নাটকের বাজারে ‘ইউটিউব ট্রেন্ডিং’ এখন আলোচিত শব্দ। বেশির ভাগ তারকা কলাকুশলীর কাছে কোনো কাজের শুরুতেই আলোচনায় আসে ভিউ। যে নাটক ভিউয়ে এগিয়ে থাকবে, সেই নাটক জায়গা পায় ট্রেন্ডিংয়ে। যে কারণে অনেক সময়ই শোনা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব নাটকের ভিউ বাড়াতে নাম ও গল্পে গুরুত্ব কম পায়। মুখ্য হয়ে ওঠে হাস্যকর কাণ্ড। সম্প্রতি ট্রেন্ডিং নাটকগুলোতে কী প্রতিফলন দেখা গেল, দেখে নেওয়া যাক।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে থাকা পাঁচ শীর্ষ নাটকের তিনটিতেই নামের আগে–পরে ‘বেক্কল’ শব্দ রয়েছে। এ নিয়ে সীমা নামের এক ভক্ত মন্তব্য করেছেন, ‘ইউটিউবে চলছে ব্যাক্কলের নাটকের মেলা। সব নাটকের মাঝে দেখছি ব্যাক্কল আর ব্যাক্কল।’
নাটকের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে নিলয় আলমগীর ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির নাটক। মাত্র আট দিনে নাটকের ভিউ ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন। সিডি চয়েস ড্রামা থেকে প্রকাশ পাওয়া এই নাটকের নাম ‘বেক্কল না সোজা’। এটি পরিচালনা করেছেন আদিবাসী মিজান। নাটকের গল্পে দেখা যায়, দুই ভাই খুবই বোকা। তাদের বুদ্ধি কম। গ্রামে নানা ঘটনা ঘটিয়ে তারা আসে শহরে ঘুরতে। এখানেও তারা আদিকালের সেই গল্পের মতো, গাছ সামনে পড়লে সেই গাছ কেটে তবেই সামনে এগিয়ে চলে এমন। যাহোক গল্পের প্রয়োজনে দুই ভাই নামী এক হোটেলে ওঠে। সবার কাছেই তাদের কর্মকাণ্ডে শুনতে হয় বেক্কল শব্দ। নিলয়ের অন্য নাটকের চেয়ে এই নাটকের মান নিয়ে ভক্তদের নেতিবাচক মন্তব্য রয়েছে। তারা নিলয়ের কাছে আরও ভালো নাটক চান।
ইউটিউব শর্টের বাইরে ট্রেন্ডিংয়ে নাটকের মধ্যে ৩ নম্বরে রয়েছে ‘বেক্কল বউ-৩’ নামের আরেক নাটক। গোল্লাছুট ড্রামা ইউটিউব চ্যানেলে নাটকটি প্রচার হয়েছে। বুদ্ধি কম এক স্ত্রীর গল্প নিয়েই এটি এগিয়েছে। গল্পের শুরুতেই দেখা যায়, এই বউ চুরির ভয়ে স্বামীর জুতা তালা দিয়ে রাখে, কখনো ভাত পুড়িয়ে ফেলে, মাছ রান্না নিয়ে দর্শক হাসানোর নামে অপ্রাসঙ্গিক সব কর্মকাণ্ডে এগিয়ে চলে গল্প ‘বেক্কল বউ’। ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন পরিচালক। সেটা নিয়েও হাসতে পারেন দর্শক। এতে অভিনয় করেছেন শামীমা নাজনীন, তন্ময় সোহেল, মানসী প্রকৃতি। এটিও পরিচালনা করেছেন আদিবাসী মিজান।
ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে এগিয়ে রয়েছে আরেক নাটক ‘বেক্কলের মেলা’। গল্পটি নাটকের মধ্যে এটি ৫ নম্বর ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে। এটি সিডি চয়েস থেকে প্রকাশ পেয়েছে। নাটকের ভিউ ৮৬ লাখ। নাটকে অভিনয় করেছেন ফারুক আহমেদ, শামীমা নাজনীন, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, মনিরা আক্তার মিঠু, যাহের আলভী, মানসী প্রকৃতিসহ অনেকে। এ নাটকেও শুধু দর্শকদের হাসানোর জন্য দেখা যায়, শাশুড়ি জামাই ও মেয়েকে সালাম করছে। বাড়ির নাম ছিল মায়ের আঁচল, সেই বাড়ির নাম হয়েছে বাপের লুঙ্গি। এ নিয়েও সম–অধিকারের কথা বলে দর্শকদের হাসানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক আদিবাসী মিজান। শামীমা নাজনীনের মুখে সংলাপ, ‘ছেলে-মেয়ের একটা সমান অধিকার আছে না, বাড়ির নাম ২০ বছর ধরে মায়ের আঁচল থাকতে পারে, তবে কেন আরও ২০ বছর বাড়ির নাম বাপের লুঙ্গি হতে পারে না।’
শীর্ষ ৫–এ ট্রেন্ডিংয়ে থাকা ২ নম্বর নাটকটিতে অভিনয় করেছেন নিলয় ও তাসনুভা তিশা। তাঁদের খুব বেশি একসঙ্গে দেখা যায়নি। নাটকটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ ছিল। কারণ, নিলয়ের সঙ্গে বেশির ভাগ নাটকে হিমিকে দেখা যায়। যাহোক, নাটকের নাম ‘বাড়ির পাশে শ্বশুরবাড়ি।’ ১০ দিন আগে প্রচার হওয়া নাটকের ভিউ ৮৭ লাখ। এটি নিলয়ের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল এনএএফে প্রচার হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে পাশের বাড়িতে বিয়ে করলে যা হয়, সেই ঘটনাগুলো কমেডি আকারে উঠে এসেছে। বাসর রাতে শাশুড়ি চলে আসা, বউ যা ঘটে বাড়িতে গিয়ে বলে দেয়, কোন বাড়িতে কী বাজার হয়, সেগুলো নিয়ে ঘটে নানা ঘটনা। জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ির ছাগল চুরি করাসহ পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মহিন খান।
মুশফিক ফারহানের সঙ্গে জুটি হিসেবে সাফা কবিরকে খুব বেশি নাটকে দেখা যায়নি। এবার দর্শক তাঁদের দেখেছেন ‘সুপার ওয়াইফ’ নামের একটি নাটকে। এখনো নাটকটি দেখছেন দর্শক। যেখানে গল্পের শুরুতেই মুশফিক বাসরঘরে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘরে প্রবেশ করেন সাফা কবির। মুশফিক হঠাৎ বাসরঘর থেকে বের হয়ে দেখেন তাঁর মা-বাবা-বোন ঘরের পাশেই দাঁড়িয়ে। কী কী ঘটেছে, সেগুলো তাঁরা জানতে চান। তবে মূল ঘটনা স্ত্রীকে ঘিরে; যে বিয়ের পর স্বামীর সংসারের খরচ কমাতে থাকে। সংসারে খরচ কমাতে নানা রকম ঘটনা ঘটায়। এর পেছনে রয়েছে তাঁর মায়ের ক্যানসার। সমাজের একটি মানবিক ঘটনা দিয়েই শেষ হয় ‘সুপার ওয়াইফ’–এর গল্প। যা একটি মেয়েকে সারা জীবনের জন্য আমূল বদলে দেয়।
‘শেকড়ের টানে’ নামে একটি নাটকের শুটিং করছেন অভিনেতা আবুল হায়াত। সামাজিক গল্পের নাটক। এটি প্রচার হবে এনটিভিতে। সেই শুটিং সেট থেকে সমসাময়িক ভিউ কেন্দ্রিক নাটক নিয়ে আবুল হায়াত বলেন, ‘ঋতু চক্রের মতো আমাদের নাটক ঘুরছে। যখন ভালো হচ্ছে তো কিছু নাটক ভালোই হচ্ছে। আবার মানহীন কাজের সংখ্যা বাড়ছে তো বাড়ছেই। আমার বিশ্বাস এই চক্রের মধ্যে থেকে আবার নাটক বের হবে। আমাদের বুঝতে হবে, শুধু ব্যবসার চিন্তা থেকে নাটক নির্মিত হলেই হবে না। দায়বদ্ধতার জায়গা তৈরি করতে হবে। তবে এটাও সত্য আমাদের অনেক শিল্পীকে বাধ্য হয়ে বিলো স্ট্যান্ডার্ডের কাজ করতে হচ্ছে। তবে এর মাঝেও দর্শক ভালো কাজ দেখতে চায়। সেই দর্শক খরা হয়তো খুব বেশি দিন থাকবে না। অলিক গল্পের মাতামাতি থাকবে না। কারণ সমাজের চেহারা দর্শক পর্দায় দেখতে চায়।’