রির বাইরে দর্শকদের কাছে ভালো না হলে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।’
বড় অংশজুড়েই পরিবার
‘আমি ছোট থেকেই পরিবারে খুবই ক্লোজ। আর ঘরকুনো। যে কারণে পরিবারের সবার সঙ্গে বেশি সময় কাটত। এখনো মা, আমার স্ত্রী, কন্যা আর বোনের সঙ্গে সময় কাটে। তারা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাবা চলে যাওয়ার পর খুবই মিস করি। এখন যাঁরা আছেন, সেই পরিবারই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমার বড় অংশজুড়েই পরিবার,’ বলেন ইরেশ যাকের। এখন নিয়ম করে মায়ের সঙ্গে একবেলা সময় কাটান। এ সময় কাজগুলো নিয়ে কথা হয়। পোষা প্রাণী তাঁরা ভালোবাসেন, সেসব নিয়ে কথা হয়। ইরেশ বলেন, ‘কী সিনেমা দেখলাম, কী বই পড়লাম, আমাদের ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা হয় মায়ের সঙ্গে। বাবা ও নানি মারা যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে সময় কাটানো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
যখন বাবা
বিশেষ কোনো ব্যস্ততা না থাকলে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে মেয়ের সঙ্গে। মেয়েকে সকালে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসা, নিয়ে আসার কাজ নিজেই করেন। মেয়েকে ঘিরেই তাঁর দিনের সূচি তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে কেন্দ্র করেই আমার সময় কাটে। সে দ্রুত ঘুমায়। তার আগেই বাসায় চলে যাই। মেয়ের বিষয়গুলোই আমার কাছে প্রথম প্রায়োরিটি। চার বছর এভাবেই কাটছে। এমনও হয়েছে, কাজও কম করেছি। মনে হয়েছে, কাজটি করলে মেয়েকে বেশি সময় দিতে পারব না। মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকব, কী দরকার। মনে না ধরলে সেই কাজ করি না। বয়সটা তো জটিল। সন্তানের আরেকটু বয়স হয়ে গেলে সে স্বাধীন হতে চাইবে। আমার সঙ্গে হয়তো এতটা ক্লোজ থাকবে না। এই সময়টা মেয়ের সঙ্গে কাটানো জরুরি।’