গান আর কবিতায় হয়ে গেল চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে ‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’ অনুষ্ঠান। দেশের অর্ধশতাধিক চিত্রশিল্পীকে নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে চ্যানেল আই চেতনা চত্বর প্রাঙ্গণে শিল্পী হাশেম খানের তুলির আঁচড়ে ক্যানভাস রাঙিয়ে উদ্বোধন করা হয় ‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’। এরপর মঞ্চে পরিবেশন করা হয় ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানটি। গান পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও তাঁর সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার শিক্ষার্থীরা।
‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’–এর এবারের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। উপস্থিত ছিলেন রফিকুন নবী এবং নাট্যজন ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
শিল্পী রফিকুন নবী ক্যানভাসে এঁকেছেন একটি কাক ও সূর্যের ছবি। ছবির ব্যাখ্যা দিয়ে শিল্পী বলেন, ‘কাক কিন্তু দুই রকম আছে, ভালো কাক ও চতুর কাক। আমি কাককে আমাদের সামাজিক যত রকমের অবক্ষয় থেকে শুরু করে সবকিছুর প্রতীক হিসেবে কাক ব্যবহার করি। সূর্যটিও আরেকটি প্রতীক।’ শিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘ছবি আঁকার মাধ্যমে একটি শিশু ছোটবেলা থেকে সুনাগরিক হয়ে ওঠে। একটি পরিকল্পিত জীবন ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে অর্জন করতে পারে। সুন্দর জিনিস সৃষ্টি করতে পারে। একটি ছবি আঁকা শেষ করে মনে করে, “আমি পেরেছি।” এই পেরে ওঠাই তাদের সাহস ও শক্তি জোগায়।’
৭ মার্চ দিনটি স্মরণ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমি সেই সব সৌভাগ্যবান মানুষদের একজন যে সেই ঐতিহাসিক সময়ে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। সেদিন আমাদের যে অভিজ্ঞতা, সেটি কখনই ভোলার নয়। লাখো মানুষের সমাবেশ, চতুর্দিক থেকে মিছিল আসছে। গন্তব্য একটাই—রেসকোর্স ময়দান। বঙ্গবন্ধু এলেন, তাঁর সেই দৃপ্ত উচ্চারণ, সেই উচ্চারণের মধ্য দিয়ে যেই বার্তা আমরা পেলাম, তা মুক্তিযুদ্ধের বার্তা। সেদিনই সেই বার্তাকে হৃদয়ে ধারণ করে জাতি এক মহাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।’
ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘নতুন একটি শিশুর জন্ম হলে আমরা যেমন আনন্দ পাই, সে রকমই এখানে আজ অনেক নতুন ছবির জন্ম হচ্ছে।’
ঢাকার তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে ‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’ অনুষ্ঠানের এবারের আয়োজনের উপস্থাপনা করেছেন আফজাল হোসেন। এ নিয়ে টানা ১৬ বছর এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন তিনি। এত বছর কীভাবে পার করেছেন, টেরই পাননি তিনি। অভিনয়ের বাইরে এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কাজ খুব উপভোগ করেন আফজাল হোসেন। কারণ, বিভিন্ন প্রজন্মের চিত্রশিল্পীর সঙ্গে ভাবনার আদান–প্রদান চলে এই আয়োজনে, যা অন্য সময় সেভাবে সম্ভব হয় না।
‘রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’ আয়োজন সম্পর্কে আফজাল হোসেন বললেন, ‘আমার কাছে এটাকে খুবই অসাধারণ আয়োজন মনে হয়। কেউ আসলে এ রকম ভাবতেও পারে না। শিল্পীরা এক জায়গায় হন একটা দিনে, দিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ছবি আঁকেন। এটা অনেক বড় ব্যাপার। যদিও সেভাবে বিষয়টা দেখা হয় না। কিন্তু ব্যাপারটা অনেক বড়। দেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পী থেকে শুরু করে বর্তমান ও যাঁরা আগামীর শিল্পী হবেন, তাঁরা সবাই একত্র হয়ে এদিন ছবি আঁকেন। ছবি আঁকার ধরনও খুব আলাদা। যা ভালো না লেগে উপায় নেই।’ রংতুলিতে মুক্তিযুদ্ধ অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন আমীরুল ইসলাম।