অভিনেতা অপূর্বর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রযোজকের, যা বললেন অপূর্ব

অপূর্ব ও প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল। ছবি: ফেসবুক
অপূর্ব ও প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল। ছবি: ফেসবুক

দুই বছর আগে ২৪টি নাটকের জন্য অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব চুক্তিবদ্ধ হন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই স্টুডিওস লিমিটেডের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিল। চুক্তিমতো প্রতি মাসে তিন দিন সময় দিয়ে নাটকগুলোর শুটিং শেষ করে দেওয়ার কথা অপূর্বর। গত বছর অক্টোবরে নাটকগুলোর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এমন শর্তে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি ২৫ লাখ টাকা অগ্রিম দেয় অপূর্বকে। ৯টি নাটকের শুটিংও হয়। পরে শুটিং না করায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি অপূর্বর বিরুদ্ধে শিডিউল ফাঁসানো ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে অপূর্বকে আইনি নোটিশ দেয়। এ ঘটনায় বিব্রত অভিনেতা অপূর্ব। তিনি জানান, অভিযোগ সত্য নয়। ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তাঁর জন্য মানহানিকর।

প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল জানান, অপূর্বর সঙ্গে তাঁদের পথচলা দেড় যুগের বেশি সময় ধরে। সেই সম্পর্কের জেরে ২০২২ সালে তাঁরা একসঙ্গে ২৪টি নাটকের শুটিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। ২৪টি নাটকে শুটিংয়ের বিপরীতে ৯টির শুটিং করে অগ্রিম ২৫ লাখ ও পরে ৯ লাখসহ অপূর্ব ৩৩ লাখ টাকা নেন। পরে নাটকের শুটিংয়ের জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে ১০ মাস ঘুরতে হয়েছে।

অপূর্ব। ছবি: ফেসবুক

এ প্রযোজক বলেন, ‘আমাদের ৯–১০ মাস ঘোরানোর পরও সে শিডিউল দেয় না। এ নিয়ে আমি অপূর্বকে কিছুই বলিনি। আমরা বন্ধু। বারবার ভেবেছি, সে ব্যস্ত থাকতে পারে। আমি আমার টিমকে চেষ্টা করতে বলেছি যোগাযোগ রাখতে। এদিকে আমারও নাটকগুলো হস্তান্তর করার কথা ছিল; কিন্তু পারছিলাম না। গত বছর অক্টোবরের মধ্যেই আমাদের কাজ শেষ হওয়ার কথা। ৯টি নাটকের কাজ করে দিয়ে আর কোনো নাটকের কাজ না হওয়ায় অপূর্বর সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে বসি। আমরা চাইছিলাম, সমাধান করা উচিত। পরে আমাদের কথা হয়, সাত দিনে সে প্রতিদিন তার অংশের একটা করে নাটকের শুটিং করে দেবে। আর তিনটা নাটকের দুই দিন করে ছয় দিন শুটিং করবে। ১৩ দিনে আমাদের কাজ শেষ।’
এরপর ফেব্রুয়ারির ১৯ থেকে ২৩ তারিখের মধ্যে শিডিউল দেন অপূর্ব। প্রযোজক জানান, এ পাঁচ দিনে পাঁচটি নাটকের অপূর্বর অংশের শুটিং শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেভাবেই তাঁরা শুটিংয়ের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু শুটিং শুরু হওয়ার এক দিন আগে থেকে অপূর্ব ফোন ধরছেন না। পরে তাঁদের কাজগুলো ফেঁসে যায়। শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘চুক্তির বাইরে সে যেভাবে বলেছে সেভাবেই আমরা রাজি হয়েছি। পরে সে আর ফোন ধরে না। এখন গল্প, চরিত্র বা কোনো কিছু তার পছন্দ না হলে সেটা সে আমাকে বলতে পারত। আমরা বসতে পারতাম। ১০ মার্চ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি। এর মধ্যেও অপূর্বর সাড়া না পেয়ে ১৩ মার্চ আমরা লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। কারণ, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলাম।’

প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল। ছবি: ফেসবুক

জানা যায়, আইনি নোটিশের সেই কপি টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব) ও অভিনয়শিল্পী সংঘের কাছে পাঠিয়েছেন প্রযোজক। তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, অন্যদের সঙ্গে আমাদের কথার বরখেলাপ করতে হয়েছে। সেখানেও আমাদের চুক্তি ছিল। তারপরেও আমরা কোনো মামলা কিন্তু করিনি। আমি আইনগতভাবে দুই সংগঠনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। অপূর্বকেও নোটিশের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন সংগঠন থেকে শিগগিরই ঘটনার মীমাংসা করতে বসবেন বলে জানিয়েছেন।’
দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ার জিয়াউল ফারুক অপূর্বর। এ সময়ে কখনোই তাঁকে নিয়ে এমন কোনো ঘটনা শোনা যায়নি বলে জানা গেল অভিনয়শিল্পী সংঘ সূত্রে। অপূর্বর কথা, তিনি সততার জায়গা থেকে কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ এমন ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে আহত। তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে এমন ঘটনার মুখোমুখি হইনি। আমি সহযোগিতার সঙ্গে কাজ করে গিয়েছি। আপনারা দেখেন, আজ কেন এমন ঘটনার মুখোমুখি আমাকে হতে হলো। যেটা অপ্রত্যাশিত। আমার সম্মানের ওপর প্রশ্ন। এটা অপ্রত্যাশিত। এটা নিয়ে আমার অনেক কথা আছে।’

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টি নিয়ে এ মুহূর্তে এই অভিনেতা বিস্তারিত কিছু বলতে চান না। কারণ, এটা আইনি প্রক্রিয়ায় চলে গেছে। সেভাবেই সমাধান করতে চান। অপূর্ব বলেন, ‘আমার সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ বিষয়টি দেখছে এবং টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকেও বিষয়টি অবগত করেছি। উনারা যা বলার বলবেন। একই সঙ্গে আমার আইনজীবী কথা বলবেন। যেহেতু আইনি প্রক্রিয়ায় আমি এগোচ্ছি, তাই এটা নিয়ে বিস্তারিত এ মুহূর্তে বলতে চাই না। এসব নিয়ে আমি কথা বললে আইনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আমার আইনজীবী জানিয়েছেন। তাই যা বলার তাঁরাই বলবেন।’
গতকাল থেকে ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রশ্ন উঠছে। পরে লিখিত বিবৃতিতে অপূর্ব জানান, ‘সময়ই সবকিছু পরিষ্কার করে দেবে। ইন্ডাস্ট্রির সবাই আমাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনে–জানে। আমি কখনো কোনো অন্যায়ের সঙ্গে নেই। যেটা সঠিক ওটাই করব আমি, এতটুকু বিশ্বাস রাখুন। অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। আমাকে নিয়ে যে অভিযোগ এসেছে তা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যমূলক ও আমার জন্য সম্মানহানির। আমি দীর্ঘদিনের সুপরিচিত একজন অভিনয়শিল্পী। অর্থ আত্মসাতের মতো নোংরা মিথ্যা অভিযোগে আমার মতো একজন শিল্পীকে জড়ানো হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’

আহসান হাবীব নাসিম। ছবি: ফেসবুক

অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম জানান, অপূর্বর ক্যারিয়ারে শুরু থেকেই প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব। হঠাৎ অপূর্বর বিরুদ্ধে এমন অর্থ আত্মসাতের নোটিশে তাঁরা হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। হয়তো দু–এক দিনের মধ্যে আমরা ঘটনাটি নিয়ে একসঙ্গে বসব। আসলে কী ঘটেছে তখনই জানা যাবে। এটা নিয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। অপূর্বকে নিয়ে এমন ঘটনা আমরা আগে শুনিনি। এখন বসলেই বাকি সব জানা যাবে।’

টেলিপাবের সভাপতি মনোয়ার পাঠান জানান, প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের লিগ্যাল নোটিশের অনুলিপি তাঁরা পেয়েছেন। পরে অপূর্বও তাঁদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা নিয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। দুজনের পক্ষ থেকেই আমরা চিঠি পেয়েছি। তাদের অভিযোগ দেখেছি। এটি নিয়ে আমরা আগামীকাল ইফতারের পরে বসব। তার আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’