আমার বাবাটা একা হয়ে গেল: অপর্ণা ঘোষ

অপর্ণা ঘোষ ও তাঁর মা ঝর্ণা ঘোষ
ছবি : অপর্ণার ফেসবুক

তিন সপ্তাহ আগে আলাপে অভিনয়শিল্পী অপর্ণা ঘোষ জানিয়েছিলেন, মা ঝর্ণা ঘোষকে নিয়ে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে আছেন। কিডনি রোগে আক্রান্ত মায়ের ডায়ালাইসিস চলছিল। এভাবে চলছিল টানা ২৫ দিন। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একটা সময় তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাসেবা দেওয়ার দরকার হয়। গতকাল শনিবার বদল করা হয় হাসপাতালও। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ইউএসটিসি হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। এরপর রাতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটায় চিকিৎসক জানিয়ে দেন, অপর্ণা ঘোষের মা ঝর্ণা ঘোষ মারা গেছেন।

অপর্ণা জানান, তাঁর মায়ের বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। আজ সকালে চট্টগ্রাম থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অপর্ণা বলেন, ‘আমার মা ও বাবা খুব চমৎকার একটা জোড়া ছিল। বাবাটা আমার খুবই নরম মনের মানুষ। হাসপাতালে মায়ের কষ্ট দেখে বাবাও খুব কষ্ট পাচ্ছিল। সান্ত্বনা এটুকু ছিল, চোখের সামনে তো আছে। কিন্তু মা তো আমার চলেই গেল। আমার বাবাটা একা হয়ে গেল। খুব একা হয়ে গেল। আমি কীভাবে বাবাকে সান্ত্বনা দেব।’
আজ চট্টগ্রাম থেকে অপর্ণা বলেন, ‘চিকিৎসায় মায়ের খুবই কষ্ট হচ্ছিল। তাঁর কষ্ট সহ্য করা আমাদের পক্ষেও অসম্ভব ছিল। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না, শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা ছাড়া। এর মধ্যে মায়ের মন ছুটে যায়। বলেন, তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে। বারবার বলছিল, আমাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাও তোমরা। এরপর আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে মাকে গতকাল চট্টগ্রামে নিয়ে আসি। এখানকার হাসপাতালে ভর্তি করাই। দিবাগত রাত আড়াইটায় মায়ের শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। তারপর লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সকালে মা আর নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না। চিকিৎসক জানালেন, সাড়ে আটটায় আমাদের মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’

অপর্ণা ঘোষ জানান, তাঁর মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার বলুয়ারদীঘি মহাশ্মশানে।
অভিনেত্রী অপর্ণার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। স্কুলের পাট চুকে গেলেই নাটকের দল নান্দিকারের সঙ্গে যুক্ত হন। বাবা অলোক ঘোষের হাতে গড়া দলের মহড়া প্রায়ই নিজেদের বাসায় হতো। মগ্ন হয়ে সেসব মহড়া দেখতেন। বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটের মঞ্চেও যাওয়া-আসা করতেন।

২০০৩ সালে অপর্ণা প্রথম মঞ্চ অভিনয়ে নাম লেখান। এস এম সোলায়মানের ‘কোর্ট মার্শাল’ ছিল অপর্ণা অভিনীত প্রথম নাটক। এ নাটকে অভিনয় করতে দলের সবার সঙ্গে যেতে হয় চাঁদপুর। সেখানকার শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে প্রথম নাটকের অভিনয় করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই প্রথম সেমিস্টারে নাম লিখিয়েছিলেন ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায়। ২০০৬ সালে প্রতিযোগিতা শেষে সেরা দশে জায়গা হয় তাঁর। এরপর ঢাকা-চট্টগ্রাম যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। বিজ্ঞাপনচিত্র, টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। কাজ করেছেন চলচ্চিত্রেও। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘মেঘমল্লার’, ‘সুতপার ঠিকানা’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘গণ্ডি’।
২০১৩ সালে ‘মৃত্তিকা মায়া’ এবং ২০২০ সালে ‘গণ্ডি’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন অপর্ণা ঘোষ।