অভিনেত্রী রিশতা লাবণী সীমানা
অভিনেত্রী রিশতা লাবণী সীমানা

আগে জীবন রক্ষা, পরে কাজ, কথা রাখেননি সীমানা…

জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে/ বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে..! বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গান মৃত্যুর পর প্রিয়জনকে ঘিরে তৈরি করে ভয়ানক শূন্যতার এক অনুভূতি। অভিনেত্রী সীমানা আজ জীবন–মরণের সীমানা ছাড়িয়ে অজানা ভুবনের বাসিন্দা। দুটি শিশুসন্তানকে পৃথিবীর বুকে রেখে চলে গেছেন সবকিছু ছেড়ে। সন্তানদের জন্যই অভিনয় থেকে দীর্ঘ বিরতি নিয়েছিলেন ‘দারুচিনি দ্বীপ’–এর সীমানা। হয়তো কোন এক দারুচিনি দ্বীপে বসে সন্তানদের ওপর নজর রাখছেন মা।
একসময় টেলিভিশনের ব্যস্ত অভিনেত্রী ছিলেন সীমানা। একটা সময় সীমানাকে আর পর্দায় পাওয়া যায়নি। মাতৃত্বকালীন বিরতি এবং দুই সন্তানকে দেখাশোনায় কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। শোবিজ অঙ্গন থেকে নেওয়া টানা পাঁচ–ছয় বছরের বিরতি ভেঙে সম্প্রতি আবার কাজে ফেরেন অভিনেত্রী। ফেরার পর সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দেন তিনি। বেসরকারি চ্যানেল দেশ টিভিকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে সীমানা তুলে ধরেন ক্যারিয়ারের নানা গল্প। সেই পুরোনো সাক্ষাৎকারে সীমানার কথাগুলো তুলে ধরা হলো।

অভিনয়ে দীর্ঘ বিরতি নিয়ে সীমানা বলেন, ‘২০১৬ পর্যন্ত আমি কাজে নিয়মিত ছিলাম। তবে সেই বছরই আমি বিরতি নিই। পরপর দুটি সন্তান হওয়ায় একটা লম্বা সময় বিরতি হয়ে যায়। এখন আবার অভিনয়ে ফিরেছি। ফিরেই একটা সিনেমার জন্য ডাক পাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অসুস্থ হয়ে পড়ি। যে কারণে শুটিং আর চালিয়ে যেতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে কাজটা ছাড়তে হয়েছিল। আগে তো জীবন রক্ষা, পরে কাজ।’

অভিনেত্রী রিশতা লাবণী সীমানা

বর্তমান সময়ের (২০২৩ সালের) কাজ প্রসঙ্গে অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘এখন কাজের মাধ্যমটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম–নির্ভর হয়ে গেছে। এখানে কাজের ধরন থেকে সিস্টেম—সবকিছুই আলাদা। সে কারণে বিষয়টা বুঝতে কিছুটা সময় লাগছে। এখনো সময় নিচ্ছি। একদিক থেকে তো খুবই ভালো হয়েছে, আমরা অনেক ধরনের কাজের সুবিধা পাচ্ছি, এটা নতুন অভিজ্ঞতা। এখানে নতুন করে অনেক কিছু শেখার আছে। দুই মাস হলো কাজ শুরু করেছি। এখনো অনেকে জানেই না। সময়ের সাথে সাথে সবাই জানবে।’

কাজ থেকে টানা বিরতির পর সাধারণত একটা হতাশা কাজ করে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ সময়সাময়িক অনেকে বলেন, কাজ পাচ্ছে না, নক দিচ্ছে, তা–ও হচ্ছে না। কিন্তু আমার জায়গা থেকে বলতে পারি, এত সহজে ধৈর্যহারা হলে তো চলবে না। যেহেতু একটা লম্বা সময় আমরাও কাজ করে এসেছি, কিছু অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে। সেই জায়গা থেকে বলব, না পারার তো কিছু নয়। আমাকে লেগে থাকতে হবে। এরপরই সাফল্য আসবে। আমি যদি যুক্ত না থেকে হতাশায় পড়ে চলে যাই, তাহলে তো আমার ওই জায়গাটুকুও থাকল না। সে কারণে আমার যে জায়গাটুকু আছে, সেইটুকু ধরে রেখে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতে হবে। তাহলেই আমার বিশ্বাস, একটা সময়ের পরে আমি জিতব।’

প্রয়াত অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যু নিয়ে স্মৃতিচারণা করে সীমানা বলেন, ‘শোবিজ অঙ্গনটা আমাদের পরিবারের মতো। পরিবার নিয়ে কখনোই অভিমান থাকা উচিত নয়। অভিমান নিয়ে এমন কোনো জায়গায় যাওয়া উচিত নয়, যেখান থেকে অভিমান ভাঙানোর সুযোগ থাকে না আর। আর শোবিজ অঙ্গনের সিন্ডিকেট থাকবেই। সব জায়গাতেই আছে। সিন্ডিকেট সবাই মেইনটেইন করে। এটার বাইরে কেউ নেই। এর ভেতর থেকেও সবাইকে সবার কাজ মিলেমিশে করতে হবে।’
সামনের কাজ প্রসঙ্গেও বলেন অভিনেত্রী। জানান, ‘একটা সিনেমায় সাইন করেছি। তবে এখনই বেশি কিছু বলব না। ওটা পরিচালক-প্রোডিউসারের দায়িত্ব। কাজ শুরু হলে সবাই জানবে। আর একটা ওয়েব সিরিজে কথা হচ্ছে। সামনে ওগুলো চলে আসবে। আশা করি, দর্শকদের ভালো কিছু কাজ উপহার দিতে পারব।’