সুদর্শন বলে স্কুল-কলেজে সব সময়ই আলাদা নজর কেড়েছেন। এভাবেই এক কাস্টিং ডিরেক্টর বন্ধুর নজরে পড়ে যান। সেই বন্ধুর মাধ্যমেই প্রথম একটি বিজ্ঞাপনে নাম লেখান। শখের বশেই ‘এক্সট্রা’ চরিত্রে নায়কের পেছনে দাঁড়িয়ে যান অভিনেতা আবু হুরায়রা তানভীর। এক্সট্রা থেকে তাঁর নায়ক হয়ে ওঠার গল্প শোনাচ্ছেন মনজুরুল আলম
পড়াশোনার ফাঁকে হাতে বেশ সময় থাকত। তাই বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে শখ করে বিজ্ঞাপনের প্রধান চরিত্রের পেছনে দাঁড়িয়ে যান আবু হুরায়রা তানভীর। এভাবে বেশ কিছু কাজ করেন। কিন্তু সেগুলোতে অনেক চরিত্রের ভিড়ে নিজেই নিজেকে খুঁজে পেতেন না। একপর্যায়ে প্রধান চরিত্রের সঙ্গে নিজের যোগ্যতা মেলাতে থাকেন। মনে হতে থাকে, বিজ্ঞাপনের প্রধান মডেলের চেয়ে যোগ্যতায় তিনি কোথায় পিছিয়ে রয়েছেন। আবু হুরায়রা বলেন, ‘দেখলাম, যাদের পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করি, তাদের অনেকের চেয়ে আমার যোগ্যতা কোনো অংশে কম নয়। তাহলে নিজেকে বঞ্চিত করব কেন? ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট হিসেবে কেন কাজ করব? প্রধান চরিত্রের জায়গায় যেতে হলে কী কী করতে হবে? অডিশন দেওয়া শুরু করি। কিছু কাজও জুটে গেল।’
মডেল থেকে নায়ক
এক যুগ আগে ২০১২ সালে মডেল হিসেবে যখন কাজ শুরু করেন, তখন অভিনয়ের কোনো ইচ্ছাই ছিল না। অভিনয়ের জন্য ধরনা দিতেন না, কাউকে ফোনও করতেন না। পরিচিত কেউ মডেল হিসেবে ডাকলেই অডিশন দিয়ে কাজ করতেন। এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন। হঠাৎ ফেসবুকে তাঁর ছবি দেখে ফোন দেন পরিচালক বদরুল আনাম সৌদ। পরিচালকের সঙ্গে দেখা করার পরে জানতে পারেন, ‘গহীন বালুচর’ সিনেমার নায়কের চরিত্রে তাঁকে ভাবছেন তাঁরা।
শুরু হয় নায়ক হিসেবে পথচলা। ‘প্রথম সিনেমায় কাজগুলো যেভাবে হতে থাকে, সেগুলো আমার খুব ভালো লাগে। আগে কোনো কিছু এতটা এনজয় করিনি। ছয় মাসের অনুশীলন, বড় পরিসরে শুটিং, তারকার জীবনযাপন—সবই এনজয় করছিলাম। শুটিংয়ের সময়ই মনে হয়, অভিনয় পেশা হিসেবে নিলে মন্দ হয় না।’
এভাবেই ২০১৫ সালে নায়ক হয়ে পর্দায় আসেন আবু হুরায়রা তানভীর।
তারপর পরবর্তী সিনেমার জন্য অপেক্ষা।
নায়ক থেকে শিক্ষা
কিন্তু সেই সময়ে ঢালিউডে সিনেমা হলের সংখ্যা, সিনেমা নির্মাণ কমতে থাকে। তখন শিল্পী–কলাকুশলীরা অনেকেই সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। তাঁর মনে হতে থাকে, শুধু নায়ক চরিত্রে অভিনয় করতে চাইলে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে। তার চেয়ে নিয়মিত অভিনয় করে যাওয়া উচিত। আবু হুরায়রা বলেন, ‘আমাকে স্ক্রিনে থাকতে হবে, এই ভাবনা থেকে ২০১৮ সালে নাটকে অভিনয় শুরু করি। এখানেও বেকায়দায় পড়ি। বিজ্ঞাপন ও সিনেমায় বড় আয়োজনে কাজের অভ্যাস। কিন্তু নাটকে আয়োজন কম। প্রথম দিকে মনে হলো, ভুল করলাম কি না। পরে মনে হলো, নায়ক মানে কাঁধে অনেক দায়িত্ব, বাধা, একটি কাজে অনেক সময় দিতে হয়। তার আগে আমাকে অভিনেতা হতে হবে। এখন আমি নায়ক নই, অভিনেতাই হতে চাই।’
২০০ কোটি বনাম অভিনয়
বর্তমান সময়ে দর্শকেরা নেটফ্লিক্সসহ নানা মাধ্যম থেকে নিয়মিত কনটেন্ট দেখছেন। আবু হুরায়রার মতে, এসব বিদেশ কনটেন্ট দেখে কেউ তুলনা করে না, ২০০ কোটি বনাম ১–২ কোটি টাকার বাংলা সিনেমা বা সিরিজ অথবা ২–৩ লাখ টাকার নাটক।
সবাই মানের জায়গায় তুলনা করেন, কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ। দেশের একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে এ তুলনায় যাওয়াটা খুবই চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে এই অভিনেতা বলেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ছোট। এখানে আমার ভালো চরিত্রে অভিনয় করা ছাড়া আর কিছু নেই। আমার একটাই কথা, গল্প পছন্দ হলে আমি এক–দুই মিনিট ব্যাপ্তির চরিত্রও করতে চাই। ওই সময়ে দর্শক যেন বুঝতে পারে, আমি পর্দায় আছি। বাজেটের চেয়ে আমার অভিনয় নিয়ে দর্শক যেন কথা বলে, সেটাই চাই। তুলনায় হাহুতাশ করে লাভ নেই। দিন শেষে দর্শকের করতালি অনুপ্রেরণা। যে কারণে সব সময় অভিনয় শেখার মধ্যে থাকি। নিজেকে ডেভেলপ করতে থাকি। আমার কাছে মনে হয়, একজন অভিনেতার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি পুরস্কার নয়, আত্মসন্তুষ্টি আর অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। কদিন আগে চরকির ৩৬ ২৪ ৩৬ সিনেমার দৃশ্যগুলো দর্শক যেভাবে পছন্দ করছে, এটা প্রাপ্তির তালিকায় নতুন অভিজ্ঞতা যোগ হলো।’
এই অভিনেতা জানান, তাঁর ‘ফ্রেঞ্জি’, ‘গিরগিটি’সহ একাধিক সিনেমা, সিরিজ মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে তাঁর অভিনীত ‘রাত জাগা ফুল’, ‘ওমর’ সিনেমা, ‘ক্রিমিনাল’ ওয়েব সিরিজ, ‘বুক পকেটের গল্প’ নাটকগুলো প্রশংসিত হয়।